যে সব অভ্যাসে কিডনি নষ্ট হয়

আফতাব চৌধুরী
  ১৭ মার্চ ২০২৪, ১২:৪৭

আমাদের শরীরে যত টক্সিন তথা দূষিত পদার্থ রয়েছে তা বের করে দেওয়া মানে ছাঁকনির প্রক্রিয়াতে তাকে ইউরিনের সঙ্গে বের করে শরীরকে সুস্থ রাখাই কিডনির প্রধান কাজ। আমাদের শরীরে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল কিডনি। কিন্তু আমরা নিজেদের দোষে প্রায়ই কিডনির উপর নানারকম অত্যাচার করি, যার ফলে কিডনি ক্রমশ নষ্ট হতে থাকে। কিডনি বা লিভারের মতো অঙ্গগুলি চট করে কাবু হয় না, কিন্তু দীর্ঘদিনের অত্যাচারে তার কার্যপদ্ধতিতে ব্যাঘাত ঘটাই স্বাভাবিক । আমাদের দৈনন্দিন কিছু অভ্যাস কিডনির উপর প্রভাব ফেলে ও এক্ষেত্রে বয়স, পরিবেশ ও পরিস্থিতিও অনেকাংশে নির্ভরশীল। কী কী অভ্যাস, জানলে আপনি নিজেই অবাক হবেন -অতিরিক্ত পানি পান- কিডনির প্রধান কাজ হল রক্ত পরিশোধন করা ও শরীরের যাবতীয় বর্জ্য বের করা। এইসব টক্সিন জাতীয় পদার্থগুলো শরীর থেকে গেলে তা থেকে শরীরের নানা প্রকার ক্ষতি হতে পারে। শরীরের প্রয়োজন মতো পানি পান করা আবশ্যক, পর্যাপ্ত পানি না খেলে কিডনি টিকমতো কাজ করতে পারে না। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দিনে আড়াই থেকে তিন লিটার পানিই যথেষ্ট। এর বেশি পানি দিনের পর দিন মানে অতিরিক্ত খেয়ে গেলে কিডনির উপর উল্টো চাপ পড়ে। তবে শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের পানির মাত্রাটা অবশ্যই আলাদা হবে। মানবদেহে শতকরা ৬০ শতাংশই পানি। সারাদিনে আমরা পানি ছাড়াও চা, কফি, শরবৎ এগুলো খাওয়া প্রয়োজন। এগুলোও তরলের কাজ করে। সুতরাং সারাদিনের ডায়েট, বয়স ও কতটা অন্যান্য পানিয় খাচ্ছি, তার উপর নির্ভর করে শুধু পানি কতটা খেতে হবে। তাছাড়া যাঁদের ইতিমধ্যেই কিডনির সমস্যা রয়েছে, তাঁদের কিন্তু পানি পানের একটি মাপ থাকে।  
বহুক্ষণ মুত্র চেপে রাখা-ব্যস্ততা হোক বা অলসতা বা অপারগতা দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব না করে চেপে রাখা ব্যাপারটা অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। এটা কিডনির জন্য যে কতটা ক্ষতিকারকাক, তা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। এক-আধদিন করলে বা আধাঘন্টা একঘন্টা মুত্রত্যাগ না করলে সমস্যা নেই। কিন্তু ব্যাপারটা রোজনামচা হয়ে গেলেই সমস্যা। দীর্ঘসময় ইউরিন ব্লাডারে আটকে থাকলে তা থেকে ব্যাকটেরিয়ার বাড়বাড়ন্ত হয়। এর ফলে ইউরিনে সংক্রমণ হতে পারে। তাছাড়া ইউরিনের মতো ক্ষতিকর বর্জ্য শরীরে দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকা মানেই সেখানে থেকে নানা সমস্যা তৈরি হবে। ভুল ডায়েট- আমাদের শরীরের সমস্ত কার্যকলাপ সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য সোডিয়াম আর পটাশিয়াম দুটোরই প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু কেউ যদি অতিরিক্ত  লবন খান, তাহলে শরীরে সোডিয়া, ইনটেক বাড়বে, এর ফলে প্রেসার বাড়বে ও চাপ পড়বে কিডনির উপরও। সুস্থ থাকতে প্রত্যহ ৫ গ্রাম করে লবই যথেষ্ট। লবনে আছে সোডিয়াম ক্লোরাইড ও টেস্টিং সল্টে আছে সোডিয়াম জাতীয় উপাদান। এগুলো শরীরের পানি ধরে রাখে, ফলে ইউরিন কম হয়, শরীর ফুলে যায়। চাইনিজ খাবার সুস্বাদু করতে টেস্টিং সল্ট দেওয়া হয়। তাই এই খাবার বেশি খেলেই সমস্যা। মাত্রাছাড়া ক্যাফেইন-অতিরিক্ত কফি মানেই শরীরের মাত্রাছাড়া ক্যাফেইন যাচ্ছে। আর এই ক্যাফেইন থেকে কিডনিতে ক্যালসিয়াম অ·ালেট স্টোন তৈরি হয়, যাকে আমরা সাধারণভাবে কিডনির পাথর বলে জানি। ক্যাফেইন ইউরিনারি ক্যালসিয়াম বৃদ্ধি, যা ইউরিনারি ক্যালসিয়াম অলেট পাথর তৈরিতে সাহায্য করে। তবে দিনে মাত্র এক কাপ কফি খেলে এই সমস্যার আশঙ্কা থাকে না।  ক্যাফেইনযুক্ত সফট ড্রিং·, এনার্জি ড্রিং·,চকলেট, কোকে জাতীয় খাবার যথাসম্ভব বাদ দিন। হাই প্রোটিন ডায়েট-অতিরিক্ত প্রোটিন বিশেষ করে রেডমিট কিডনির জন্য মোঠেই ভালো নয়। কেননা এটি সহজে হজম হয় না, ফলে শরীর থেকে মেটাবলিক রেট বাড়িয়ে দেয় হজম হওয়ার জন্য, এর এই মেটাবলিক বৃদ্ধি কিডনির উপরও চাপ ফেলে। তাই রেডমিট কমিয়ে আনুন, মাসে এক থেকে দুদিন। কিডনির রোগে ভোগা ব্যক্তিদের যে কোনও রকম মাংস এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয়। মদ্যপান ও ধূমপান- এই দুটির সঙ্গে শরীরের সমস্ত অঙ্গের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে, যার মধ্যে থেকে বাদ যায় না কিডনিও। কিডনির সমস্যা নিরসনে অ্যালকোহলকে পুরোপুরি বাদ দিতে হবে। ধূমপানের ফলে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে, যা কিডনির জন্য ক্ষতিকর।