গ্যাসট্রিক বা পেটে গ্যাসের সমস্যায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। ভাজাপোড়া বা মসলাযু্ক্ত খাবার খেলে শুরু হয়ে যায় অস্বস্তিকর গ্যাসের সমস্যা। পেটে গ্যাসের জন্য ফেঁপে যায় ও ব্যথা হয়। সঙ্গে সবসময় গ্যাস্ট্রট্রিকের ওষুধ রাখতে হয়।
গ্যাসের সমস্যা থাকার পরও বহু মানুষ বুঝতেই পারেন না যে কেন হচ্ছে জটিলতা। আর এই কারণে অসুবিধা তৈরি হয়। কিছু খাবার রয়েছে যা পেট ফাঁপার কারণ। এমনকি এই খাবারগুলোই গ্যাস তৈরি করে পেটে। তাই সতর্ক হয়ে যাওয়াটা এই পরিস্থিতিতে খুবই জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
চিকিৎসকের মতে, গ্যাসট্রিক হলে সাধারণত নাভির ওপরে পেটে ব্যথা হবে। খালি পেটে কিংবা ভোররাতের দিকে ব্যথা তীব্র হয়। গলা-বুক-পেট জ্বলে, টক ঢেঁকুর ওঠে। ঝাল-তেল-মসলাজাতীয় খাবারে ঝামেলা বেশি করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু খাবার রয়েছে যা গ্যাসের কারণ হতে পারে। আগে বুঝে নিতে হবে যে খাবার থেকে গ্যাস হলে পেট ব্যথা, পেট ফাঁপা ইত্যাদি সমস্যা তৈরি হয়ে যেতে পারে। প্রথমে ব্যবস্থা নিলে সহজেই সমস্যার সমাধান হয়। পেটে গ্যাসের সমস্যায় পুষ্টিবিদদের পরামর্শের আলোকে যেসব খাবার থেকে দূরে থাকবেন-
সুগার ফ্রি খাবার
সুগার ফ্রি চকলেট, ক্যান্ডি, চুইং গাম ইত্যাদি চিনির পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় সর্বিটল, ম্যানিটোল, আইসোমল্ট, জাইলিটোল ইত্যাদি সুগার অ্যালকোহল ধরনের রাসায়নিক উপাদান। প্যাকেটের গায়ে এই নামগুলো খুঁজে পাবেন। এই উপাদানগুলো পেটে গ্যাস সৃষ্টি করে। এগুলো পরিবর্তে ‘স্টিভিয়া, ম্যাপল সিরাপ কিংবা আসল চিনি বেছে নিতে পারেন।
দুধের ল্যাকটোজ থেকে
দুধ অনেকেই খেতে পারেন না। এই খাবারে রয়েছে অনেকটা পরিমাণে ল্যাকটোজ। আর এই ল্যাকটোজ অনেকের সহ্য হয় না। এবার এই অসুখ থাকলে দুধ খেলেই পেট ব্যথা থেকে শুরু করে পেট গ্যাস হতে পারে। তাই সতর্ক হয়ে যান এই অসুখ থাকলে।
ডিম খেলে পেট ফেঁপে যায়
খাবার হিসাবে ডিমের কোনও তুলনা নেই। এই সাধারণ খাবারে রয়েছে অনেকটা ক্যালশিয়াম, প্রোটিন, ভিটামিন এ সহ অন্যান্য ভিটামিন ও খনিজ। তাই এই খাবার খাওয়া উচিত প্রতিটি মানুষের। তবে আপনাকে মাথায় রাখতে হবে যে কিছুজনের আবার ডিমে থাকে অ্যালার্জি। তাই এই খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে।
ফাস্ট ফুড খেলেও গ্যাস হয়
ফাস্ট ফুড খেতে ভালো লাগে। তবে মনে রাখতে হবে যে এই খাবারে রয়েছে খারাপ তেল, অনেকটা মশলা ও অন্যান্য এমন কিছু রাসায়নিক যা পেটের জন্য খারাপ। তাই এই খাবার থেকে দূরে থাকুন। এছাড়া এই খাবার খেলে পেটে ব্যথা হতে পারে। এমনকী গ্যাসও হয়।
শুঁটি-জাতীয় খাবার
উদ্ভিজ্জ প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, আঁশে পরিপূর্ণ এই খাবার দামেও সস্তা। তবে শুঁটি-জাতীয় যেকোনো খাবার থেকেও গ্যাস হতে পারে।
কাবুলি ছোলা
যাদের গ্যাসের সমস্যা রয়েছে, তাদের ছোলার তরকারি খেলেই পেট ভার হয়ে যায়। সারা দিন কাটে বেজায় অস্বস্তিতে। যারা হজমের সমস্যা বা গ্যাস্ট্রিকে ভুগছেন, তাদের সমস্যা আরও বাড়িয়ে দেয় কাবুলি ছোলা।
বাদাম থেকে পেটের সমস্যা
বাদাম খাওয়া খুবই ভালো। এরমধ্যে রয়েছে ভালো পরিমাণে ওমেগা থ্রি। তবে দেখা গিয়েছে যে বাদাম কিছু মানুষের পেটে সহ্য হয় না। তবে অল্প কয়েকটা বাদাম খেলে তেমন সমস্যার আশঙ্কা নেই। বেশি পরিমাণে খেলেই সমস্যা হয়। তাই সতর্ক হয়ে যান আপনারা।
কফি খেলেও গ্যাস হয় পেটে
কফি খেলে অনেক সমস্যাই হতে পারে। এই পানীয়ে থাকা ক্যাফিন পেটের পক্ষে ভালো নয়। সেক্ষেত্রে গ্যাস হতে পারে। এবার মাথায় রাখতে হবে যে কফি খেলেও পেটে গ্যাস হয়। তাই এই বিষয়টি আপনাকে মাথায় রাখতে হবে। অবশ্য দিনে এককাপ খেলে তেমন কোনও সমস্যা হয় না।
স্ন্যাক বার ও সিরিয়াল খাবার
ভোজ্য আঁশ সরবরাহের দাবি করা ফাইবার স্ন্যাক বার্স, ফাইবার সিরিয়াল, সাপ্লিমেন্টাল ফাইবার হিসেবে যোগ করা হয় ইনুলিন ও চিকোরি রুট। এগুলো পেট ফোলাভাব ও পেটে গ্যাস সৃষ্টি করে। এড়াতে চাইলে প্যাকেটের গায়ে লেখা উপকরণের তালিকা দেখে নিতে হবে।”
কোমল পানীয়
কোমল পানীয় পান করলে তা সরাসরি প্রভাব ফেলে কিছু মানুষের অন্ত্রে, ভুট ভাট শুরু হয় সঙ্গে সঙ্গে। এতে থাকা অ্যাসিড ও ‘ফ্রুক্টোজ’ হল এমনটা হওয়া মূল কারণ।
ক্রুসিফেরাস জাতের সবজি
ব্রকলি, ব্রাসেল স্প্রাউট, কপি ইত্যাদি হল ক্রুসিফেরাস জাতের সবজি। পুষ্টিমানে অনন্য হলেও এগুলো পেটে গ্যাস তৈরি করে, সৃষ্টি করে পেটফোলা ভাব। এর কারণ হল এই সবজিগুলোতে ভোজ্য আঁশ থাকে, তাই হজম হতে সময় লাগে বেশি। ফলে তা অন্ত্রের ব্যাক্টেরিয়ার সংস্পর্শে আসে বেশি। ব্যাক্টেরিয়া ভোজ্য আঁশকে গাঁজানো শুরু করলে পেটে গ্যাস জমে।