নিউ ইয়র্ক সিটির একটি স্কুল ভবনে স্থান নিয়ে চলছে সংঘর্ষ। একই বিল্ডিংএ বিগত এক দশক ধরে ভাগ করে দুটি প্রোগ্রামে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছিলো পাবলিক স্কুল ১৪৫ ও ওয়েস্ট প্রিপ একাডেমি। সম্প্রতি পাবলিক স্কুলটি ১২০ জন নতুন ছাত্র ভর্তি করালে এ সংঘাত আরো মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। যার ফলে ক্রমবর্ধমান প্রতিবেশীর জন্য জায়গা তৈরি করার জন্য৷ শিক্ষা অধিদপ্তর ওয়েস্ট প্রিপ একাডেমিকে আলাদা একটি পুরাতন ভবনে স্থানান্তরের প্রস্তাব। কেননা তাদের ছাত্রের সংখ্যা দিনদিন কমছিলো।
ওয়েস্ট প্রিপ একাডেমি হল একটি আঁটসাঁট মিডল স্কুল যা অটিজম আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনন্য প্রোগ্রাম পরিচালনা করে। যার প্রতি ১০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় নয়জনই কালো বা ল্যাটিনো। এবং তাদের ৪০ শতাংশের বেশি প্রতিবন্ধী।
মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে পাবলিক স্কুলটি অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী হারানোর পর নতুন অভিবাসী পরিবারগুলির পরিবারগুলোর ছাত্র ভর্তি করে ক্ষতিপূরণের চেষ্টা চালাতে গেলে তাদের ভবন সংকট দেখা দেয়। এমন অবস্থায় স্কুল দুটিকে পৃথক করার প্রশ্ন এলে দেখা দেয় অসন্তোষ। কেউ কেউ বলছেন দুটি স্কুলকে আলাদা করা খুবই বেদনাদায়ক হবে। একটি স্কুল ভবন ‘লকার এবং ক্লাসরুমের‘ চেয়ে বেশি কিছু। একটি স্কুল ভবন কোন কোন প্রতিবেশীর হৃদয়ের সমান। স্কুল ভবনটিকে নিজেদের নোঙরের সাথেও তুলনা করছেন অনেকে।
এদিকে স্কুলের চ্যান্সেলর ডেভিড সি. ব্যাঙ্কস, সম্প্রতি একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, স্কুল দুটির মধ্যে যেকোন একটিকে সরাতে হবে। এটি আবেগজনিত একটা বিষয়। যা চারদিকে হইচই ফেলে দিবে।
অভিভাবকরা বলেছেন, ওয়েস্ট প্রিপ একাডেমি দুর্বল শিশুদের জন্য আশ্রয়স্থল। যাদের অন্য কোথাও স্বাগত জানানো হয়নি তারা এ স্কুলে লেখাপড়ার সুযোগ পায়। তথ্য দেখায়, একই জনসংখ্যার অন্যান্য স্কুলে তাদের সমকক্ষদের তুলনায় অষ্টম শ্রেণী ছাড়ার সময় স্কুলটির শিক্ষার্থীরা একাডেমিকভাবে আরও বেশি অগ্রসর হওয়ার প্রবণতা দেখায়।
কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলিতে স্কুলটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যায় ২০১৮ সালে স্কুলটিতে ২০০ জন শিক্ষার্থী থাকলেও চলতি বছর প্রায় ১৭০ জন ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কমেছে। মূলত এলাকার কালো পরিবারদের অন্যত্র চলে যাওয়ার কারণে এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। স্কুলের কর্মকর্তারা বলছেন, ওয়েস্ট প্রিপকে টেকসই মাত্রায় শিক্ষার্থী বাড়ানো দরকার।
এদিকে পাবলিক স্কুল ১৪৫ এর আশেপাশে বেশ কয়েকটি ভালো সুযোগসুবিধা সম্পন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকায় স্কুলটি দীর্ঘস্থায়ীভাবে শিক্ষার্থী সংকটে ভুগে আসলেও নিউ ইয়র্ক সিটি লাতিন আমেরিকা এবং পূর্ব ইউরোপ থেকে অভিবাসীদের আগমনের কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠলে এ স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা বাড়তে থাকে। এখন স্কুলটিতে ৪৮০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। যার মধ্যে প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন গৃহহীন।
হঠাৎ করে ছাত্রছাত্রী বৃদ্ধি পাওয়ায় স্কুলটির স্থান সংকুলান নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। অধিক শিক্ষার্থীর পাঠদানের সুযোগ দিতে লাইব্রেরিকেও নিয়ে আসা হয়েছে শ্রেণীকক্ষের আওতায়। অপর স্কুলের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য থেরাপি সেশনগুলি সংকীর্ণ জায়গায় অনুষ্ঠিত হয়। বন্ধ রাখা হয়েছে মিডিয়া এবং আর্টস প্রোগ্রামগুলিও।
পাবলিক স্কুল ১৪৫ এর অভিভাবক-শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি লরেন বালাবান বলেন, আমাদের বাচ্চাদের প্রয়োজনীয় এবং প্রাপ্য পরিষেবা দেওয়ার জন্য আমাদের বিল্ডিংয়ে জায়গা নেই।
শিক্ষা বিভাগ ওয়েস্ট প্রিপকে পাশের একটি ১৩৪ বছর পুরোনো ভবনে নিয়ে যেতে চায়, যে ভবনটিতে মূলত শারিরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা প্রবেশের সুযোগ নেই। এছাড়াও ভবনটির বাইরে নেই কোন অতিরিক্ত জায়গা।
স্কুলটি সরানোর ক্ষেত্রে সম্ভাব্য পদক্ষেপের উপর সাম্প্রতিক শুনানির সময় ওয়েস্ট প্রিপ প্যারেন্ট লিডার জেনিফার হল্যান্ড বলেছিলেন, স্কুলটি স্থানান্তরের জন্য একটি দুর্গম ভবন নির্বাচন করায় আমি হতাশ। এখানে বৈষম্য করা হচ্ছে। অযোক্তিভাবে একটি গোষ্টিকে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এটি একটি অবিচার।