রোদ থেকে ত্বকের সুরক্ষায় মনোযোগ দিন খাবারে

লাইফস্টাইল ডেস্ক
  ২২ মে ২০২৫, ২২:৩৪

মানুষ স্বভাবতই সৌন্দর্যের পূজারী। নিজের সৌন্দর্যকে ধরে রাখতে আমরা নানান ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করি। ত্বকের সুরক্ষায় সবচেয়ে ক্ষতিকর সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে বাঁচতেও তাই নানা ধরণের পণ্য বাজারে আছে। যা আমাদের ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির প্রভাব থেকে বাঁচতে সহায়তা করে। কিন্তু কোনো কোনো সানস্ক্রিনে অক্সিবেনজোন, অক্টিনোক্সেট, ও হোমোসালেটের মত ক্ষতিকর উপাদান থাকে।
এসব উপাদান সূর্যের তাপ থেকে ত্বককে রক্ষা করলেও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই সূর্যের তাপ থেকে ত্বককে রক্ষা করতে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া খুব জরুরি। প্রকৃতিতে পাওয়া যায় এমন বিভিন্ন খাবার খেয়ে আমারা সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির প্রভাব থেকে বাঁচতে পারি। চলুন জেনে নেয়া যাক এমনই কয়েকটি প্রাকৃতিক ফল যা সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে আমাদের ত্বককে রক্ষা করবে।

১. সিট্রাস ফল
লেবু, কমলা, মালটা, লেমনের মতো সিট্রাস ফলগুলো ভিটামিন সি-তে ভরপুর। দীর্ঘমেয়াদে ভিটামিন-সি এবং ভিটামিন-ই একসঙ্গে গ্রহণ করলে সানবার্ন হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। শুধু তাই নয়, সিট্রাস ফলে থাকে লিমোনেন নামক একটি উপাদান, যা ত্বকের ক্যান্সারের ঝুঁকি ৩৪ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের কোষগুলোকে ফ্রি র‍্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে, যা সানবার্নের সময় হয় এবং ত্বকের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

২. গাজর
গাজরের উপকারিতা চোখের জন্য আমরা সবাই জানি। তবে এটি ত্বককে রক্ষা করতেও সাহায্য করে। গাজর হচ্ছে বিটা-ক্যারোটিনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উৎস। এই বিটা-ক্যারোটিন সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বকের ক্ষতি কমাতে সাহায্য করে। ভিটামিন-ই’র সঙ্গে মিলে এটি সানবার্ন প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

৩. স্ট্রবেরি
স্ট্রবেরিতে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন-সি’র শক্তিশালী সংমিশ্রণ, যা ত্বককে সূর্য রশ্মি থেকে সুরক্ষা দেয়। এমনকি স্ট্রবেরি সানবার্ন হওয়া ত্বক নিরাময় করতেও সাহায্য করে। স্ট্রবেরিতে থাকা ট্যানিন উপাদান সানবার্নের জ্বালা উপশমে সহায়তা করে। যদি সানবার্নে আক্রান্ত হন, তবে কিছু স্ট্রবেরি চটকে নিয়ে সানবার্নে আক্রান্ত স্থানে লাগান। কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন । এটি আরাম দেবে।

৪. সবুজ চা বা গ্রিন টি
এক কাপ গ্রিন টি পান করলে আপনি পাচ্ছেন ক্যাটেচিন নামক উপাদান, যা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং সানবার্নের প্রদাহ ও দীর্ঘমেয়াদি সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এতে থাকা ট্যানিক অ্যাসিড সানবার্নের ব্যথা উপশমে কাজ করে এবং ইজিসিজি নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের কোষে রশ্মির জেনেটিক ক্ষতি প্রতিরোধে সহায়তা করে। প্রতিদিন মাত্র দুই কাপ গ্রিন টি পান করলেও সূর্য থেকে অতিরিক্ত সুরক্ষা পাওয়া যায়। একটি মজাদার সালাদ ড্রেসিং তৈরি করতে পারেন, যাতে থাকবে স্ট্রবেরি এবং গ্রিন টি।

৫. ডালিম
প্রাচীন মিশরীয় সময় থেকে ডালিমকে একটি নিরাময়কারী ফল হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে আসছে। এর বীজে থাকে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ডালিমে থাকা এলাজিক অ্যাসিড সূর্যের ইউভিএ এবং ইউভিবি রশ্মি থেকে কোষের ক্ষতি প্রতিরোধে সাহায্য করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ডালিম নির্যাস যখন সানস্ক্রিনের সঙ্গে ব্যবহার করা হয়, তখন এসপিএফ ক্ষমতা ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। এছাড়াও ডালিম গ্লুটাথায়োন নামক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বাড়ায়, যা ফ্রি র‍্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে ত্বককে সুরক্ষা দেয়।
গ্রীষ্মের আড্ডার জন্য এক গ্লাস ঠান্ডা ডালিম-যুক্ত গ্রিন টি তৈরি করে ফেলুন। এতে আপনি পাবেন ডালিম ও গ্রিন টি’র সম্মিলিত ত্বক-সুরক্ষার সুবিধা।

৬. কাঠবাদাম
কাঠবাদাম ভিটামিন-ই’র অন্যতম সেরা উৎস, যা সূর্যের আলো থেকে ত্বককে রক্ষা করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে। এতে কোয়ারসেটিনও থাকে, যা‌ সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে এবং কোলাজেন ভেঙে গিয়ে যে বলিরেখা সৃষ্টি হয় তা প্রতিরোধ করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ২০টি বাদামে থাকা সমপরিমাণ ভিটামিন-ই গ্রহণ করেছিলেন, তারা ইউভি রশ্মিতে সংস্পর্শে আসার পর অন্যদের তুলনায় কম সানবার্নে আক্রান্ত হন।
সৈকত বা সুইমিং পুলে যাওয়ার সময় বাদাম নিয়ে যান নাস্তা হিসেবে। চাইলে ঘরে তৈরি বাদামের মাখন ফল বা সবজির উপর লাগিয়েও খেতে পারেন।

৭. লাল আঙুর
আঙুরে থাকা ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট ত্বকের কোষে সৃষ্ট ক্ষতিকর রিঅ্যাকটিভ অক্সিজেন স্পিসিস গঠনের গতি কমায়, যা সানড্যামেজ, ত্বকের ক্যান্সার এবং কোষ ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত। আঙুরের বীজে থাকা প্রোঅ্যান্থোসায়ানিডিন ও অন্যান্য পলিফেনল সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি দ্বারা সৃষ্ট ত্বকের ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করে। এতে থাকা কোয়ারসেটিন ইউভি রশ্মির কারণে হওয়া অক্সিডেটিভ ডিএনএ ক্ষতি কমায় এবং প্রদাহ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

৮. পাতাযুক্ত সবজি
লেটুস, পালং শাকের মতো সবুজ পাতাযুক্ত সবজিতে থাকে লুটিন ও জিয়াজ্যান্থিন নামক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। পশুদের ওপর গবেষণায় দেখা গেছে, এই উপাদানগুলো সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির আলো দ্বারা সৃষ্ট কোষের বৃদ্ধিকে থামিয়ে দেয়। তাই প্রতিদিন বিভিন্ন ধরণের সালাদ খাওয়ার চেষ্টা করুন।

৯. টমেটো
টমেটো খেলে আপনি পাচ্ছেন লাইকোপেন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ক্যারোটিনয়েড, যা অতিরিক্ত সূর্যালোক থেকে তৈরি হওয়া ফ্রি র‍্যাডিকেল এবং সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির কারণে তৈরী প্রদাহ কমায়। টমেটো রান্না করলে লাইকোপেন আরও ভালোভাবে শরীরে প্রবেশ করে। একটি জার্মান গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন এক চতুর্থাংশ কাপ টমেটো পেস্ট অলিভ অয়েলের সঙ্গে ১০ সপ্তাহ ধরে খেয়েছিলেন, তারা ৩৫ শতাংশ কম সানবার্নে আক্রান্ত হন।

১০. তরমুজ
এই জনপ্রিয় গ্রীষ্মকালীন ফলেও প্রচুর পরিমাণে লাইকোপেন থাকে। যা এমনকি টমেটোর চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি।

১১. হলুদ
আয়ুর্বেদিক এবং চীনা প্রাচীন চিকিৎসাশাস্ত্রে হলুদ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ। গবেষণায় দেখা গেছে, হলুদ ত্বকের বাইরের স্তরকে ইউভিবি রশ্মির ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

১২. তিসির বীজ
তিসির বীজে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বককে সানবার্ন থেকে রক্ষা করে, সানবার্ন হলে প্রদাহ কমায়। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ জানিয়েছে, তিসির তেল সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে, ত্বককে আর্দ্র রাখে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

তথ্যসূত্র: সুপারফুড