ডেঙ্গুতে মৃত্যু বাড়ছে, নেই লার্ভা নিধন কার্যক্রম

আগস্টে মারা গেছে ২৭ জন, সেপ্টেম্বরের প্রথম ১০ দিনেই ১৯ জনের মৃত্যু

স্বাস্থ্য ডেস্ক
  ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২২:৩৫

বর্তমান সময়ে প্রাণঘাতী রোগের নাম ডেঙ্গু। এই রোগের বাহক এডিস মশা। বর্তমানে এডিস মশার প্রজনন বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর পিক সিজনে মশা নিধনে যথাযথ কার্যক্রম না থাকায় প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি ধীরে হলেও দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর তালিকা। তবে ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখনো গত বছরের চেয়ে ভালো। অবশ্য সচেতনতা এবং মশা নিধনের কার্যকর পদক্ষেপ না থাকলে কম সময়েই আবার ডেঙ্গু ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ঢাকার গুলশান, মহাখালী, শেওড়াপাড়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, নিউ মার্কেট এলাকার বাসিন্দারা। এমন কি বাংলামটর, পল্টন, জুরাইন, পুরান ঢাকা, মগবাজার, গুলশান-১ ও ২, রামপুরা, কাওরান বাজার এলাকাতেও মশক নিধন কর্মীরা সক্রিয় নন। 
জানা গেছে, দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি কাজে সক্রিয় না থাকায় মশক নিধনের কোনো কার্যক্রম নেই। সিটি করপোরেশন ডেঙ্গুর লার্ভা নিধনের বিশেষ কোনো অভিযানও পরিচালনা করেনি। 
ডিএনসিসির ঘোষণা অনুযায়ী, ডাবের খোসা, চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিকের বোতল কেনার কার্যক্রমও বন্ধ। গত দুই মাসে উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কোনো জলাশয়ের ঝোপঝাড়ও পরিষ্কার করা হয়নি। এ সময় লার্ভি সাইডিং ও অ্যাডাল্টি সাইডিং করতেও মশক নিধন কর্মীদের কালেভদ্রে দেখা গেছে বলে জানান নগরবাসী। এছাড়া মশার ডিম পাড়ার মতো পাত্রগুলোও ধ্বংস করা হয়নি।
গত বছর ডেঙ্গুর সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা ছিল দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি। এখন বর্ষার শেষ সময়েও নামছে ঝুম বৃষ্টি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে না পারলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বর্তমানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৪২.৯৫ শতাংশ ঢাকা মহানগরে এবং ৫৭.৫ শতাংশ ঢাকার বাইরে। মৃতদের মধ্যে ৭০ শতাংশ ঢাকায় এবং ৩০ শতাংশ ঢাকার বাইরে। চলতি বছর এপ্রিলে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয় দুই জনের। শনাক্ত হয় ৫০৪ জন। মে মাসে মৃত্যু হয় ১২ জন এবং শনাক্ত হয় ৬৪৪ জন। জুনে মৃত্যু হয় আট জনের এবং শনাক্ত ৭৯৮ জন। জুলাই মাসে মৃত্যু ১২ জনের এবং শনাক্ত ২ হাজার ৬৬৯ জন। আগস্টে মারা যায় ২৭ জন, শনাক্ত হয় ৬ হাজার ৫২১ জন, সেপ্টেম্বরের ১০ দিনে মারা যায় ১৯ জন এবং শনাক্ত হয় ৩ হাজার ৯৭৮ জন ডেঙ্গু রোগী। তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে। এ এলাকায় ৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের সাবেক ডিন ও অধ্যাপক ড. আজিজুল হক ইত্তেফাককে বলেন, আবহাওয়ার কারণে কোনো কোনো বছর ডেঙ্গুর প্রভাব বেশি হয়। তবে এবার মনে হচ্ছে না খুব বেশি হবে। কারণ সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস ডেঙ্গুর সিজন শেষের দিকে। এপ্রিল-মে-জুন-জুলাই-আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাস ডেঙ্গু বেশি হয়। তিনি বলেন, এডিস মশার আবার দুটি প্রজাতি আছে—এডিস এজিপ্টি ও এডিস এলবোপিকটাস। এডিস এজিপ্টি ঘরের মধ্যেই থাকে বেশি বা ঘরের আশপাশে জন্মায়। আর যেটা এডিস এলবোপিকটাস, সেটা সাধারণত বাইরে থাকে। দুটিই রোগ ছড়াতে পারে। তবে এডিস এজিপ্টি যেটা বাসার ভেতরে থাকে সেটা আমাদের বেশি ক্ষতি করে। অল্প স্বচ্ছ পানিতে লার্ভা জন্মায়। তিনি বলেন, মশক নির্ধন কর্মসূচি ঠিকমত চলতে থাকলে হয়তো এ বছর ডেঙ্গু খুব একটা বাড়তো না। যেহেতু সিটি করপোরেশনের কাজ বন্ধ হয়ে আছে, সে কারণেই এটা শেষ সময়ে এসে বাড়ছে। দ্রুত ডেঙ্গু মশার হট স্পটগুলো চিহ্নিত করে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলে গত বছরের মতো খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হবে না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, জমে থাকা এক চা-চামচ পানিতেও এডিস মশা জন্মাতে পারে। অন্যটি হচ্ছে যদি মশা ঘরে চলে আসে, তাহলে মশারি টানাতে হবে। তিন-চার দিনের মধ্যে পানি ফেলে দিলেই আর লার্ভা থেকে মশা হতে পরবে না। 
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণের বিষয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ডেঙ্গুতে জ্বরের পাশাপাশি মাথাব্যথা, চোখে ব্যথা বা আই বলে ব্যথা হবে। তবে এ ধরনের ব্যথা ইনফ্লুয়েঞ্জারও হতে পারে। এখন যখন ডেঙ্গুর সিজন, তাই জ্বর হলেই চিকিত্সকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসক দেখে বুঝবেন এবং এনএস-১ পরীক্ষা করে দেখতে হবে ডেঙ্গু পজেটিভ, না নেগেটিভ। তবে ডেঙ্গু পজেটিভ হলে চিকিৎসকের অবজারভেশনে থাকতে হবে। দুই-তিন দিন পরে রোগীর আইজিজি ও আইজিএম পরীক্ষা করে দেখবেন যে তার ডেঙ্গু এই প্রথম হয়েছে, না সেকেন্ডারি। ডেঙ্গু রোগীর শরীরে আইজিজি অ্যান্টিবডি থেকে যায়, ফলে দ্বিতীয় বার ডেঙ্গু হলে তা মারাত্মক হয়। আমার মতে, দ্বিতীয় বার ডেঙ্গু হওয়া রোগীকে হাসপাতালেই অবজারভেশনে রাখা প্রয়োজন। কারণে এদের মধ্যে মৃত্যু বেশি হয়। প্রাইমারি ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার নেই বললেই চলে।