যে কোনো বিপদ আপদে মুমিনের কর্তব্য হলো ধৈর্য ধারণ করা ও আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা। আল্লাহই মুমিনের চূড়ান্ত ভরসাস্থল। দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার পাশাপাশি মুমিনের ঈমানও প্রকাশ পায়। আল্লাহর প্রতি তার ভরসা ও নির্ভরতা প্রকাশ পায়। বিনয় ও অহংকারহীনতা প্রকাশ পায়।
আল্লাহ তাআলা কোরআনে দোয়া করার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, তোমাদের রব বলেন, তোমরা আমার কাছে দোয়া কর, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব। যারা অহংকারবশত আমার ইবাদত হতে বিমুখ তারা অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে। (সুরা গাফির: ৬০)
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে এসেছে, বিপদের সময় নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ দোয়াটি পড়তেন,
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ الْعَظِيمُ الْحَلِيمُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ رَبُّ السَّمَوَاتِ، وَرَبُّ الأَرْضِ، وَرَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল আযীমুল হালীম লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাববুল আরশিল আযীম লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাববুস সামাওয়াতি ওয়া রাববুল আরদি ওয়া রাববুল আরশিল করীম।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন ইলাহ নেই, যিনি অতি উচ্চ মর্যাদাপূর্ণ ও অশেষ ধৈর্যশীল, আরশে আজিমের রব। আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আসমান জমিনের রব ও সম্মানিত আরশের মালিক। আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। (সহিহ মুসলিম)
যে কোনো বিপদে নবিজিরকে (সা.) অনুসরণ করে আমরা এ দোয়াটি পড়তে পারি।
এ ছাড়া বিপদ-আপদে কোরআনে বর্ণিত দোয়া ইউনুস পড়েও আমরা আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করতে পারি যে দোয়া পড়ে আল্লাহর নবি ইউনুস (আ.) কঠিন বিপদ থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। দোয়াটি হলো,
لَّاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنۡتَ سُبۡحٰنَكَ اِنِّیۡ كُنۡتُ مِنَ الظّٰلِمِیۡنَ
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নী কুনতু মিনাজ-জ্জালিমীন
অর্থ: আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আপনি পবিত্র, মহান। নিশ্চয় আমি ছিলাম জালিম।
কোরআনে তার এই দোয়া এবং তাকে মুক্তি দেওয়ার ঘটনা বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা বলেন, স্মরণ করো যুন-নূনের (ইউনুস আ.) কথা, যখন সে রাগান্বিত অবস্থায় চলে গিয়েছিল এবং মনে করেছিল যে, আমি তার ওপর ক্ষমতা প্রয়োগ করব না। তারপর সে অন্ধকার থেকে ডেকে বলেছিল, ‘আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। আপনি পবিত্র মহান। নিশ্চয় আমি ছিলাম জালিম’। আমি তখন তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম এবং দুশ্চিন্তা থেকে তাকে উদ্ধার করেছিলাম। এভাবেই আমি মুমিনদের উদ্ধার করে থাকি। (সুরা আম্বিয়া: ৮৭, ৮৮)
বান্দা দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা খুশি হন এবং কল্যাণকর দোয়ার প্রতিদান বান্দা অবশ্যই লাভ করে। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যখন কোনো মুমিন ব্যক্তি এমন দোয়া করে যে দোয়াতে কোনো পাপ ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয় নেই, তাহলে আল্লাহ তিন পদ্ধতির কোনো এক পদ্ধতিতে তার দোয়া কবুল করে নেন; হয়তো যে দোয়া সে করেছে তা ওইভাবেই কবুল করেন, তার দোয়ার প্রতিদান আখেরাতের জন্য সংরক্ষণ করেন অথবা এ দোয়ার মাধ্যমে তার ওপর আগত কোনো বিপদ তিনি দূর করে দেন। (বুখারি ফিল আদাবিল মুফরাদ)