‘বাবার কথা ও ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠলে আমার আর খেলাধুলায় মন বসে না। তাই পড়ালেখা করে মানুষ হবার জন্য দিনরাত পড়াশোনা করি। আমি মাদ্রাসা লাইনে সর্ব্বোচ্চ লেখাপড়া করতে চাই কিন্তু আমাদের টাকা নেই। আমার বয়স যখন আড়াই বছর, তখন আমার বাবা মারা যায়। মা কষ্ট করে ৪ ভাই-বোন কে মানুষ করেছে। আমি বড় হয়ে মায়ের কষ্ট দূর করতে চাই।’
এভাবে কথাগুলো বলছিলেন নকলা উপজেলার ৭ বছরের শিশু হাফেজ মাহদী হাসান ওয়াজকুরুনী। সোমবার (৬ নভেম্বর) মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ মাথায় পাগড়ি পরানোর পর থেকে আলোচনায় ছিল শিশুটি। দূর-দূরান্ত অনেকে তাকে দেখতে আসছেন।
মাত্র ছয় মাসে পবিত্র কোরআনের হাফেজ হয়েছেন এতিম এই শিশুটি। তার বাড়ি শেরপুরের নকলা উপজেলার উত্তর কায়দা গ্রামে। মাত্র আড়াই বছর বয়সে তার বাবা হাবিব মিয়ার মৃত্যু হয়। এরপর তার পড়াশোনার দায়িত্ব নেন নকলা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন নকলা দারুল উলুম মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আনছারুল্লাহ তারা। তিনি বলেন, ‘আমি শিশুটির মেধা দেখে আকৃষ্ট হয়ে তার দায়িত্ব নিয়েছি। আমি তার উচ্চশিক্ষার জন্য যতটুকু সম্ভব সহায়তা করব।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার মা বলেন, ‘স্বামী মরার পর আমি খুব অসহায় অবস্থায় আছি। ভিটা ছাড়া আমার আর কিছু নেই। এক মেয়ে ও এক ছেলেকে আলাদা দুটি মাদ্রাসায় খরচ দিয়ে পড়াশুনার ব্যবস্থা করেছিছ। তা নাহলে তাদের এখনি কাজে নামতে হতো। অপর ছেলে পড়ালেখা করতে না পাড়ায় দোকানে কাজ করে।’ তিনি বলেন, ‘আমার এই ছেলেটা অনেক মেধাবী। তাই সরকার বা বিত্তবানরা এগিয়ে এলে পড়াশোনা শেষ করতে পারতাম।’
মাহদী হাসানের দুলাভাই বলেন, ‘মাহদী শুধু পড়ালেখায় মেধাবী নন, অসম্ভব সুন্দর তার কণ্ঠ। সে বাংলাভিশন টেলিভিশন আয়োজিত কুরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতায় ময়মনসিংহ বিভাগে ২য় স্থান অর্জন করেছে।’
এ বিষয়ে নকলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া উম্মুল বানিন বলেন, ‘আমরা চাই, কোনো অবস্থাতেই যেন অর্থাভাবে তার পড়ালেখা বন্ধ না হয়। প্রাথমিকভাবে আমরা তাকে নগদ ৫ হাজার টাকা শিক্ষা অনুদান দিয়েছি। এবং ভবিষ্যত তার শিক্ষা সহায়তা ও তার মাকে বিধবা ভাতার কার্ড করে দেওয়া হবে।’