রাজধানীর উত্তরা এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনের ওপর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণহানির ঘটনায় সারাদেশে শোক ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এমন ঘটনা তুলনামূলকভাবে খুবই বিরল হলেও, অতীতেও কিছু ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় স্কুল বা কলেজের ভবনে বিমান আছড়ে পড়ার নজির রয়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও এভিয়েশন সেফটি নেটওয়ার্কের তথ্য অনুযায়ী, নিচে তেমনই পাঁচটি দুর্ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরা হলো:
কাসালেক্কিও দি রেনো, ইতালি (১৯৯০)
১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ইতালির শহরতলি কাসালেক্কিও দি রেনোতে একটি সামরিক জেট স্থানীয় একটি স্কুল ভবনে আছড়ে পড়ে। লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, দুর্ঘটনায় অন্তত ১২ জন নিহত হন এবং আহত হন ৭০ জন। দুইতলা লাল ইটের ভবনটি ছিল শিক্ষার্থীদের দিয়ে পূর্ণ। হঠাৎ আগুন ও ধোঁয়ার কবলে পড়লে অনেক শিক্ষার্থী জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করেন। আহতদের অনেকেই দগ্ধ হন। দুর্ঘটনার সময় স্কুলটিতে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।
ঘটনার পর দেশটির বিমানবাহিনীর তৎকালীন জেনারেল কার্লো ব্রান্ডিনি জানান, বিমানটি রাডার পরীক্ষার অংশ হিসেবে উড্ডয়ন করছিল এবং ঘাঁটিতে ফেরার পথে সেটি বিধ্বস্ত হয়।
ইশিকাওয়া (উরুমা), জাপান (১৯৫৯)
১৯৫৯ সালের ৩০ জুন জাপানের ইশিকাওয়া শহরে (বর্তমানে উরুমা) একটি মার্কিন সামরিক বিমান বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে মিয়ামোরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওপর। দুর্ঘটনাটি ঘটে যখন দ্বীপটি যুক্তরাষ্ট্রের দখলে ছিল। এতে ১২ জন শিক্ষার্থী ও ৬ জন স্থানীয় বাসিন্দা নিহত হন এবং আহত হন দুই শতাধিক।
উরুমার ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়। স্থানীয় জনগণ এই দুর্ঘটনার পর দীর্ঘদিন বিক্ষোভ ও প্রতিকার দাবিতে আন্দোলন করেন।
আপেলডর্ন, নেদারল্যান্ডস (১৯৪৬)
১৯৪৬ সালের ৭ অক্টোবর নেদারল্যান্ডসের আপেলডর্ন শহরের একটি খ্রিস্টান উচ্চ বিদ্যালয়ে বিধ্বস্ত হয় একটি বিমান। এতে নিহত হন মোট ২৩ জন, যাদের মধ্যে ছিলেন পাইলট ম্যাক্স ক্রিস্টার্ন, তাঁর মা এবং স্কুলের ২১ জন শিক্ষার্থী।
এভিয়েশন সেফটি নেটওয়ার্কের তথ্যে জানা যায়, মাত্র ২৩ বছর বয়সী ম্যাক্স একক ফ্লাইটের অনুমতি পেলেও তিনি নিয়ম ভেঙে বিমান নিয়ে শহরে যান মাকে দেখতে। এ সময় তিনি স্টান্ট প্রদর্শন করছিলেন, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিদ্যালয়ের ভবনে সজোরে আছড়ে পড়েন।
ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র (১৯৫৭)
১৯৫৭ সালের ৩১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় দুইটি বিমান পরীক্ষামূলক ফ্লাইটে আকাশে ওঠে। উদ্দেশ্য ছিল যেকোনো আবহাওয়ায় বিমানের আগুন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা পরীক্ষা করা।
কিন্তু আকাশেই দুই বিমানের সংঘর্ষ হয়, যার একটি, ‘ডগলাস ডিসি-৭’, বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে একটি স্কুল মাঠে। এতে ঘটনাস্থলেই তিন শিক্ষার্থী ও পাঁচ বিমানকর্মী প্রাণ হারান। আহত হন আরও অনেক শিক্ষার্থী।
আহমেদাবাদ, ভারত (২০২৫)
২০২৫ সালের ১২ জুন ভারতের আহমেদাবাদে ভয়াবহ একটি দুর্ঘটনা ঘটে। এয়ার ইন্ডিয়ার একটি যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হয়ে আছড়ে পড়ে শহরের একটি মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে। এতে বিমানটির ২৪২ জন যাত্রী ও ক্রু সদস্যসহ স্থানীয় ১৯ জন বাসিন্দা নিহত হন।
শেষ মুহূর্তে সাহায্য চেয়ে বার্তা পাঠান পাইলট, এরপর সব নিস্তব্ধ
এ ঘটনায় অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে যান বিশ্বাস কুমার রমেশ নামে ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের এক নাগরিক।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা যেমন বিরল, তেমনি তা মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনে। প্রতিটি ঘটনায় কেবল শিক্ষার্থীরাই প্রাণ হারাননি, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েছে বহু পরিবার ও স্বপ্ন। বাংলাদেশে সদ্য ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনার পূর্ণ তদন্ত ও ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে আরও জোরদার পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।