উপমহাদেশের রন্ধনশৈলী ও প্রাকৃতিক চিকিৎসায় হলুদের ব্যবহার ঐতিহ্যবাহী বিষয়। ঘরোয়া রূপচর্চা থেকে শুরু করে নানা ভেষজ চিকিৎসায় হলুদ যেন এক অবিচ্ছেদ্য উপাদান। তবে এই হলুদের মধ্যে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও প্রদাহনাশক উপাদান কারকিউমিন, সেটা যদি নিয়মের বাইরে গিয়ে মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া হয়, তাহলে শরীরে নেমে আসতে পারে নানা বিপর্যয়।
চলুন জেনে নিই অতিরিক্ত হলুদ খেলে শরীরে যেসব ঝুঁকি তৈরি হতে পারে—
কিডনিতে পাথরের সম্ভাবনা বেড়ে যায়
হলুদে থাকা অক্সালেট নামের উপাদান শরীরে গিয়ে ক্যালসিয়ামের সঙ্গে মিশে তৈরি করতে পারে ক্যালসিয়াম অক্সালেট নামক কঠিন যৌগ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই যৌগ জমে কিডনিতে পাথর তৈরি করতে পারে। যাদের কিডনিতে আগে থেকেই সমস্যা রয়েছে বা পারিবারিকভাবে ঝুঁকি আছে, তাঁদের এই বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক থাকা জরুরি।
রক্ত জমাট বাঁধায় বিঘ্ন ঘটে
হলুদের প্রধান উপাদান কারকিউমিন রক্তে অণুচক্রিকার কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে। এর ফলে শরীরে কোনো কাটাছেঁড়া হলে রক্তপাত থামতে সময় লাগে বেশি। অস্ত্রোপচারের আগে বা পরে এই ধরনের পরিস্থিতি হতে পারে বিপজ্জনক। তাই রক্তক্ষরণজনিত ঝুঁকি থাকলে হলুদের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা আবশ্যক।
শরীরে আয়রনের শোষণ ব্যাহত হয়
যারা আগে থেকেই আয়রনের ঘাটতিতে ভুগছেন, তাদের জন্য অতিরিক্ত হলুদ হতে পারে মারাত্মক ক্ষতির কারণ। কারকিউমিন শরীরে আয়রনের শোষণপ্রক্রিয়াকে বাধা দেয়। ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়তে পারে, দেখা দিতে পারে ক্লান্তি, মাথা ঘোরা, এমনকি রক্তাল্পতার মতো সমস্যাও।
নিম্ন রক্তচাপ আরও কমে যেতে পারে
হলুদ রক্তনালিকে শিথিল করে এবং রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে, যা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য উপকারী। কিন্তু যাদের রক্তচাপ এমনিতেই কম থাকে, তাদের ক্ষেত্রে এটি হঠাৎ করে আরও নিচে নামিয়ে দিতে পারে। এতে মাথা ঘোরা, দুর্বলতা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
হজমের গোলযোগ
হলুদ হজমে সাহায্য করলেও অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে পেটে অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে দেখা দিতে পারে গ্যাস্ট্রিক। বিশেষ করে যারা আগে থেকেই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য এটি আরও ভয়াবহ হতে পারে।
হলুদ নিঃসন্দেহে একটি আশ্চর্য ভেষজ উপাদান, তবে সেটা তখনই উপকারী যখন তা গ্রহণ করা হয় পরিমিতভাবে। ‘ভালো জিনিস বেশি খেলেই ভালো’-এই ভুল ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে এখনই সাবধান হওয়া জরুরি। শরীরের চাহিদা বুঝেই গ্রহণ করুন হলুদ, তবেই মিলবে উপকার।
তথ্যসূত্র: হেলথলাইন