কংগ্রেসের ক্ষমতাকে পাশ কাটাচ্ছেন ট্রাম্প, ‘নিষ্ক্রিয়’ রিপাবলিকানরা

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০:২৯

এখন যা ভিন্ন তা হলো, কংগ্রেসের প্রতি ট্রাম্পের অবজ্ঞার মাত্রা এবং সরকারের সমমর্যাদার একটি শাখাকে দুর্বল করার ক্ষেত্রেও প্রেসিডেন্টের কাছে রিপাবলিকান পার্টির নেতাদের বশ্যতা স্বীকার। জাতীয় নিরাপত্তা, বাজেট ও তদারকির ক্ষেত্রে আইনসভাকে ক্রমাগত খর্ব করে চলেছেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তাকে থামাতে উল্লেখযোগ্য কিছু করেননি ক্ষমতাসীন রিপাবলিকানরা।
প্রতিরক্ষা সদরদপ্তর পেন্টাগন সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটির জ্যেষ্ঠ ডেমোক্র্যাটকে সামরিক এক গোয়েন্দা সংস্থায় পরিদর্শনের অনুমতি দেয়নি। কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া এবং গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের না জানিয়ে মাদক কার্টেলের কথিত সদস্যদের বিরুদ্ধে ভেনেজুয়েলার উপকূলে সামরিক অভিযান শুরু করে সশস্ত্র বাহিনী।
হোয়াইট হাউস কংগ্রেসকে জানিয়েছে, তারা বিরল কৌশল ব্যবহার করে ভোটাভুটি এড়িয়ে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন (৫০০ কোটি) ডলার বিদেশি সহায়তা তহবিল বাতিলের পরিকল্পনা করেছে। অথচ এর অনুমোদন এরই মধ্যে দিয়েছেন আইনপ্রণেতারা।
এটি আইন প্রণয়নকারী শাখার ব্যয় সক্ষমতা দুর্বল করতে প্রশাসনের সাম্প্রতিক পদক্ষেপের আরেকটি মাত্রাগত বৃদ্ধি। সিনেটররা মাত্র এক মাস আগে নিয়োগ নিশ্চিত করার পর সেন্ট্রার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল-সিডিসির পরিচালককে বরখাস্ত করেন হেলথ সেক্রেটারি রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র।
তিনি এমন কিছু পরিবর্তনের প্রস্তাব করেছেন, যা কার্যকরভাবে কোভিড-১৯ টিকার সহজলভ্যতাকে সীমিত করবে। যদিও নিজের নিয়োগ অনুমোদনের শুনানিতে সিনেটরদের কাছে টিকাপ্রাপ্তি কঠিন না করার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তিনি।
কংগ্রেসের ক্ষমতা খর্বকরণ অব্যাহত
কংগ্রেসের ক্ষমতাকে ক্রমাগত ছেঁটে ফেলছে ট্রাম্প প্রশাসন। তার দ্বিতীয় মেয়াদে ছোট-বড় নানা উপায়ে কংগ্রেসের সাংবিধানিক ক্ষমতা পদদলিত করা হচ্ছে।
এতকিছুর পরও ক্ষমতাসীন রিপাবলিকানরা বেশির ভাগ সময়ই উদাসীন থাকার পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে রীতিমতো সিদ্ধান্তগুলোকে স্বাগত জানিয়েছেন। অথচ তাদের একসময়কার ঈর্ষা জাগানিয়া সুরক্ষিত ক্ষমতা এমনভাবে হ্রাস পাচ্ছে, যা আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে।
রিপাবলিকান নেতারা নিষ্ক্রিয়
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সিডিসি, ইন্টারনাল রেভিনিউ সার্ভিস-আইআরএস এবং ফেডারেল রিজার্ভের মতো সংস্থাগুলোর একের পর এক শীর্ষ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করার সময় নিষ্ক্রিয়ভাবে চেয়ে চেয়ে দেখেছেন রিপাবলিকান পার্টির নেতারা। অথচ এসব সংস্থায় শীর্ষ নির্বাহীদের নিয়োগ করতে কয়েক সপ্তাহ ধরে কাজ করতে হয়েছে সিনেটরদের।
ট্রাম্প প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ জানানোর বিষয়ে সামান্যই আগ্রহ দেখা গেছে রিপাবলিকান নেতাদের। যদিও তাদের কয়েকজন চলতি বছরের শুরুর দিকে তাদের আপত্তি সত্ত্বেও ট্রাম্পের মনোনীত কিছু ব্যক্তির বিষয়ে কদাচিৎ অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
ডেমোক্র্যাটদের প্রতিক্রিয়া
কোভিড-১৯ টিকা নিয়ে হেলথ সেক্রেটারি কেনেডির অবস্থানের সমালোচনা করেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভারমন্টের সিনেটর পিটার ওয়েলচ। গত সপ্তাহে কেনেডির উপস্থিতিতে এক শুনানির সময় তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা একজন টিকা অস্বীকারকারীর নিয়োগ নিশ্চিত করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুল্কের ক্ষেত্রে আমরা আমাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছি। বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে আমরা এমন এক প্রশাসনের কাছে নতজানু হচ্ছি, যেটি আমাদের আইন পাসের দ্বিদলীয় পদ্ধতি সত্ত্বেও কী খরচ করবে আর কী করবে না, সে বিষয়ে বাতিলের ক্ষমতা প্রয়োগের পাশাপাশি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।’
ওয়েলচ আরও বলেন, ‘আমরা ক্ষমতা সমর্পণ করতে পারি না। এর পরিণতি আছে।’
যেখানে ব্যতিক্রম ট্রাম্প
প্রায় এক শতাব্দী ধরে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান—উভয় দল থেকে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টরাই আরও বেশি ক্ষমতা পুঞ্জীভূত করার চেষ্টা করেছেন, বিশেষত পররাষ্ট্রনীতি ও সামরিক অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া কংগ্রেসের প্রভাব হ্রাস করতে তারা সফল হয়েছেন।
এখন যা ভিন্ন তা হলো, কংগ্রেসের প্রতি ট্রাম্পের অবজ্ঞার মাত্রা এবং সরকারের সমমর্যাদার একটি শাখাকে দুর্বল করার ক্ষেত্রেও প্রেসিডেন্টের কাছে রিপাবলিকান পার্টির নেতাদের বশ্যতা স্বীকার।
এ বিষয়ে কলোরাডোর ডেমোক্র্যাট ও হাউসের আর্মড সার্ভিসেস অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স কমিটির সদস্য জেসন ক্রো এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এখানে বড় গল্প হলো একজন প্রেসিডেন্ট শুধু তার ক্ষমতার সীমা ঠেলার চেষ্টা করছেন না। কারণ আমাদের ব্যবস্থা এ কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত গল্প হলো যে কংগ্রেসের রিপাবলিকানরা আত্মসমর্পণ করেছেন এবং তাদের কর্তৃত্ব ফিরে পেতে প্রতিরোধের চেষ্টাটাও করছেন না।’
সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস