ট্রাম্পের উচ্ছেদ অভিযানে বিঘ্ন ঘটালে গৃহহীনদের জুটতে পারে হাজতবাস

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১৩ আগস্ট ২০২৫, ১৩:০১

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি থেকে গৃহহীনদের শিবির উচ্ছেদ এবং অপরাধ দমনে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ বিষয়ে মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) এক বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারি কাজে বিঘ্ন ঘটালে গৃহহীনরা শাস্তির মুখে পড়তে পারেন। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র ক্যারোলিন লিয়াভিট বলেছেন, গৃহহীনদের আশ্রয় কেন্দ্রে জায়গা দেওয়া, মাদকাসক্তি বা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সেবা ইত্যাদির সুযোগ দেওয়া হবে। আর এসব প্রত্যাখ্যান করলে, জরিমানা, এমনকি হাজতবাসও জুটতে পারে।
তিনি জানান, গৃহহীনদের রাজধানী থেকে যথেষ্ট দূরে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা নিয়ে যাচাইবাছাই করছে প্রশাসন।
মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত পার্ক পুলিশের অভিযানে গৃহহীনদের ৭০টির মতো  শিবির উচ্ছেদ হয়েছে জানিয়ে লিয়াভিট বলেন, চলতি সপ্তাহে বাকি দুটো শিবিরও খালি করা হবে।
গৃহহীনদের সেবাদানকারী সংস্থা মিরিয়ামস কিচেনের নীতিনির্ধারণী পরিচালক অ্যান্ডি ওয়াসেনিচ বলেছেন, সরকারি কঠোর অবস্থানের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে সবার মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। এজন্য তার কর্মীরা মানুষকে সতর্ক করার চেষ্টা করছেন।
তবে আপাতত সড়ক থেকে সরে যাওয়াই বুদ্ধিমানে কাজ হবে বলে মনে করেন ওয়াচেসিন। তিনি বলেন, যদি সহ্য করতে পারেন, তাহলে আশ্রয়কেন্দ্রে যান। আর আপনাকে থাকতে দেবে, এমন কেউ থাকলে আপাতত তার কাছে আশ্রয় নিন। আপাতত সড়ক থেকে সরে নিরাপদ কোথাও যান, আর আমাদের জানান যে কীভাবে সহায়তা করতে পারি।
রাজধানীতে অপরাধ দমনের জন্য সম্প্রতি অস্বাভাবিক পদক্ষেপ নিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি সাময়িকভাবে ডিসির পুলিশ বিভাগকে তার অধীনে নিয়ে এসেছেন। একই সময় শহরে ৮০০ ন্যাশনাল গার্ড এবং ৫০০ ফেডারেল ল এনফোর্সমেন্ট এজেন্ট মোতায়েন করেছেন। 
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি এসব কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া আগে থেকেই ওয়াশিংটন থেকে গৃহহীনদের উৎখাত করতে চান।
মার্কিন রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি পরিচালিত হয় বিশেষ বিধি ‘হোম রুল অ্যাক্ট’ দ্বারা। এর কারণে সেখানে কংগ্রেসের চূড়ান্ত কর্তৃত্ব থাকলেও, স্থানীয়রাই তাদের মেয়র এবং নগর পরিষদ নির্বাচন করেন।
নগরের পুলিশ বিভাগের কর্তৃত্ব নির্বাচিত সদস্যদের হাতে থাকলেও, জরুরি জননিরাপত্তা (পাবলিক সেফটি ইমারজেন্সি) জারি করে সেখানে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন ট্রাম্প। জরুরি পরিস্থিতিতে এই ব্যবস্থা ৩০ দিন পর্যন্ত কার্যকর থাকে।
আবাসন ব্যবসায়ী থেকে প্রেসিডেন্ট বনে যাওয়া ট্রাম্পের ভাষায়, গৃহহীনরা হচ্ছে সহিংস গ্যাং, রক্তপিপাসু অপরাধী, উন্মত্ত তরুণদের দল ও নেশাগ্রস্ত উন্মাদদের মতো আরেকটি গ্রুপ, যারা ওয়াশিংটন দখল করে নিয়েছে। তিনি এই অভিযানকে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে কঠোর নজরদারির সঙ্গে তুলনা করেন।
মার্কিন আবাসন ও নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (হাউজিং অ্যান্ড আরবান ডেভেলপমেন্ট বা এইচইউডি) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে এক রাতে দেশজুড়ে সাত লাখ ৭১ হাজারের বেশি মানুষ গৃহহীন ছিলেন, যা রেকর্ড সর্বোচ্চ। এর মধ্যে ওয়াশিংটনে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৬১৬, যা আগের বছরের তুলনায় ১৪ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। শহরের জনসংখ্যা প্রায় সাত লাখ হলেও গৃহহীনতার হার যুক্তরাষ্ট্রের সব অঙ্গরাজ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ—প্রতি ১০ হাজারে ৮৩ জন।