টাইম ম্যাগাজিন এ বছর ‘কিড অব দ্য ইয়ার’ এর নাম ঘোষণা করেছে। বিজয়ী আর কেউ নয়, ১৫ বছর বয়সী কিশোর উদ্ভাবক হেমান বেকেলে। তার জন্ম ইথিওপিয়ায়। হেমান এমন একটি সাবান তৈরি করেছে, যা একেবারে প্রাথমিক পর্যায় থেকে ত্বকের ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
হেমান একেবারে ছোটবেলা থেকে সূর্যরশ্মির প্রভাব নিয়ে কাজ করছিল। দীর্ঘ মেয়াদে যাঁরা ঘরের বাইরে কাজ করেন, বিশেষ করে তাঁদের ওপর অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব কেমন, তা নিয়ে বিস্তর গবেষণা তার পড়া ছিল। তত দিনে তিনি ত্বকের ক্যানসার প্রতিরোধী ক্রিম ইমিক্যুইমোড সম্পর্কেও জানত। মাত্র ৪ বছর বয়সে সে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসে। নতুন দেশে প্রথম বড়দিনে হিম্যান একটা ‘কেমিস্ট্রি সেট’ উপহার পান। সেখানে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড, অর্থাৎ সাবানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদানও ছিল। এসব নাড়াচাড়া করতে গিয়েই হিম্যান রাসায়নিক বিক্রিয়া, প্রতিক্রিয়ার ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে পারে।
টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হেমান বলে, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এসে আমি সূর্যরশ্মির মারাত্মক ক্ষতিকর দিক; যেমন ত্বকের ক্যানসার নিয়ে আরও বেশি আগ্রহী হই। আমি আসলে ছোটবেলা থেকেই ত্বকের ক্যানসার নিয়ে কৌতূহলী ছিলাম। এই বিষয়ে নিজেও গবেষণা করছিলাম। এ নিয়ে কী গবেষণা হচ্ছে, সেগুলোর খোঁজখবর রাখতাম।’
হেমান মূলত ইমিক্যুইমোড ওষুধটিকে সাধারণের মধ্যে কম খরচে ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছিল। ভাবতে ভাবতে মাথায় আসে, ইথিওপিয়ায় যাঁরা লম্বা সময় কড়া রোদে কাজ করেন, তাঁরা সাধারণত গোসলের সময় সাবান ব্যবহার করেন। তাই কিশোর হেমান বেকেলের মনে হয়, ইমিক্যুইমোড ওষুধের মূল উপাদানগুলোকেই যদি কম খরচে নিয়মিত ব্যবহার্য সাবানের ভেতর দেওয়া যায়, তাহলে সাধারণ মানুষ তা স্বচ্ছন্দে ব্যবহার করতে পারবেন।
এই গবেষণা করতে গিয়েই ১৪ বছর বয়সী হেমান দেখে, ইমিক্যুইমোড ক্রিম ত্বকের টিউমারকে ধ্বংস করতে সক্ষম। আর সাবানে এসব উপাদান যেভাবে ব্যবহার করা হয়, তাতে তা আরও কার্যকার হয়ে ওঠে। এই সাবান ব্যবহারে প্রাথমিক অবস্থা থেকেই ত্বকের ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব।
গত বছর হেমানের এই প্রকল্প ‘থ্রি এম (মিনোসেটা মাইনিং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি) ইয়ং সায়েন্টিস্ট চ্যালেঞ্জ: ২০২৩’ ও ‘অ্যামেরিকা’স টপ ইয়ং সায়েন্টিস্ট’ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়। ২ দফায় পায় ২৫ হাজার ও ৪০ হাজার ডলারের (প্রায় ৩০ লাখ ও ৪৭ টাকা) অনুদান।
ত্বকের ক্যানসারের ওপর কাজ করতে গিয়ে হেমান বেকেল এর কারণ হিসেবে ৫টি বিষয়ের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। তার মধ্যে প্রথমটি হলো সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি। হেমানের মতে, মানুষের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসের কারণেও ত্বকের ক্যানসার হতে পারে। বিশেষ করে পছন্দের খাবারের তালিকায় ভাজাপোড়া, তেল চর্বিজাতীয় খাবার থাকলেও তা ত্বকে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
স্যালিসিলিক অ্যাসিড, গ্লাইকোলিক অ্যাসিড ও ট্রেটিনোইন—ত্বকের ক্যানসার প্রতিরোধী এসব উপাদান রয়েছে হেমানের সাবানে। সাবানটি ত্বকের জন্য আরও উপযোগী করতে তাতে ময়েশ্চারাইজার, নারকেল তেল, সুগন্ধিসহ আরও নানা কিছু ব্যবহার করা হয়েছে। হেমানের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল এসব উপাদান ব্যবহার করে সাবানটিকে জমাট বাঁধানো ও ব্যবহার উপযোগী করে তৈরি করা। ২০২৮ সালের ভেতরে এই সাবান বাণিজ্যিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইথিওপিয়ার বাজারে আসতে চলেছে।