একজন মানুষকে বিচার করার ক্ষেত্রে সুন্দর আচার-ব্যবহার ও নেক চরিত্র সাধারণ মানদণ্ডে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ইসলামের মানদণ্ডেও এটি গুরুত্বপূর্ণ। নবিজি (সা.) উত্তম ও সুন্দর চরিত্রের অধিকারী মুসলমানদের সর্বোত্তম মুসলমান গণ্য করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আপনাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যে চরিত্রের দিক দিয়ে উত্তম। (সহিহ বুখারি: ৩৫৫৯, সহিহ মুসলিম: ২৩২১)
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে উত্তম চরিত্রের ব্যক্তিদের পছন্দ করার কথা উল্লেখ করে নবিজি (সা.) বলেন, তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি আমার কাছে খুব প্রিয়, যার চরিত্র ভালো। (সহিহ বুখারি: ৩৭৫৯)
আরেকটি বর্ণনায় আয়েশা (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই মুমিন ব্যক্তি তার ভালো চরিত্রের মাধ্যমে দিনে রোজা পালনকারী ও রাতে তাহাজ্জুদগুজারীর সমান মর্যাদা লাভ করতে পারে। (সুনানে আবু দাউদ: ৪৭৯৮)
মানুষের সাথে হাসিমুখে দেখা করা, হাসিমুখে কথা বলা সাধারণ ভদ্রতা ও উত্তম আচরণের অন্তর্ভুক্ত। ইসলামে এটিকেও নেক আমল গণ্য করা হয়েছে। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, প্রতিটি নেক আমলই সদকা আর তোমার কোনো ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা এবং কোন ভাইয়ের পাত্রে নিজের বালতি থেকে পানি ঢেলে দেয়াও নেক আমলের অন্তর্ভুক্ত। (সুনানে তিরমিজি: ১৯৭০)
আবু জর গিফারি (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে দেখা করা সদকা, নেক কাজের নির্দেশ, অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করা সদকা, পথহারা প্রান্তরে কোন মানুষকে পথ বলে দেওয়া, কোন অন্ধ বা দুর্বল দৃষ্টিশক্তির মানুষকে সাহায্য করা সদকা, পথের কাঁটা বা হাড় সরিয়ে দেওয়া, নিজের বালতি থেকে অন্য কোন ভাইয়ের বালতিতে পানি দিয়ে ভরে দেওয়াও সদকা। (সুনানে তিরমিজি: ১৯৫৬)
আরেকটি বর্ণনায় অন্যের সাথে হাসিমুখে কথা বলার মতো নেক আমলকে তুচ্ছ ভাবতে নিষেধ করে নবিজি (সা.) বলেছেন, তোমরা কোনো ভালো কাজকেই তুচ্ছ ভেবো না; যদি সেটা তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে দেখা করাও হয়। (সহিহ মুসলিম: ২৬২৬)
নবিজির (সা.) চেহারায় বেশিরভাগ সময়ই মুচকি হাসি লেগে থাকতো। তিনি সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলতেন। আবদুল্লাহ ইবনে হারিস ইবনে জাযআ (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চেয়ে বেশি মুচকি হাসতে আর কাউকে দেখিনি। (সুনানে তিরমিজি: ৩৬৪১
হজরত জারির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন, ইসলাম গ্রহণ করার পর থেকে কখনও আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাকে তার কাছে যেতে বাধা দেননি এবং যখনই তিনি আমার দিকে তাকাতেন, তখনই মুচকি হাসতেন। (সহিহ বুখারি: ৩০৩৫)
অন্যকে তুচ্ছ ভেবে গোমড়া মুখে কথা বলা, অহংকার করে গাল ফুলিয়ে রাখা অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, তুমি মানুষের প্রতি অবজ্ঞাভরে তোমার গাল ফুলিয়ো না এবং জমিনে উদ্ধতভাবে বিচরণ করো না; নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা কোনো দাম্ভিক, অহংকারীকে পছন্দ করেন না। (সুরা লোকমান: ১৮)