
পর্তুগালজুড়ে আজ শুক্রবার সকাল থেকেই শুরু হওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২৪ ঘণ্টার সর্বাত্মক ধর্মঘটে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে পুরো দেশ। রাজধানী লিসবনসহ দেশের বিভিন্ন শহরে সরকারি কর্মচারীরা কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ ও মিছিল করেছেন। সরকারের প্রস্তাবিত স্বল্প বেতন বৃদ্ধি, কর্মপরিবেশের অবনতি এবং জনসেবায় সংকোচনমূলক নীতির প্রতিবাদে সরকারি কর্মচারীদের বৃহত্তম সংগঠন ‘কমন ফ্রন্ট’ এ ধর্মঘটের ডাক দেয়।
এই ধর্মঘটে শিক্ষক, স্বাস্থ্যকর্মী, স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা, বিচার বিভাগের কর্মচারী, কর পরিদর্শক, জনপরিবহন ও সংস্কৃতি বিভাগের কর্মীরাও অংশ নিয়েছেন। ইউনিয়নের হিসাব অনুযায়ী, কেবল লিসবনেই প্রায় ৯০ শতাংশ সরকারি কর্মচারী কাজ বন্ধ রেখেছেন। ফলে অধিকাংশ স্কুল বন্ধ রয়েছে, হাসপাতালগুলোয় নির্ধারিত অপারেশন স্থগিত হয়েছে এবং সরকারি দপ্তরগুলো কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
কমন ফ্রন্টের সমন্বয়ক সেবাস্তিয়াঁও সান্তানা বলেন, সরকার কর্মীদের দাবিকে উপেক্ষা করছে এবং জনগণের করের টাকায় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুবিধা দিচ্ছে—এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি আরও হুঁশিয়ারি দেন, সরকারের নীতিতে পরিবর্তন না এলে ভবিষ্যতে সর্বাত্মক সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হবে।
ধর্মঘটে ন্যাশনাল ডক্টর ফেডারেশন-এর চিকিৎসকরাও অংশ নিয়েছেন। তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনায় সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদ জানান। অনেক হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সদের হাতে প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে, যেখানে লেখা ছিল—‘আমরা রোগীর পাশে, কিন্তু অবহেলার বিরুদ্ধে।’
এই সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে দেশের নাগরিক জীবন প্রায় থমকে গেছে। ব্যাংক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আদালত ও পৌরসভাগুলোর কাজ বন্ধ থাকায় দৈনন্দিন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। পরিবহন খাতেও দেখা গেছে বিশৃঙ্খলা—দিনের বড় অংশে বহু বাস ও ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।
ধর্মঘটকারীরা সরকারের কাছে ১৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি (ন্যূনতম ১৫০ ইউরো) এবং জনসেবায় বিনিয়োগ বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন। তাদের দাবি, সরকার যদি বাজেট থেকে কর্পোরেট ট্যাক্স ছাড় ও অন্যান্য কর সুবিধা প্রত্যাহার করে, তবে সেই অর্থ কর্মীদের বেতন ও জনসেবা খাতে বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব।
শ্রমিক সংগঠনগুলোর এই ঐক্যবদ্ধ অবস্থান ইঙ্গিত দিচ্ছে—দাবি না মানলে শিগগিরই পর্তুগাল আরও বড় ধরনের সাধারণ ধর্মঘটের মুখোমুখি হতে পারে।