বিক্ষোভে উত্তাল ওয়াশিংটন ডিসি ,ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১২ আগস্ট ২০২৫, ২৩:৫০


মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উত্তাল ওয়াশিংটন ডিসি। রাজধানী থেকে গৃহহীনদের উচ্ছেদে জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর প্রতিবাদ করছে বিক্ষোভকারীরা।
সোমবার (স্থানীয় সময়) ৭৮ মিনিটের সংবাদ সম্মেলন শেষে ট্রাম্প ঘোষণা করেন সরাসরি ওয়াশিংটনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব নিতে পারবে বিচার বিভাগ। এছাড়াও ৭ লাখেরও বেশি মানুষের বসবাসের এই শহরে ন্যাশনাল গার্ডও মোতায়েন করা হবে বলে ঘোষণা করেছেন তিনি।
ট্রাম্পের এমন ঘোষণায় ব্যাপক ক্ষুব্ধ রাজধানীর বাসিন্দারা। হোয়াইট হাউজের কাছে জড়ো হয়ে ট্রাম্পকে দুয়োধ্বনি দেন বিক্ষোভকারীরা। আলজাজিরা।
কেয়া চ্যাটার্জি নামে ফ্রি ডিসি নামের এক সংগঠনের পরিচালক বলেন, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত শুধু বাসিন্দাদের অধিকারের ওপর আঘাত নয়, বরং এটি একটি বড় ধরনের বাড়াবাড়ি। 
তার মতে, এটি ‘স্বৈরাচারী আচরণ’ ছাড়া আর কিছুই নয়। এরই মধ্যে ট্রাম্পের নির্দেশে ৮০০ সেনা প্রস্তুত রাখা হয়েছে যাদের মধ্যে ১০০ থেকে ২০০ জন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সাহায্য করবে। ১৮১০ সালে যখন কংগ্রেস ম্যারিল্যান্ড ও ভার্জিনিয়ার জমি নিয়ে ওয়াশিংটন ডিসি প্রতিষ্ঠা করে। তখন থেকেই এখানকার বাসিন্দাদের অধিকার নিয়ে বিতর্ক চলছে। শহরটি কখনোই পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা পায়নি। পাশপাশি শহরটি সরাসরি ফেডারেল সরকারের অধীনে থাকে। যদিও ১৯৭৩ সালের ‘হোম রুল অ্যাক্ট’ অনুসারে কিছু স্থানীয় কর্মকর্তা নির্বাচনের অধিকার বাসিন্দাদের আছে, কিন্তু তাদের নেওয়া সব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কংগ্রেসের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। শহরটি একসময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠ শহর ছিল। 
নাগরিক অধিকার নেতা রেভারেন্ড আল শার্পটন বলেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ ‘ন্যায়বিচার ও নাগরিক অধিকারের ওপর চ‚ড়ান্ত আঘাত’। তার মতে, ট্রাম্প শুধুমাত্র নিজের সুবিধার জন্য এই কাজটি করেছেন। জেফ্রি এপস্টেইন বিতর্ক থেকে মানুষের মনোযোগ সরাতেই এমন পদক্ষেপ নিলেন ট্রাম্প। 
অন্যদিকে, ওয়াশিংটনের মেয়র মুরিয়েল বাউজার বলেছেন, ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা ‘অস্বস্তিকর’ হলেও এমন ঘটনা আগে ঘটেনি তা নয়। তিনি বাসিন্দাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের গণতন্ত্রের অধিকার কতটা দুর্বল, তা আমরা জানি। এই কারণেই আমি এবং আমার আগে অনেকেই পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদার জন্য লড়াই করেছি।’
প্রতিবাদকারীরা বলছেন, ওয়াশিংটনের শহরের আইন ও নীতিতে বাসিন্দাদের প্রভাব কতটা কম ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ তা আবারও প্রমাণ করেছে। ২০ বছর বয়সি কলেজ শিক্ষার্থী আমারি জ্যাক বলেন, এই ঘটনাটি ওয়াশিংটনের ক্ষমতা দখলের ‘প্রথম ধাপ’। 
তিনি বলেন, ‘ওয়াশিংটনে জন্ম নেওয়া এবং বেড়ে ওঠা মানুষ হিসাবে আমাদের নিজেদের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ থাকা উচিত। কোনো একজন প্রেসিডেন্ট এসে আমাদের শহর শাসন করবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না।’ ট্রাম্প তার ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণার পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, ‘স্থানীয় সরকার আইনশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।’ 
তিনি দাবি করেন, এখানকার অপরাধের হার ফেডারেল কার্যক্রমের জন্য ‘অসহনীয় ঝুঁকি’ তৈরি করছে। হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেন, ‘কুখ্যাত গ্যাং, মাদক ব্যবসায়ী ও অপরাধী চক্রের হাত থেকে রাজধানীকে বাঁচাতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’
ওয়াশিংটনের অ্যাটর্নি জেনারেল ব্রায়ান শ্যাল্ব এই পদক্ষেপকে ‘অপ্রয়োজনীয় এবং বেআইনি’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ডিস্ট্রিক্ট অফ কলাম্বিয়ায় কোনো জরুরি অবস্থা ঘোষণার মতো কোনো অপরাধ নেই।’ 
পুলিশের তথ্যানুযায়ী, যদিও সাধারণত রাজধানীতে অপরাধের হার জাতীয় গড়ের চেয়ে বেশি, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তা অনেক কমেছে। প্রথমে ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে সহিংস অপরাধের সংখ্যা ৩৫ শতাংশ কমেছে। এরপর চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে, ২০২৪ সালের একই সময়ের তুলনায় অপরাধের সংখ্যা আরও ২৬ শতাংশ কমেছে। অর্থাৎ দুই বছরের ধারাবাহিক পতনে সহিংস অপরাধের হার এখন ৩০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে আছে। 
রাধা ট্যানার নামে ২০ বছর বয়সি আরেকজন প্রতিবাদকারী মনে করেন, ট্রাম্প অপরাধের বিষয়টিকে রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণের একটি অজুহাতকে ব্যবহার করছেন। তিনি ডেমোক্র্যাট-শাসিত শহরগুলোকে ‘অনিরাপদ ও অপরাধপ্রবণ’ হিসাবে তুলে ধরতে চান। কেননা ২০২৪ সালের নির্বাচনে রাজধানীর ৯০ শতাংশেরও বেশি ভোটার ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিসকে ভোট দিয়েছিলেন, আর ট্রাম্প পেয়েছিলেন মাত্র ৬ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট।