অনেকেই ভাবেন, শিশুদের আবার মানসিক সমস্যা কী? কিন্তু অনেকেরই হয়তো জানা নেই, বড়দের মতো ছোটদেরও হতে পারে নানা ধরনের মানসিক সমস্যা। হঠাৎ করেই যদি দেখেন আপনার সন্তান খুব অমনোযোগী হয়ে উঠেছে, স্কুলের কাজ সময় মতো শেষ করতে পারছে না, খেলাধুলাতেও মন নেই তাহলে বুঝতে হবে তার কোনো মানসিক সমস্যা হচ্ছে। হতে পারে পড়াশোনা বা খেলাধুলোয় আরও ভাল করার চাপে সে মনোসংযোগ হারিয়ে ফেলছে। শিশুরও মাঝেমধ্যে বলে মন ভালো নেই। তাদের আচরণেও বদল আসে। কিন্তু বড়রা অনেকসময়েই দুষ্টুমি ভেবে তা এড়িয়ে যান। ফলে পরবর্তী সময়ে গিয়ে নানারকম মানসিক সমস্যা বেড়ে যায়।
মনোবিদরা বলছেন, আগে ডিপ্রেশন, মেন্টাল স্ট্রেস এইসব ভারী শব্দগুলোর সঙ্গে মানুষ অতটা পরিচিত ছিল না। কিন্তু ইদানীংকালে শিশুদের মধ্যে মানসিক অবসাদ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
কী কী কারণে মনের চাপ বাড়ছে শিশুদের?
১. এখনকার সময়ে প্রতিযোগিতা অনেক বেড়ে গেছে, স্কুলে ও বাড়িতে সমানতালেই চাপ বাড়ছে শিশুদের। এর ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানসিক চাপ।
২. আগে শিশুরা অনেক বেশি খেলাধূলা করত, কিন্তু এখন স্কুলের বাইরে একস্ট্রাকারিকুলার অ্যাক্টিভিটি এতটাই বেশি করতে হয় যে বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা, খেলাধূলার সময় পায় না। ফলে শিশুদের মধ্যেও একাকীত্ব বাড়ছে।
৩. শিশুরা এখন অনেক বেশি ডিজিটাল মাধ্যমে অভ্যস্ত। সারাদিন ল্যাপটপ, মোবাইলে মুখ গুঁজে থাকছে। এর ফলে কম বয়স থেকেই এমন অনেক বিষয় জেনে যাচ্ছে যা শিশুদের জানার কথাই নয়।
৪. শিশুদের খাদ্যাভ্যাসেও বদল আসছে। যখন তখন খাওয়া, অপুষ্টিকর খাবার খাওয়ার ঝোঁকে ওজন বাড়ছে তাদের। যার ফলে তাদের শরীরের পুষ্টির সঙ্গে সঙ্গে মানসিক বিকাশেও ঘাটতি হচ্ছে।
গবেষণা বলছে, পাঁচ থেকে বারো বছরের শিশুদের মানসিক সমস্যা আগের চেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। এই বয়সের বাচ্চাদের মধ্যে ওসিডি, ডিপ্রেশন, প্যানিক অ্যাটাক, বাইপোলার ডিজ়অর্ডারের সমস্যা দেখা দিতে পারে নানা কারণে। স্কুলে হয়তো হেনস্থার শিকার হচ্ছে, বাড়ির পরিবেশ সুস্থ নয়, মা-বাবার মধ্যে সমস্যা, অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার, যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া ইত্যাদি। তবে মানসিক সমস্যার পিছনে সব সময়ে যে সুনির্দিষ্ট কারণ থাকবে, এমনটা না-ও হতে পারে। বাড়ি, স্কুলে কোথাও কোনও সমস্যা নেই, তা-ও শিশুর মনখারাপ, এমনটাও হতে পারে।
মানসিকভাবে শিশুদের ভালো রাখার দায়িত্ব অভিভাবকদেরই নিতে হবে। মানসিকতা, সন্তানের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে উৎসাহ এবং মানসিক চাপ কাটাতে সন্তানকে সাহায্য করতে হবে। মা-বাবাকে সন্তানের সঙ্গে সময় কাটাতে হবে। তার সঙ্গে খেলাধুলো করুন, ছবি আঁকুন। সাধারণত ছোটরা এই কাজগুলোর মধ্য দিয়েই নিজের মনের ভাব ফুটিয়ে তোলে। কোনও নেতিবাচক মন্তব্য, খারাপ কথা, অশালীন অঙ্গভঙ্গি শিশুদের সামনে না করাই ভালো। প্রতিদিন অন্তত এক পাতা করে গল্পের বই পড়ার একটা অভ্যাস শিশুদের মধ্যে তৈরি করান। মোবাইল গেম, ইলেকট্রনিক গ্যাজেট সরিয়ে ছবি আঁকতে দিন। প্রতিদিন একটা করে নতুন অভিজ্ঞতা লিখতে বলুন। এতে যেমন ওদের মানসিক বিকাশ হবে, তেমনি মেধাও বাড়বে।