আমেরিকায় দ্রুত বাড়ছে চাগাস রোগের সংক্রমণ

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪:২২

সংক্রমিত ট্রায়াটোমিন পোকার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া চাগাস রোগ দেশে স্থায়ীভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)।
সিবিএস নিউজ জানায়, গত মাসে ইমার্জিং ইনফেকশাস ডিজিজেস জার্নালের সেপ্টেম্বর সংখ্যায় সিডিসির এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যেখানে বলা হয়েছে, এই রোগ ইতোমধ্যে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার ২১টি দেশে স্থায়ী ভাবে বিস্তার লাভ করেছে।
এতদিন অ্যামেরিকাকে চাগাস রোগকে ‘অ-এনডেমিক’ অর্থাৎ স্থায়ীভাবে ছড়ায় না এমন দেশ হিসেবে ধরা হতো।তবে নতুন প্রমাণ বলছে দেশে চাগাস রোগের পরজীবী ছড়িয়ে পড়ছে।
চাগাস রোগ একটি সম্ভাব্য প্রাণঘাতী অসুখ যা সংক্রমিত "কিসিং বাগ"-এর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়ায়।
অ্যামেরিকার ৮টি স্টেটের বাসিন্দারা স্থানীয়ভাবে চাগাস রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এসব স্টেটের মধ্যে টেক্সাসে আক্রান্ত হয়েছেন সবচেয়ে বেশি।
প্রতিবেদন বলছে,দেশে চাগাস রোগ স্থায়ীভাবে না ছড়ানোর কারণে মানুষ সচেতন নয় এবং সংক্রমণের তথ্যও কম ধরা পড়ছে। ইতোমধ্যে এই পোকার উপস্থিতি ৩২টি স্টেটে পাওয়া গেছে।
টেক্সাসের পাশাপাশি ক্যালিফোর্নিয়া, অ্যারিজোনা, টেনেসি, লুইজিয়ানা, মিসৌরি, মিসিসিপি এবং আর্কানসাসেও মানব সংক্রমণের ঘটনা ধরা পড়েছে।
চাগাস রোগের কারণ-
ট্রায়াটোমিন বা "কিসিং বাগ"-এ পাওয়া ট্রাইপানোসোমা ক্রুজি পরজীবীর কারণে চাগাস রোগ হয়ে থাকে। অন্যান্য প্রাণী এবং মানুষের মধ্যে এই রোগ ছড়াতে পারে।
ইউসিএলএ হেলথের মতে, প্রায়শই মানুষের মুখে কামড়ায় বলে পোকাটিকে কিসিং বাগ বলে ডাকা হয়।

সিডিসির মতে , বিশ্বব্যাপী প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষ এবং অ্যামেরিকায় ২৮০,০০০ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। প্রায়শই রোগী জানতেই পারেন না যে তিনি চাগাস রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
সিডিসি বলছে, চাগাস রোগের পরজীবী মানুষের অজান্তেই পোকার কামড় বা বিষ্ঠার সংস্পর্শে শরীরে প্রবেশ করতে পারে অর্থাৎ, পোকা যেকোনো মানুষ বা প্রাণীকে কামড়ালে তাদের বিষ্ঠার মধ্যে থাকা পরজীবী যদি ত্বকের কাটা অংশ, চোখ বা মুখের কাছ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে, তাহলে সংক্রমণ ঘটতে পারে।
চাগাস রোগ সর্দি-কাশির মতো একজন থেকে অন্যজন ছড়ায় না এবং সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে সাধারণ যোগাযোগে ছড়ায় না।
সিডিসি বলছে, যদি চিকিৎসা না করা হয়, তবে এই রোগ প্রাণঘাতী হতে পারে।
প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে চাগাস রোগের লক্ষণ-
চাগাস রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে, সংক্রমণের পর সামান্য সময়ের মধ্যে চোখের পাপড়িতে ফোলা দেখা দিতে পারে, যা রোমানা সাইন নামে পরিচিত। পরজীবী চোখে প্রবেশ করলে সধারণত এটি হয়ে থাকে।
এছাড়া প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে আরও থাকতে পারে:
জ্বর, ক্লান্তি, শরীর ব্যথা, মাথা ব্যথা, চর্মরোগ বা দাগ, ক্ষুধা কমে যাওয়া, ডায়রিয়া ও বমি। কিছু ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো বছর বা দীর্ঘসময় ধরে থাকতে পারে। এতে হৃদপিণ্ড ও পাচনতন্ত্রের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
প্রতিকার:
সিডিসি বলছে, এই মুহূর্তে চাগাস রোগ প্রতিরোধের কোনও টিকা বা ওষুধ নেই, তাই নিজেকে রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। কিসিং বাগ প্রতিরোধের জন্য কিছু পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। যেমন:
ভ্রমণের সময় নিরাপদ স্থানে থাকা, কীটনাশক ও পোকামাকড়ের স্প্রে ব্যবহার করা, ত্বক ঢেকে রাখে এমন পোশাক পরা, কাঁচা ফল ও শাকসবজি খাওয়ার আগে সতর্ক থাকা, কারণ দূষিত খাবারের মাধ্যমে মুখে সংক্রমণ হতে পারে
বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, ঝুঁকি কমাতে বাড়ির জানালা বন্ধ রাখতে পারেন এবং আবর্জনা, কাঠ বা পাথরের স্তূপ বাড়ির বাইরে সরিয়ে রাখতে পারেন।