কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের পর অটোমান সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহ বলকান অঞ্চলের দিকে অগ্রসর হন। ১৪৬৩ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান বসনিয়ায় অভিযান চালান, এবং এই অঞ্চলটিকেও উসমানি সালতানাতে অন্তর্ভুক্ত করেন।
এই অভিযানে সুলতান যখন ‘ক্রালয়েফোয় সুতয়েসজি’ নামক এলাকায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তখন তিনি দেখলেন এক আশ্চর্য দৃশ্য—একদল পিঁপড়া একটি লাঠি বেয়ে উপরে উঠছে, যেন সেগুলো মিনার তৈরি করছে। তিনি বললেন, ‘এরা তো আমাকে মসজিদ নির্মাণের ইশারা দিচ্ছে!’
তিনি সেই জায়গায় মসজিদ নির্মাণের নির্দেশ দিলেন। তার নির্দেশে মাত্র তিনদিনেই মসজিদটি নির্মিত হয়। পরবর্তীতে মসজিদটির নামকরণ করা হয় ‘সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহ মসজিদ’।
মসজিদটি আজও দাঁড়িয়ে আছে ঠিক সেভাবেই, প্রায় পাঁচশ বছরেরও বেশি সময় ধরে। বসনিয়ার ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে প্রাচীন অটোমান স্থাপনা, যা আজও অক্ষত রয়েছে। যুদ্ধ, দাঙ্গা, শত্রুর হাত—কিছুই পারেনি এর মূল রূপ নষ্ট করতে। আশ্চর্যের ব্যাপার, এই মসজিদ কখনও ধ্বংস হয়নি, বড় ধরনের ক্ষতির মুখেও পড়েনি। ২০০৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মেরামতের সময়ও স্থাপনার মূল কাঠামো ঠিক রেখেই মসজিদটিকে সংস্কার করা হয়।
মসজিদের ভেতরে ঢুকলেই চোখে পড়ে প্রাচীন কারুকার্য। ভেতরটা নির্মিত হয়েছে কাঠের পাটাতন ও মাটির ইট দিয়ে। ওক কাঠের খুঁটি আর দণ্ডে তৈরি হয়েছে এর মেহরাব, মিম্বর—সবই সেই প্রাচীন যুগের! এমনকি মেহরাবের নীচে পাওয়া গেছে বসনিয়ার সবচেয়ে প্রাচীন ইসলামি শিলালিপিও। ছাদ ঢেকে রাখা হয়েছে কাঠের পাত দিয়ে, আর তার ঠিক মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে আছে ৭.৬৫ মিটার উঁচু কাঠের মিনার—আটকোনা ভিত্তি নিয়ে এর অবস্থান অত্যন্ত ব্যতিক্রমী।
মসজিদটির চারপাশে যখন মুসলমানদের বাড়িঘর বেশি ছিল, তখন মসজিদ ছিল প্রাণবন্ত। প্রতিদিনের নামাজ, মক্তব, কোরআন তিলাওয়াত—সবই চলত নিয়মিত। সময়ের আবর্তনে মুসলিম জনসংখ্যা কমেছে, তাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় না হলেও এখানে জুমা, তারাবি আর ইদের নামাজ পড়া হয়। বিশেষ করে বিয়ের জন্য বহু নবদম্পতি আসেন দূরদূরান্ত থেকে। মহররম এলে খুব ঘটা করে আশুরা পালন করা হয়।
এই মসজিদ শুধু ইবাদতখানা নয়; এটি অটোমান ঐতিহ্যের জীবন্ত নিদর্শন, সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহর আধ্যাত্মিক স্বপ্নের বাস্তব রূপ। পিঁপড়ার ইশারা আর সুলতানের স্বপ্নের সেই গল্প আজও বসনিয়ার বুড়োদের মুখে শোনা যায়।