কোলেস্টেরল সম্পর্কে যা কিছু জানা জরুরি

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২৬ ডিসেম্বর ২০২২, ১৩:০৫

কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারেন আপনি। হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় বাড়তি কোলেস্টেরল। কোলেস্টেরল কেন বাড়ে, কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং কত দিন পর পর চেকআপ করবেন সে সংক্রান্ত বিস্তারিত পরামর্শ দিচ্ছেন বাংলাদেশ মাল্টিকেয়ার হাসপাতাল ও ইবনেসিনা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টারের ক্লিনিক্যাল ডায়াটিশিয়ান ও নিউট্রিশন কনসালটেন্ট ফাতেমা সিদ্দিকী ছন্দা। 
কোলেস্টেরল কী?
কোলেস্টেরল হলো এক ধরনের মোমজাতীয় রক্তের চর্বি। একটি নির্দিষ্ট লেভেল পর্যন্ত কোলেস্টেরল আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। কারণ কোষ তৈরিতে ও ভিটামিন-হরমোন তৈরিতে শরীরের কোলেস্টেরল প্রয়োজন হয়। সমস্যা তৈরি হয় কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে গেলে।
আমাদের শরীর দুটো উৎস থেকে কোলেস্টেরল পায়। প্রথমত, আমাদের লিভার প্রয়োজনীয় সব কোলেস্টেরল তৈরি করে। এছাড়া আরেকটি উৎস হচ্ছে প্রাণীজ খাদ্য থেকে। গরুর মাংস, খাসির মাংস, হাঁসের মাংস, মুরগির মাংস ও দুধজাতীয় খাবার কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ। তবে এগুলোতে স্যাচুরেটেড ও ট্র্যান্স ফ্যাট অনেক বেশি। এগুলো আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
কোলেস্টেরল কয়েক ধরনের হয়ে থাকে যেমন ট্রাইগ্লিসারাইড, এলডিএল, এইচডিএল এবং টোটাল কোলেস্টেরল। এদের মধ্যে কেবল একটি কোলেস্টেরল শরীরের জন্য উপকারী, বাকি তিনটিই আমাদের ক্ষতি করে।
কোলেস্টেরল কেন বাড়ে?
অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের কারণে কোলেস্টেরল বেড়ে যেতে পারে।
অনেকেই আছেন বেশিরভাগ সময় কায়িক পরিশ্রম না করেই কাটান। তাদের যেকোনো সময় বেড়ে যেতে পারে কোলেস্টেরলের মাত্রা।
রান্নায় অতিরিক্ত তেল ব্যবহার করা বা অনেক বেশি ভাজাপোড়া খাবার খাওয়ার কারণে বাড়তে পারে।
উপরের কারণগুলো শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলগুলোকে বাড়িয়ে দেয় ও ভালো কোলেস্টেরল (এইচডিএল) কমিয়ে দেয়। এছাড়া ধূমপান, মদ্যপান, জর্দা সেবনের কারণেও কোলেস্টেরল বেড়ে যেতে পারে। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তির  ডিসলিপিডেমিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এমনকি কিছু ওষুধ সেবনের কারণেও কোলেস্টেরলের মাত্রার তারতম্য ঘটতে পারে।
ঝুঁকি কী?
খারাপ কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়া ও ভালো কোলেস্টেরল কমে যাওয়া একটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা। কোলেস্টেরল জমা হয় রক্তনালীতে। এটি জমা হতে হতে স্বাভাবিক চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। এর ফলে হার্ট অ্যাটাক ও মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের মতো অসুখের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
লিপিড প্রোফাইলে ঝামেলা হলে শুরু থেকেই সচেতন হওয়া জরুরি। শুরু থেকেই পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্য তালিকা ও জীবনযাপনে সচেতন হলে ডিসলিপিডেমিয়া থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা সম্ভব।
রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে কেমন হবে খাদ্য তালিকা?
শারীরিক অবস্থাসহ আরও বেশ কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে ডিসলিপিডেমিয়া রোগীর খাদ্যতালিকা কেমন হবে সেটি। তবে কিছু নিয়ম সবার জন্যই বলা যেতে পারে। যেমন-
১। খাদ্য তালিকা থেকে সরল শর্করা বাদ দিতে হবে। অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট খাওয়া থেকেও বিরত থাকতে হবে।
২। মৌসুমি ফল শাকসবজি থেকে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে। প্রতিদিন ভিটামিন এ যুক্ত কাঁচা শাকসবজি সালাদ হিসেবে খেতে হবে।
৩। প্রতিদিন নিয়ম করে কিছুক্ষণ হাঁটতে হবে বা ব্যায়াম করতে হবে।
৪। ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস বাদ দিতে হবে।
৫। রান্নায় তেলের ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। সানফ্লাওয়ার অয়েল, রাইসব্রান অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। কয়েকটি তেল একসঙ্গে মিশিয়েও ব্যবহার করা যায়।
৬। গরুর মাংস, খাসির মাংস বা হাঁসের মাংস খেতে চাইলে অবশ্যই চর্বি ফেলে দিয়ে রান্না করতে হবে। তবে কোলেস্টেরল না কমা পর্যন্ত এগুলো না খাওয়াটাই ভালো।
৭। প্রথম এক মাস দুধ না খেয়ে সরছাড়া টক দই রাখতে হবে খাদ্য তালিকায়।
৮। মিক্সড বাদাম, কাঁচা ও দেশি রসুন, তেঁতুল খেতে পারেন। এগুলো খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। তবে পরিমাণ জানতে অবশ্যই পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেবেন।
কত দিন পর পর চেকআপ করবেন?
সাধারণত ৩ মাস থেকে ৬ মাস পর পর লিপিড প্রোফাইল চেক করা উচিত। বডি ফাস্টিং লিপিড প্রোফাইল আট ঘণ্টা খালি পেটে থেকে চেকআপ করতে হয়।