ইসলামে ঈমানের পর নামাজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ৮২ বার সরাসরি নামাজের কথা বলেছেন। নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে বহু হাদিস বর্ণিত রয়েছে। সুরা বাকারার শুরুতে মুত্তাকিদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হিসেবে ঈমান, নামাজ আদায় ও জাকাত প্রদানের কথা উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা বলেন, এই সেই কিতাব, যাতে কোন সন্দেহ নেই, মুত্তাকিদের জন্য হিদায়াত। যারা গায়েবের প্রতি ঈমান আনে, নামাজ আদায় করে এবং আমি তাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। (সুরা বাকারা: ৩, ৪) আরেক আয়াতে সব মুমিনদের ওপর নামাজ ফরজ উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা বলেন, নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করা মুমিনদের জন্য অবশ্যকর্তব্য। (সুরা নিসা: ১০৩)
কাফের ও মুমিনের মধ্যে পার্থক্য হলো নামাজ। কাফের নামাজ আদায় করে না, মুমিন নামাজ আদায় করে। একজন প্রকৃত মুমিন ব্যক্তি কখনও নামাজ ছেড়ে দিতে পারে না। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি নবিজিকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতে শুনেছি, বান্দা এবং শিরক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে নামাজ পরিত্যাগ করা। (সহিহ মুসলিম: ৮২) অর্থাৎ নামাজ পরিত্যাগ করলে বান্দা কুফরের কাছাকাছি পৌঁছে যায়।
নামাজ আদায় জান্নাতে যাওয়ার অন্যতম প্রধান উপায়। নামাজ জান্নাতের চাবি। আর নামাজ ত্যাগ জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, (জাহান্নামীদের প্রশ্ন করা হবে) কিসে তোমাদেরকে জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করাল? তারা বলবে, ‘আমরা সালাত আদায়কারীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না’। (সুরা মুদ্দাসসির: ৪২, ৪৩)
কোরআনের আরেক জায়গায় নামাজে অলসতা বা অমনোযোগিতা এবং নামাজে ইখলাস না থাকাকেও জাহান্নামের শাস্তি ভোগের কারণ বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, সেই সালাত আদায়কারীদের জন্য দুর্ভোগ, যারা নিজেদের নামাজে অমনোযোগী, যারা লোক দেখানোর জন্য তা করে। (সুরা মাউন: ৪-৬)
আর নামাজ আদায় আখেরাতে মুক্তি ও জান্নাত লাভের উপায়। উবাদা ইবনে সামিত (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতে শুনেছি, আল্লাহ তাআলা বান্দার ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি এই নামাজগুলো যথাযথভাবে আদায় করবে এবং অবহেলাবশত তাতে কোনো ত্রুটি করবে না, তার সঙ্গে আল্লাহ তাআলার চুক্তি হয়েছে যে তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (সুনানে আবু দাউদ: ১৪২০)
একজন মুমিনের মানসিক ভারসাম্য যতক্ষণ ঠিক থাকে, যতক্ষণ সে ইশারায় নামাজ আদায় করতে পারে, ততক্ষণ যে কোনো অবস্থায় তার ওপর নামাজ আদায় করা ফরজ। মুমিনের পুরো শরীর যদি অকেজো হয়ে যায়, সে যদি শুধু মাথা দিয়ে ইশারা করতে পারে, তখনও তার কর্তব্য মাথার ইশারায় নামাজ আদায় করা। মিসওয়ার ইবন মাখরামা (রহ.) থেকে বর্ণিত, যে রাতে ওমর ইবনে খাত্তাবকে (রা.) (বিখ্যাত সাহাবি ও ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা) ছুরিকাঘাত করা হয়, সে রাতেও ওমরকে (রা.) ফজরের নামাজের জন্য জাগানো হয়। ওমর (রা.) বলেন, আমি এই অবস্থায়ও নামাজ পড়ব। যে ব্যক্তি নামাজ ছেড়ে দেয়, ইসলামে তার কোনো অংশ নেই।’ ওমরের (রা.) জখম থেকে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছিলো, এই অবস্থায়ই তিনি নামাজ পড়লেন। (মুয়াত্তা মালেক: ৮১)
আল্লাহ আমাদের সবাইকে আমৃত্যু পূর্ণ ইখলাসের সাথে, পূর্ণ মনোযোগের সাথে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের তওফিক দান করুন! আমিন