এবাদত বন্দেগির মধ্য দিয়ে পালিত হলো পবিত্র শবে বরাত

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩:০৯

বাসা-বাড়ির পাশাপাশি মসজিদে-মসজিদে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ইবাদত বন্দেগি আর দোয়ার মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী পালিত হয়েছে পবিত্র শবে বরাত। রাতভর রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদে নফল এবাদত, কোরআন তিলাওয়াত ও দোয়ার পাশাপাশি ইস্তেগফারের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন মুসল্লিরা। এই রাতে অনেকেই মৃত আত্মীয়-স্বজনের কবরও জিয়ারত করেছেন। 
মুসলমানদের শবে বরাত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাত। আরবি ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ আমাদের এ অঞ্চলে শবে বরাত নামে প্রসিদ্ধ। ‘শবে বরাত’ এই শব্দ-যুগল ফারসি ভাষা থেকে এসেছে। ‘শব’ মানে রাত, ‘বরাত’ মানে মুক্তি। আরবি শব্দ ‘বারাআত’র অর্থও মুক্তি। তাই শবে বরাত অর্থ হবে মুক্তির রাত। প্রতি বছর হিজরি বর্ষের শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটি ‘শবে বরাত’ হিসেবে পালিত হয়।
হাদিস শরিফে রাতটিকে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বা ‘শাবান মাসের মধ্য দিবসের রজনী’ আখ্যায়িত করা হয়েছে। সঙ্গে এও বলা হয়েছে– এটি এমন একটি রাত, যে রাতে বান্দাকে তার প্রতিপালক গোনাহ থেকে মুক্তি দিয়ে ক্ষমা করে দেন। এখান থেকেই ফার্সিতে এটিকে ‘শবে বরাত’ আখ্যা দেওয়া হয়, অর্থাৎ মুক্তির রাত।
নফল এবাদত, কোরআন তিলাওয়াত ও দোয়ার পাশাপাশি ইস্তেগফারের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন মুসল্লিরা (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন)
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমেও দিনটি উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা)। শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাতভর জাতীয় মসজিদে ওয়াজ, দোয়া মাহফিল, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত ও হামদ নাতসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। ভোরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানমালার সমাপ্তি হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মুহিবুল্লাহিল বাকী।
এদিন সন্ধ্যায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে ‘লাইলাতুল বরাতের শিক্ষা ও করণীয়’ বিষয়ে ওয়াজ করেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। পরে লাইলাতুল বরাতের ফজিলত ও তাৎপর্য বিষয়ে ওয়াজ করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আ. ছালাম খান।
এছাড়া রাতে ‘লাইলাতুল বরাতের’ ফজিলত ও তাৎপর্য তুলে ধরে ওয়াজ করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর ও তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) ড. খলিলুর রহমান মাদানি। পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে লাইলাতুল বরাতের শিক্ষা ও করণীয় সম্পর্কে ওয়াজ করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর ও চরমোনাই আহসানাবাদ রশিদিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সৈয়দ মোহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানি। নফল ইবাদতের গুরুত্ব ও ফজিলত নিয়ে ওয়াজ করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মিজানুর রহমান।
শবে বরাত উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদে রাতভর ভিড় লেগেই ছিল। মুসল্লিরা উৎসবমুখর পরিবেশে নফল এবাদতে মশগুল হন। গভীর রাতে এবাদতে মগ্ন হয়ে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে পাপ মোচনের আকুতি জানান কেউ কেউ।
প্রতিবছরই এই দিনটিকে কেন্দ্র করে কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবক আতশবাজি, পটকা ফোটানোসহ নানা ধরনের বিশৃঙ্খল কর্মকাণ্ডে সংঘটিত করে উল্লেখ করে এবছর তা ঠেকাতে আগেই বাড়তি নজরদারি ব্যবস্থা করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
সংস্থাটির কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী এক গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে জানান, শবে বরাতের পবিত্রতা রক্ষা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঢাকা মহানগর এলাকায় সকল প্রকার আতশবাজি, পটকা ফোটানো, বিস্ফোরক দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হলো। এই নির্দেশনা কার্যকর করতে ঢাকা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ, কবরস্থান এবং প্রধান সড়কগুলোতে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়।