রাগ করে কথা বন্ধ রাখার ব্যাপারে যা বলেছেন নবিজি (সা.)

ধর্ম ডেস্ক
  ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:৪১

বন্ধু, প্রতিবেশী, সহকর্মীসহ যে কোনো মুসলমানের সঙ্গে স্থায়ীভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করা ইসলামে হারাম। কোনো কারণে কারো সাথে মনোমালিন্য হলে, কারও ওপর রাগ বা অভিমান করলে যত দ্রুত সম্ভব রাগ ভেঙে কথা বলা উচিত। রাগ বা অভিমান করে সর্বোচ্চ তিনদিন কথা বন্ধ রাখা যেতে পারে। তিনদিনের বেশি কথা বন্ধ রাখা নাজায়েজ। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, কোনো মুসলমানের জন্য এটা বৈধ নয় যে সে তার ভাইয়ের সঙ্গে তিনদিনের বেশি সময় সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে থাকবে। (সহিহ বুখারি: ৬০৭৬)

কোনো বিষয়ে মনোমালিন্য হলে যে প্রথম সালাম দেয় বা অভিমান ভাঙাতে এগিয়ে আসে, সে আল্লাহ তায়ালার কাছে উত্তম হিসেবে বিবেচিত হয়। নবিজি (সা.) বলেছেন, কোনো ব্যক্তির জন্য এটা বৈধ নয় যে সে তার ভাইয়ের সঙ্গে তিনদিনের বেশি এমনভাবে সম্পর্ক ছিন্ন রাখবে যে দুজনের দেখা হলেও দুজন দুদিকে মুখ ফিরিয়ে রাখবে। তাদের মধ্যে যে আগে সালাম দেবে সে-ই উত্তম ব্যক্তি। (সহিহ বুখারি: ৬০৭৭)

তবে বিশেষ ক্ষেত্রে কাউকে তার গুনাহের ব্যাপারে সতর্ক করার জন্য তিনদিনের বেশি কথা বন্ধ রাখা জায়েজ। যেমন আল্লাহর রাসুল (সা.) তাবুক যুদ্ধে না যাওয়া তিন সাহাবির সঙ্গে কথা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাদের তওবা কবুল করা পর্যন্ত প্রায় ৫০ দিন সাহাবিরা তাদের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ রেখেছিলেন। ওই তিন সাহাবির তওবা কবুল হওয়ার ঘোষণা নিয়ে কোরআনের এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছিল,

وَّ عَلَی الثَّلٰثَۃِ الَّذِیۡنَ خُلِّفُوۡا حَتّٰۤی اِذَا ضَاقَتۡ عَلَیۡهِمُ الۡاَرۡضُ بِمَا رَحُبَتۡ وَ ضَاقَتۡ عَلَیۡهِمۡ اَنۡفُسُهُمۡ وَ ظَنُّوۡۤا اَنۡ لَّا مَلۡجَاَ مِنَ اللّٰهِ اِلَّاۤ اِلَیۡهِ ثُمَّ تَابَ عَلَیۡهِمۡ لِیَتُوۡبُوۡا اِنَّ اللّٰهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِیۡمُ

আল্লাহ তাআলা সে তিনজনের তওবা কবুল করলেন, যাদের বিষয়টি স্থগিত রাখা হয়েছিল। এমনকি পৃথিবী প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল এবং তাদের নিকট তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল। আর তারা নিশ্চিত বুঝেছিল যে, আল্লাহর আজাব থেকে তিনি ছাড়া কোনো আশ্রয়স্থল নেই। তারপর তিনি তাদের তওবা কবুল করলেন, যাতে তারা তওবায় স্থির থাকে। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। (সুরা তওবা: ১১৮)

কোনো মুসলমান ভাইয়ের প্রতি অন্তরে শত্রুতা বা বিদ্বেষ পোষণ করা গুনাহের কাজ। আল্লাহ রাসুল (সা.) বলেন, প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার আল্লাহর দরবারে বান্দার আমল পেশ করা হয়। আল্লাহ সব মুসলমানকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু যে ব্যক্তির তার ভাইয়ের সঙ্গে শত্রুতা বা বিদ্বেষ থাকে তার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন, তাদের ছেড়ে দাও যতক্ষণ না তারা মিলিত হয়। (সহিহ মুসলিম: ২৫৬৫)
আরেকটি বর্ণনায় আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আনাসকে (রা.) বলেছেন, তুমি যদি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তোমার অন্তরে কারও প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ না রেখে কাটাতে পারো তাহলে তাই কর। এটা আমার সুন্নত। যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে জীবিত করে (অনুসরণ করে ও ভালোবাসে) সে আমাকে ভালোবাসে, আর যে আমাকে ভালোবাসে সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে। (সুনানে তিরমিজি: ২৬৭৮)