নিউইয়র্ক শহরের পরবর্তী মেয়র নির্বাচন ঘিরে সরগরম যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গন। তবে এবার নির্বাচনী লড়াইয়ের কেন্দ্রে উঠে এসেছেন এক তরুণ ডেমোক্র্যাট নেতা। ৩৩ বছর বয়সী জোহরান মামদানি। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই প্রগতিশীল রাজনীতিককে থামাতেই সরাসরি মাঠে নেমেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প।
নিউইয়র্ক টাইমস এবং অন্যান্য মার্কিন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, মামদানি শুধু ট্রাম্পের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নন, বরং তাকে নিয়ে ট্রাম্পের ‘প্রেস্টিজ ইস্যু’ তৈরি হয়েছে। নিউইয়র্ক শহরকে ‘বিশ্ব বাণিজ্যের রাজধানী’ হিসেবে দেখেন ট্রাম্প, আর সেই শহরের নেতৃত্বে তিনি কোনো ‘কমিউনিস্ট বা সমাজতান্ত্রিক’ চিন্তাধারার কাউকে দেখতে চান না। মামদানি নিজেকে পরিচয় দেন একজন ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট হিসেবে, এটাই ট্রাম্পের চোখে সবচেয়ে বড় আপত্তির জায়গা।
ট্রাম্প চান, মামদানির বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যেন একাধিক প্রার্থী না থাকে। তিনি মনে করছেন, অনেক প্রার্থী থাকলে ভোট ভাগ হয়ে যাবে, আর এতে মামদানি জয়ী হতে পারেন। এজন্য তিনি চাইছেন, জোহরানবিরোধী ভোট যেন একটি নির্দিষ্ট প্রার্থীর ঝুলিতে যায়। এই লক্ষ্যেই ট্রাম্প কাজ শুরু করেছেন।
রিপাবলিকান দলের প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে নির্বাচনী লড়াই থেকে সরিয়ে দিতে ট্রাম্প চেষ্টা করছেন তাকে ‘বুঝিয়ে’ কিংবা চাপ দিয়ে। কার্টিস ৭১ বছর বয়সী জনপ্রিয় কনজারভেটিভ নেতা হলেও নিউইয়র্কের মতো ডেমোক্র্যাট-প্রধান শহরে তার জয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ। একইভাবে, বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামসকেও নির্বাচনে না আসার জন্য উৎসাহিত করছেন ট্রাম্প। যদিও এরিক নিজেও ডেমোক্র্যাট, কিন্তু এবারের মেয়র নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। কারণ, দলে তার জনপ্রিয়তা এখন তলানিতে।
এই প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প সমর্থন দিচ্ছেন অ্যান্ড্রু কুয়োমোকে। কুয়োমো নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর এবং ডেমোক্র্যাট দলের প্রবীণ নেতা। দলের মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় মামদানির কাছে হেরে গিয়ে তিনিও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। ট্রাম্পের বিশ্বাস, মামদানি-বিরোধী ভোটগুলো কুয়োমোর পেছনে একীভূত হলে তার জয়ের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।
হোয়াইট হাউজের এক অভ্যন্তরীণ নৈশভোজে ট্রাম্প বলেন, আমি একজন কমিউনিস্টকে নিউইয়র্কের মেয়র হিসেবে দেখতে চাই না। এই মন্তব্য থেকেই পরিষ্কার, মামদানির প্রগতিশীল রাজনীতি ট্রাম্পের কাছে বড় শঙ্কা।
ট্রাম্প আরও বলেন, যতক্ষণ না একজন একক প্রার্থী লড়ছেন, ততক্ষণ জয়ের সম্ভাবনা নেই। আমি চাই, বাকি প্রার্থীরা সরে দাঁড়াক। যাতে লড়াইটা হয় মুখোমুখি, একজন বনাম একজন।
এদিকে এনবিসি এবং সিবিএস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিউইয়র্কের এই নির্বাচন এখন কেবল শহরের বা রাজ্যের বিষয় নয়, বরং এটি পৌঁছে গেছে জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্র হোয়াইট হাউজ পর্যন্ত। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই, ট্রাম্পের সরাসরি হস্তক্ষেপের কারণে মেয়র নির্বাচন হয়ে উঠেছে জাতীয় আলোচনার একটি বড় ইস্যু।
জোহরান মামদানি বর্তমানে নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য। তরুণ প্রজন্ম, অভিবাসী পরিবার এবং প্রগতিশীল ভোটারদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। নিজেকে তিনি মনে করেন শ্রমজীবী মানুষের কণ্ঠস্বর।