মার্কিন গ্রীন কার্ডে শিশুদের বয়সের নতুন নিয়ম

এজিং আউট ঝুঁকিতে হাজারো শিশু
ডেস্ক রিপোর্ট
  ১২ আগস্ট ২০২৫, ২০:৫০

মার্কিন নাগরিকত্ব ও অভিবাসন সেবা বিভাগ (ইউএসসিআইএস) গ্রীন কার্ড আবেদন প্রক্রিয়ায় শিশুদের বয়স নির্ধারণের নিয়ম কঠোর করছে। যা বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের পরিবার ও এইচ-১বি ভিসাধারীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ১৫ আগস্ট থেকে শুরু হতে যাওয়া নতুন এই নিয়মের কারণে ২১ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই গ্রীন কার্ড অনুমোদন না পেলে শিশুদের ‘চাইল্ড স্ট্যাটাস’ হারানোর ঝুঁকি বেড়ে যাবে এবং তারা গ্রীন কার্ডের জন্য যোগ্যতা হারাতে পারেন।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাইডেন প্রশাসনের সময় ইউএসসিআইএস ‘ডেটস ফর ফাইলিং’ চার্ট ব্যবহার করত। যা শিশুর বয়স ‘ফ্রিজ’ করে অপেক্ষার সময় বাড়িয়ে দিত। কিন্তু আগামি ১৫ আগস্ট থেকে ইউএসসিআইএস ‘ফাইনাল অ্যাকশন ডেটস’ চার্ট অনুসরণ করবে। যা অপেক্ষার সময় কমিয়ে দেয় এবং অনেক শিশুর জন্য সুরক্ষার সময়সীমা সংকুচিত করে। এই পরিবর্তনের ফলে হাজার হাজার শিশু ‘এজিং আউট’ বা বয়সের কারণে গ্রীন কার্ড প্রাপ্তির সুযোগ হারাতে পারেন।
ইউএসসিআইএস বলেছে, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্ট অনুযায়ী একজন শিশুর সংজ্ঞা হল অবিবাহিত এবং ২১ বছরের নিচে বয়সের ব্যক্তি। গ্রীন কার্ডের জন্য আবেদন করার সময় যদি কেউ শিশু হিসেবে বিবেচিত হন। কিন্তু অনুমোদনের আগেই ২১ বছর পূর্ণ করেন, তাহলে তাকে শিশু হিসেবে গণ্য করা হবে না। এই প্রক্রিয়াটিকে ‘এজিং আউট’ বলা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নতুন নিয়ম ভারতীয় অভিবাসী পরিবারগুলোর ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। যাদের অনেকের দীর্ঘদিন ধরে গ্রীন কার্ড পাওয়ার অপেক্ষা চলছে। বিশেষ করে এইচ-১বি ভিসাধারী পিতামাতাদের সন্তানরা, যারা আমেরিকায় বসবাস ও শিক্ষা গ্রহণ করছেন, তারা এ সমস্যার সম্মুখীন হবেন।
এক অভিবাসন বিশেষজ্ঞ বলেন, নতুন নিয়মের ফলে বহু শিশু এবং পরিবারের জন্য ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। অনেকেই তাদের বসবাসের অনুমতি হারিয়ে দেশে ফিরে যেতে বাধ্য হতে পারেন, যা তাদের শিক্ষাজীবন ও ক্যারিয়ারে বড় ধাক্কা হবে।
এই নিয়মের পেছনে ইউএসসিআইএস’র যুক্তি হলো, এটি পুরনো ও দীর্ঘমেয়াদী অপেক্ষার কারণে সৃষ্ট ব্যাকলগ মোকাবিলায় সাহায্য করবে এবং অভিবাসন প্রক্রিয়াকে আরও দ্রুততর করবে। তবে অভিবাসী অধিকারকর্মী ও সংগঠনগুলো এই কঠোরতার কঠোর সমালোচনা করেছে, বলছে এটি বহু পরিবারের জীবন দুর্বিষহ করে তুলবে।
মার্কিন অভিবাসন আইন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, চাইল্ড স্ট্যাটাস প্রোটেকশন অ্যাক্ট ২০০২ সালে এমন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য গৃহীত হয়েছিল। যেখানে শিশুরা দীর্ঘদিন অপেক্ষার কারণে গ্রীন কার্ড পাওয়ার আগেই ২১ বছর পূর্ণ করত। বাইডেন প্রশাসনের নীতিতে সেই সুবিধাটি বাড়ানো হয়েছিল, কিন্তু নতুন নিয়মে সেটি সরানো হয়েছে।
বহু অভিবাসী পরিবার বলছে, এই নিয়মের ফলে তাদের সন্তানরা ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সুযোগ হারাবে এবং এতে পরিবারকে ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
নতুন নিয়ম কার্যকর হবার পর, অভিবাসী পরিবারগুলো কীভাবে তাদের অবস্থান রক্ষা করবে এবং ইউএসসিআইএস’র নতুন নীতির বিরুদ্ধে তারা কী পদক্ষেপ নেবে তা এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।