অকারণে বা তুচ্ছ কারণে কারো জন্য বদদোয়া করা, অভিশাপ দেওয়া নিন্দনীয় কাজ। আমাদের নবি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার শত্রুদের জন্যও বদদোয়া করতেন না বা তাদের অভিশাপ দিতেন না। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, একবার নবিজিকে (সা.) তার কোনো সাহাবি বলেছিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! (সা.) মুশরিকদের বিরুদ্ধে বদদোয়া করুন! তিনি বললেন, আমাকে অভিশাপদাতা হিসেবে পাঠানো হয়নি, রহমত হিসেবে পাঠানো হয়েছে। (সহিহ মুসলিম)
সুতরাং নিজের শত্রু বা ইসলামের শত্রুদের জন্যও বদদোয়া না করে বা অভিশাপ না দিয়ে বরং তাদের জন্য হেদায়াতের দোয়া করা উচিত। আর কোনো মুসলমানকে তো কোনোভাবেই অভিশাপ দেওয়া যাবে না। মুসলমানদেরকে অভিশাপ দিতে নিষেধ করে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পরের জন্য আল্লাহ তাআলার লানত, তার গজব ও জাহান্নামের বদদোয়া কোরো না। (সুনানে তিরমিজি)
মুসলমান কোনো গুনাহ বা অপরাধ করলেও তাকে অভিশাপ দেওয়া যাবে না বা তার জন্য বদদোয়া করা যাবে না। বরং তার হোদায়াত ও সংশোধনের জন্য দোয়া করতে হবে। তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একবার এক সাহাবি নবিজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সামনে এক নেশাগ্রস্ত লোকের ব্যাপারে বললেন, আল্লাহ তাকে অপমানিত করুন! তার কথা শুনে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, নিজের ভাইয়ের বিরুদ্ধে শয়তানের সাহায্যকারী হবেন না। বরং বলুন, হে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন, তার ওপর রহম করুন। (সুনানে আবু দাউদ)
অভিশাপ দেওয়া ও বদদোয়া করা অনেকের অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায়। তারা কথায় কথায় অভিশাপ দেয়, বদদোয়া করে। বেশ কিছু হাদিসে এ স্বভাবের কঠোর নিন্দা করা হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, কোনো মুমিন ব্যক্তি মানুষের ভুলত্রুটি নিয়ে কটাক্ষকারী, অভিসম্পাতকারী, অশ্লীলভাষী ও অভদ্র হতে পারে না। (সুনানে তিরমিজি) আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, অধিক অভিসম্পাতকারীরা কেয়ামত দিবসে সাক্ষী ও সুপারিশকারী হতে পারবে না। (সহিহ মুসলিম)
অহেতুক অভিশাপ দিলে যাকে অভিশাপ দেওয়া হয়েছে তার নয়, বরং অভিশাপদাতারই ক্ষতি হয়। অভিশাপ অভিশাপদাতার ওপর ফিরে আসে। আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতে শুনেছি, যখন বান্দা কোন বস্তুকে অভিসম্পাত করে, তখন এ অভিসম্পাত আকাশের দিকে উঠে যায়। আর এ অভিসম্পাতের জন্য আকাশের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। অতঃপর ওই অভিসম্পাত জমিনের দিকে প্রত্যাবর্তন করে। তার জন্য জমিনের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। অতঃপর তা ডানদিক-বামদিকে যায় এবং যখন সেখানেও কোন রাস্তা না পায়, শেষ পর্যন্ত সে ব্যক্তি বা বস্তুর দিকে প্রত্যাবর্তন করে, যাকে অভিসম্পাত করা হয়েছে। যদি সে অভিসম্পাতের উপযুক্ত হয়, তবে তার ওপর আপতিত হয়। তা না হলে অভিসম্পাতকারীর দিকেই ফিরে আসে। (সুনানে আবু দাউদ)