স্মৃতিভ্রংশ রোগের ঝুঁকি কমাতে করণীয়

লাইফস্টাইল ডেস্ক
  ১১ আগস্ট ২০২৪, ০৭:৫০

কোনো কিছু মনে করতে না পারা, পরিচিত মানুষদের না চেনা, স্থান কাল ভুলে যাওয়া- এরকম মানসিক সমস্যাকে বলা হয় স্মৃতিভ্রংশ বা ‘ডিমেনশা’। যা সাধারণত বয়স বাড়ার সাথে দেখা দিতে পারে।
এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্তত ২০ শতাংশ কমানো যায় খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে- এমটাই দাবি করেন বস্টন’য়ের ‘বিঘ্রাম অ্যান্ড উইমেন’স হসপিটাল’য়ের ‘চ্যানিং ডিভিশন অফ নেটওয়ার্ক মেডিসিন’য়ের সহকারী গবেষক ও এই গবেষণার প্রধান উহান লি।
তিনি সিএনএন ডটকম’য়ে দেওয়া এক ইমেইলের উত্তরে লেখেন, “মস্তিষ্কের সুস্থতার জন্য আমাদের এই গবেষণার ফলাফল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।” ‍
যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়া’তে অনুষ্ঠিত ‘২০২৪ আলৎঝাইমার’স অ্যাসোসিয়েশন ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স’য়ে উপস্থাপিত এই গবেষণাপত্রে জানানো হয়, যারা দৈনিক ১ আউন্স (২৮.৩৪ গ্রাম) বা সপ্তাহে ২.৩ আউন্স পরিমাণ (৬৫ গ্রাম) প্রক্রিয়াজাত লাল মাংস খেয়েছেন তাদের স্মৃতিভ্রংশ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে ১৪ শতাংশ।
আর যারা এই খাবারের পরিবর্তে বাদাম ও মটর খেয়েছেন তাদের ডিমেনশা’তে ভোগার ঝুঁকি কমতে দেখা গেছে ২০ শতাংশ।
পর্যালোচনার জন্য গবেষকরা ‘নার্সেস’ হেল্থ স্টাডি’র দেড় লাখ অংশগ্রহণকারীর তথ্য বেছে নেন।
‘প্রোসেস্ড রেড মিটস’ বা প্রক্রিয়াজাত লাল মাংসের মধ্যে রয়েছে- সসেজ, বেকন, হটডগস ইত্যাদি। এগুলো উচ্চমাত্রায় সোডিয়াম বা লবণ, নাইট্রেইটস এবং স্যাচুরেইটেড ফ্যাট থাকে।
বেশি পরিমাণে এই ধরনের খাবার কোলন বা মলাশয়ের ক্যান্সার, টাইপ টু ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায় বলে গবেষণায় বলা হয়।
“স্মৃতিভ্রংশ রোগের ঝুঁকি কমাতে অনেক কিছুই করা সম্ভব। আর সেটা হৃদরোগের হওয়ার কারণগুলো এড়ানোর মাধ্যমেই করা যায়”- সিএনএন ডটকম’য়ের প্রতিবেদনে মন্তব্য করেন বস্টন’য়ের হার্ভার্ড টি.এইচ. চ্যান স্কুল অফ পাবলিক হেল্থ’য়ের ‘এপিডেমিওলজি অ্যান্ড নিউট্রিশন’য়ের অধ্যাপক ডা. ওল্টার উইলেট।
খাদ্যাভ্যাস থেকে প্রক্রিয়াজাত এবং লাল মাংস কমানোর পন্থা
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ার সরল পন্থা হল প্রাণিজ খাবার কমিয়ে উদ্ভিজ্জ খাবার বেশি গ্রহণ করা।
এই বিষয়ে ক্যালিফোর্নিয়া’র ‘স্ট্যানফোর্ড প্রিভেনশন রিসার্চ সেন্টার’য়ের মেডিসিন’য়ের গবেষক অধ্যাপক ক্রিস্টোফার গার্ডনার বলেন, “হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে নির্দিষ্ট একটি খাদ্যাভ্যাসের ভালো-খারাপ প্রভাবের দিকে লক্ষ না দিয়ে বরং সার্বিক খাবারের দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।”
উদহারণ দিতে গিয়ে তিনি জানান, যেমন চিয়া বীজ হতে পারে খাদ্যাভ্যাসের একটি অংশ। এছাড়া উদ্ভিজ্জ খাবার বেশি রান্না করা, সবজি, পূর্ণ শষ্য, মটর, বাদাম, বীজ এই ধরনের খাবারগুলো স্বাস্থ্যকর।
পাশাপাশি লাল মাংস খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে। এর পরিবর্তে তৈলাক্ত মাছ খাওয়া বাড়ালে উপকার মিলবে বেশি। কারণ এতে থাকা ‘ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস’ মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নতিতে ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি চর্বিহীন মাংসের মধ্যে মুরগি বেছে নেওয়া যেতে পারে।
গার্ডনার আরও বলেন, “খুব সহজে খাদ্যতালিকায় মাংসের আধিক্য কমানো উপায় হল- সপ্তাহে প্রতিদিন মটর, পূর্ণ শষ্য ও সবজি দিয়ে খাবার তৈরি করা। স্বাদ বাড়াতে যোগ করা যায় নানান রকম মসলা।
আর সপ্তাহে দুয়েক দিন উদ্ভিজ্জ খাবারের সাথে অল্প পরিমাণ মুরগির মাংস যোগ করা যেতেই পারে।