ছোট্ট একটি হাসি বাঁচাতে পারে জীবন

লাইফস্টাইল ডেস্ক
  ০৫ জুন ২০২৫, ২৩:২৪

পাকশী সেতুর কিনারে দাঁড়িয়ে খরস্রোতা পদ্মার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে লোনা। ভাবছে, ‘কেমন হতো যদি এই স্রোতে আমিও ভেসে যেতাম, দূরে-বহুদূরে।’ ঠিক এমন সময় কোত্থেকে ভেসে এলো একটা শিশুর গুনগুনানি। লোনা ঘুরে দেখলো ৫-৬ বছরের একটা শিশু খেলছে, গুনগুন করছে আর আপন মনেই হাসছে।
বিশেষ কোন অঙ্গভঙ্গি নয়, শুধুই একটা সরল, নিষ্পাপ হাসি। কিন্তু সেই এক মুহূর্তে লোনার ভেতরের সবকিছু যেন পাল্টে গেল। শিশুটির নির্মল, অকলুষিত হাসি দেখে নিজের অজান্তেই হেসে উঠল সে। লোনার মনে হলো পৃথিবীতে ভালো কিছু আছে, আর হয়তো একদিন সেও ভালো কিছুই খুঁজে পাবে। শিশুটি খেলা করতে করতে কিছুক্ষণের মধ্যে কোথায় যেন চলে গেল, কিন্তু রেখে গেল তার সেই উজ্জ্বল হাসি।
কোটেশন: অনেক মানুষের জীবনে একটি ছোট্ট হাসি কতটা প্রভাব ফেলতে পারে তা আমরা কখনোই বুঝতে পারবো না। - মাদার তেরেসা
গবেষণায় দেখা গেছে যে, চাপপূর্ণ পরিস্থিতিতে যারা জোর করে হলেও হাসেন, তারা দ্রুত নিজেকে সামলে উঠতে পারেন।
হাসি হচ্ছে আন্তরিকতা, আনন্দ এবং ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। হাসির অনেক ক্ষমতা আছে, এমনকি হাসি মানসিক চাপও দূর করতে পারে। হাসির অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে মেজাজ উন্নত করা, মানসিক চাপ কমানো এবং অন্যদের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করা। এটি আপনার চারপাশের মানুষদের হাসিখুশি রাখতেও সাহায্য করে, তাই আজ (৩১ মে) হাসি দিবসে হাসুন আরও বেশি মন খুলে।
একটি সুস্থ হাসির শক্তি কতোটা হতে পারে তা বিশ্বের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার উদ্দেশ্যে কমপ্যাসিওনেট ডেন্টালকেয়ারের ডাক্তার টিম স্টার্নম্যান এবং জিম ওয়াজডিলা ২০১৮ সালে জাতীয় হাসি দিবস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই দিবসের পিছনের ধারণা হল পরিস্থিতি যাই হোক না কেন সকলকে হাসতে উৎসাহিত করা, সেই সঙ্গে আনন্দ এবং ইতিবাচকতা ছড়িয়ে দেওয়া।
হাসির অনেক ক্ষমতা আছে, এমনকি হাসি মানসিক চাপও দূর করতে পারে।
হাসি এমন একটি জিনিস যার উপকার আমরা প্রতিদিন নিজের অজান্তেই ভোগ করি। যদিও মনে হতে পারে যে হাসি সাধারণত সুখের লক্ষণ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে হাসির প্রভাব আরও অনেক গভীর। তাহলে চলুন জেসিকা জামান-এর লেখায় জেনে নেওয়া যাক কী এমন শক্তি আছে হাসির-

১. হাসলে মন ভালো থাকে
যখন আপনি হাসেন, তখন আপনার মস্তিষ্ক এন্ডোরফিন হরমোন নিঃসরণ করে। এন্ডোরফিন হল প্রাকৃতিক ব্যথানাশক যা মানসিক চাপ কমাতে এবং আপনার মেজাজ ভালো করতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে ডোপামিন এবং সেরোটোনিন বৃদ্ধি পায়, যা আপনার উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। সুতরাং নিয়মিত হাসির চর্চা করুন।

২. মানসিক চাপ এবং রক্তচাপ কমায়
বর্তমানে আমরা মানব সভ্যতার সবচেয়ে ব্যস্ততম সময় পার করছি। যার ফলে কর্মব্যস্ততা, স্ট্রেস এখন আমাদের জীবনের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে গেছে। হাসি আমাদের কর্টিসল, স্ট্রেস হরমোন কমায়, যার ফলে রক্তচাপ এবং হৃদস্পন্দন কমে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, চাপপূর্ণ পরিস্থিতিতে যারা জোর করে হলেও হাসেন, তারা দ্রুত নিজেকে সামলে উঠতে পারেন।

৩. আপনাকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে
গবেষণায় পাওয়া গেছে, যারা হাসে তারা আরও আকর্ষণীয়, আত্মবিশ্বাসী এবং বিশ্বাসযোগ্য বলে বিবেচিত হয়। এই কারণেই প্রণয় থেকে শুরু করে চাকরির ইন্টারভিউ পর্যন্ত সামাজিক মিথস্ক্রিয়ায় হাসি একটি বিশাল ভূমিকা পালন করে। তাই নিজেকে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী এবং আকর্ষণীয় হিসাবে তুলে ধরতে হলে হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করুন।

৪. হাসি আপনাকে দীর্ঘজীবী হতে সাহায্য করতে পারে
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের হার্ভার্ড হেলথ পাবলিশিং অনুসারে, হাসির সঙ্গে সম্পর্কিত আশাবাদ। যা ক্যান্সার এবং সংক্রমণের কারণে অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। পিয়ার-রিভিউ জার্নাল প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সের একটি গবেষণা অনুসারে, যারা বেশি আশাবাদি তাদের আয়ু দীর্ঘ হয়। এই গবেষণায় দুটি বৃহৎ জনসংখ্যার গবেষণার তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, যেখানে মোট ৭১,৪০০ জন ব্যক্তিকে নিয়ে গবেষণা করা হয়েছিল এবং দেখা গেছে যে আশাবাদী পুরুষ এবং নারী উভয়ই দীর্ঘায়ু লাভ করেছেন, অর্থাৎ ৮৫ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে আছেন।
বিশ্বাস করুন বা নাই করুন, আমরা আসলে হাসিমুখে জন্মগ্রহণ করি। থ্রিডি আল্ট্রাসাউন্ড প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে, ডাক্তার এবং চিকিৎসাবিদরা সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন যে, গর্ভে শিশুরা হাসে। সংস্কৃতি এবং পরিবেশ নির্বিশেষে সবার ক্ষেত্রেই এটি সত্য, কারণ হাসি একটি মৌলিক এবং জৈবিক অভিন্ন মানবিক অভিব্যক্তি।