বেশিক্ষণ পেটভরা অনুভূতি, মল নিষ্কাশন-সহ নানানভাবে দেহের উপকার করে আঁশ। সাধারণভাবে বলা হয় দৈনিক ৩০ গ্রাম আঁশ গ্রহণ করা প্রয়োজন। তবে বেশি পরিমাণে, দ্রুত গ্রহণ করলে বিপত্তি বাধতে পারে হজমতন্ত্রে।
এই বিষয়ে মার্কিন পুষ্টিবিদ মেলানি মার্ফি রিচার বলেন, “আমাদের দেহ ভালো পরিমাণ আঁশ সামাল দিতে পারে। তবে এই সময়ে খাদ্যাভ্যাসের কারণে যেহেতু অনেকের আঁশ গ্রহণের পরিমাণ কমে গেছে সেহেতু সমস্যা হলেও হতে পারে।”
অতিরিক্ত আঁশ গ্রহণের লক্ষণের মধ্যে রয়েছে-
“পেটে গ্যাসের সমস্যা হওয়ার সাথে আঁশের সম্পর্ক রয়েছে”- ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মন্তব্য করেন রিচার।
তিনি বলেন, “কম গ্রহণের অভ্যাস থাকলে পেটে আঁশ ভালো মতো হজম হয় না। বৃহদান্ত্রে যাওয়ার পর গাঁজানোর ফলে আঁশ থেকে গ্যাসের ও পেটফোলা ভাব তৈরি করে।”
মনে রাখতে হবে, যে ধরনের খাবার বেশিরভাগ সময় খাওয়া হয়, হজমতন্ত্র সেটাতে অভ্যস্ত হয় দ্রুত।
হজম তন্ত্রের অনিয়ম
আঁশ থেকে দু্ই ধরনের সমস্যা হতে পারে: ডায়রিয়া নয়তো কোষ্ঠকাঠিন্য।
রিচার ব্যাখ্যা করেন, “অনেক সময় বেশি গ্রহণের ফলে আঁশ হজম প্রক্রিয়াকে দ্রুত করে। যে কারণে ডায়রিয়া দেখা দেয়। আবার আঁশের বিপরীতে পর্যাপ্ত পানি পান না করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।”
কোনো কোনো আঁশ মল শক্ত করে দেয়। পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে তাই পর্যাপ্ত তরল পান করতে হবে।
পেটে ব্যথা
অতিরিক্ত আঁশ গ্রহণের ফলে পেটে ব্যথাও হয়।
রিচার ব্যাখ্যা করেন, “অতিরিক্ত আঁশ হজম প্রক্রিয়াকে দ্রুত করে। অন্ত্র স্বাভাবিকের চাইতে বেশি কাজ করার কারণে পেটে ব্যথা হয়। আবার মল জমিয়ে শক্ত করে ফেলতে পারে আঁশ। তখনও পেটে অস্বস্তি দেখা দেয়।”
বমিভাব
সাধারণভাবে হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে আঁশ। ফলে খাবার অনেকক্ষণ পেটে থাকে। যে কারণে খিদা কম লাগে। খাই-খাইভাব কমে।
রিচার বলেন, “একই কারণে অনেকসময় পেটে বেশিক্ষণ খাবার থাকার কারণে বমি বমি বা পেটগোলানো ভাব হতে পারে।”
অল্পতেই পিপাসাবোধ
দুই ধরনের আঁশ রয়েছে- দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয়।
রিচার বলেন, “দ্রবণীয় আঁশ অনেকটা স্পঞ্জের মতো, যা তরল শুষে নিয়ে পেট থেকে মলাশয় পর্যন্তু হজম প্রক্রিয়াতে ভূমিকা রাখে। এই কারণে পর্যাপ্ত পানি পান না করলে অনেক খাবার খাওয়ার পর পানি পানের ইচ্ছে বাড়ে।”
এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত তরল গ্রহণ না করলে পানিশূন্যতা সৃষ্টি হয়; যা থেকে দেহে শ্রান্তি কাজ করে।
এসব সমস্যা হলে পরিত্রাণের উপায়
পর্যাপ্ত পানি পান করার মাধ্যমে পেটে আঁশের সঞ্চালন প্রক্রিয়াকে সহজ করা যায়।
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে নড়াচড়া করা উপকারী। যেমন- হাঁটা, জগিং ইত্যাদি।
মালিশ করলেও উপকার মিলতে পারে। এক্ষেত্রে মালিশ করতে হবে ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদান্ত্রের সংযোগ স্থলে। রিচার জায়গাটা চিহ্নিত করতে গিয়ে জানান- নাভি ও পশ্চাতদেশের ডান দিকের হাড়ের মধ্যবর্তী জায়গাতে হাত দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মালিশ করলে পেট ব্যথায় আরাম পাওয়া যায়।
উষ্ণ সেঁক দিলে উপকার মেলে। এক্ষেত্রে পেটে ‘হিট প্যাড’ বা ‘হট ওয়াটার ব্যাগ’ ব্যবহার করলে অন্ত্রের পেশিগুলো শিথিল হয়। ফলে ব্যথা উপশমে কাজ করে।
হজমে উপকারী বিভিন্ন মসলা যেমন- আদা, মৌরি, পুদিনা বা ক্যামোমাইলে শেকড়ের রস পেটের চাপ, ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। এসবের চা তৈরি করে পান করলে হজমে সুবিধা হয়, জানান রিচার।