বিশ্ববরেণ্য আলেম ও দাঈ শায়খ আব্দুল ওয়াহাব যাহেদ (রহ.) আর নেই

ধর্ম ডেস্ক
  ২২ জুলাই ২০২৫, ২৩:৩৮

গত শনিবার (১৯ জুলাই ২০২৫) দক্ষিণ কোরিয়ায় বসবাসকারী বিশ্ববরেণ্য আলেম ও ইসলাম প্রচারক সিরিয়ার হালব নগরীর সন্তান শায়খ ড. আব্দুল ওয়াহাব যাহেদ (রহ.) ইন্তেকাল করেছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার জিয়নজু শহরে ৮৪ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন।
শায়খ আব্দুল ওয়াহাব (রহ.) প্রায় চল্লিশ বছর দক্ষিণ কোরিয়ায় ইসলাম প্রচার ও ইসলামি শিক্ষার বিস্তারে কাজ করেছেন। তার নিরলস প্রচেষ্টায় হাজার হাজার কোরিয়ান ইসলাম গ্রহণ করেছেন।
শায়খ আব্দুল ওয়াহাবের (রহ.) জন্ম সিরিয়ায়, সেখানেই তিনি প্রাথমিক দ্বীনি শিক্ষা অর্জন করেন। এরপর তিনি মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাফসির ও হাদিস বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন, হাদিস বিষয়ে মাস্টার্স ও তুলনামূলক ফিকহে পিএইচডি করেন। এ ছাড়া তিনি ভারত ও পাকিস্তানের বহু খ্যাতিমান আলেম ও শায়খদের থেকে জ্ঞান অর্জন করেন। ভারতের মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী (রহ.), পাকিস্তানের মাওলানা মুহাম্মদ ইউসুফ বিন্নোরী (রহ.) এবং অন্যান্য অনেক বড় আলেমের সাথে তার সম্পর্ক ছিল।
কর্মজীবনে তিনি সৌদি আরবে অধ্যাপনা করেন, কুয়েতের আওকাফ মন্ত্রণালয়ের ফিকহ এনসাইক্লোপিডিয়া প্রজেক্টে অংশগ্রহণ করেন এবং পাকিস্তানে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য, স্নাতকোত্তর ডিন এবং হাদীস ও ফিকহ বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮৪ সালে ইসলাম প্রচারের জন্য তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তিনি কোরিয়ান ভাষা শেখেন। কোরিয়ানদের ধর্মবিশ্বাস, সংস্কৃতি, সমাজনীতি গভীরভাবে বুঝে তাদের উপযোগী করে ইসলামের আদর্শ ও শিক্ষা প্রচার করতে থাকেন। তার প্রচেষ্টায় দক্ষিণ কোরিয়ায় বহু মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়। কোরিয়ান ভাষায় তিনি বহু দ্বীনি গ্রন্থ রচনা করেন যেগুলো কোরিয়ান ভাষাভাষী কোটি কোটি মুসলিম ও অমুসলিমের ইসলাম সম্পর্কে জানার বড় মাধ্যম।
শায়খ আব্দুল ওয়াহাব দীর্ঘ দিন দক্ষিণ কোরিয়ার জিয়নজু মসজিদে ইমাম ও খতিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার বক্তব্য ও নসিহত শুধু মুসলমানদের চরিত্র গঠনে ভূমিকা রাখেনি, বরং অমুসলিমদের মধ্যেও ইসলামের ইতিবাচক শিক্ষা পৌঁছাতে সহায়ক হয়েছে।
তার মৃত্যুতে দক্ষিণ কোরিয়ার মুসলমানদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তিনি ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার মুসলমানদের জন্য একজন প্রজ্ঞাবান শিক্ষক এবং সত্যিকার পথপ্রদর্শক। যে কোনো সমস্যা ও সংকটে সবাই তার কাছেই আশ্রয় ও সান্ত্বনা খুঁজতো। যে কোনো বিষয়ে তার ফতোয়ার অপেক্ষা করতো। কোরিয়ান মুসলমানদের জন্য তার শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়।
আজ রোববার (২০ জুলাই) দক্ষিণ কোরিয়ার জিয়নজু মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর দক্ষিণ কোরিয়ার মাটিতেই তাকে দাফন করা হবে।