সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রথম জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল (খাওয়ার বড়ি) উৎপাদন শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) গোপালগঞ্জ কারখানায় গত এপ্রিল থেকে পিল তৈরি হচ্ছে। বর্তমান জনবলে দিনে গড়ে দেড় কোটি পিল উৎপাদন সম্ভব বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সারাদেশে বিনামূল্যে জন্মনিরোধ পিল সরবরাহ করে সরকার। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কিনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ পিল সরবরাহ করে। এ জন্য বছরে প্রায় ৭০০ কোটি পিল কিনতে সরকারের খরচ হয় ৩৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উৎপাদনের ফলে সরকারের অনেক টাকা সাশ্রয় হবে।
ইডিসিএলের গোপালগঞ্জ কারখানার মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন সমকালকে বলেন, গোপালগঞ্জ প্লান্ট প্রস্তুত করাই হয়েছে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল তৈরির জন্য। উন্নত প্রযুক্তিতে তৈরি পিলটি ইতোমধ্যে সব ধরনের গুণগত মানে উর্ত্তীণ হয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে নমুনা দেওয়া হয়েছে। ক্রয়াদেশ পেলে সরবরাহ করা হবে। ‘সুখী’ নামের পিলটি দেশের জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর চাহিদা পূরণে বড় ভূমিকা রাখবে।
তিনি জানান, বর্তমান জনবল দিয়ে দুই ধাপে দিনে এক কোটি ৬৬ লাখ পিল উৎপাদন সম্ভব, যা বছর শেষে দাঁড়াবে ৪০৯ কোটি ১৪ লাখ। তিন ধাপে কাজ করা গেলে সরকারি চাহিদা সম্পূর্ণভাবে পূরণ করা সম্ভব হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১১ সালে একনেকে ‘গোপালগঞ্জ এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের তৃতীয় শাখা কারখানা স্থাপন’ প্রকল্প অনুমোদন হয়। বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালে। গত এপ্রিলে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করে প্রতিষ্ঠানটি। এখানে শিরায় দেওয়া স্যালাইন আগে থেকেই তৈরি হচ্ছে।
জন্মনিয়ন্ত্রণে দেশে খাবার বড়ি, কনডম, ইমপ্লান্ট, বন্ধ্যাকরণ, দীর্ঘমেয়াদি আইইউডি ও ইনজেকটেবল সেবা বিদ্যমান। তবে খাওয়ার পিল ব্যবহারের হার সবচেয়ে বেশি, প্রায় ২৫ শতাংশ।
পরিবার পরিকল্পনা সূত্র জানায়, খাওয়ার পিল কিনতে দেড় বছর আগে ২১৬ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়। নানা জটিলতায় এখনও তা কেনা সম্ভব হয়নি। ফলে সরবরাহ কমে যাওয়ায় গ্রামীণ ও প্রান্তিক দম্পতিরা উপকরণ পাচ্ছেন না। বর্তমানে ১৩৪ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খাওয়ার পিল নেই। এতে অপ্রত্যাশিত গর্ভধারণ, অল্প বয়সে মাতৃত্ব ও ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভপাতের ঘটনা বাড়ছে। সংকট কাটাতে নতুন করে দরপত্র আহ্বান না করে সরকার ইডিসিএলের মাধ্যমে এ পিল কিনতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আশরাফী আহমদ বলেন, মুখে খাওয়ার পিল গুণগত মান বজায় রেখে উৎপাদন করতে হয়। এ ওষুধ প্রস্তুতের জন্য ঔষধ প্রশাসনসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন প্রয়োজন। সেগুলো পর্যালোচনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে ইডিসিএলের পিল কেনা সম্ভব হবে।
জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর সংকট বিষয়ে তিনি বলেন, রাজস্ব খাত থেকে কিছু উপকরণ কেনা হয়েছে। এতে আগামী তিন মাস পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে।
ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামাদ মৃধা বলেন, পরিবার পরিকল্পনা যে পিল সারাদেশে সরবরাহ করছে, সেটির এক সাইকেলের (২৮ পিল) বাজারমূল্য ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। একই মানের পিল আমরা ৪২ টাকায় দিতে পারব।
তিনি জানান, বর্তমানে কারখানায় প্রশিক্ষিত জনবল ৮০। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ইউনিটটি পরিদর্শন করে ১৪ এপ্রিল উৎপাদনের নিবন্ধন দেয়। পরিবার পরিকল্পনায় কাগজ জমা দেওয়া হয়েছে। ক্রয়াদেশের অপেক্ষায় রয়েছে ইডিসিএল।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানকে আমরা সর্বোচ্চ ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। সরকার নিজেই প্রতিবছর হাজার কোটি টাকার জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বিভিন্ন উৎস থেকে কিনে থাকে। এখন সরকারি হাসপাতালের জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলের চাহিদা সরকারিভাবে পূরণ করার চেষ্টা চলছে। পিল তৈরির পাশাপাশি বাকি উপকরণও সরকারিভাবে তৈরির প্রচেষ্টা হচ্ছে বলে জানান তিনি।