রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাতে সাহাবির দাসত্বমুক্তির অনন্য কাহিনী

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২৩ আগস্ট ২০২৫, ১২:৩০

পারস্যের ইস্পাহানের জায়্যুন অঞ্চলের অগ্নিপূজারি এক ধনাঢ্য পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সালমান ফারসি (রা.)। তাঁর বাবা ছিলেন গ্রামের সর্দার এবং সালমান (রা.)-ই ছিলেন তাঁর সবচেয়ে প্রিয় সন্তান। ছোটবেলা থেকেই তিনি সত্যান্বেষী ছিলেন এবং মহান আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের আকাঙ্ক্ষা তাঁর অন্তরে প্রবল ছিল। এ জন্য তাঁর ত্যাগ-তিতিক্ষা ও কঠোর সাধনা ছিল অনন্য।
তিনি সত্যের সন্ধানে অনেক দেশ ও অঞ্চল ভ্রমণ করেন এবং বহু মানুষের সাহচর্য গ্রহণ করেন। এক পর্যায়ে বনু কালব গোত্রের কিছু প্রতারকের হাতে তিনি দাসত্বে আবদ্ধ হন। শেষ পর্যন্ত এই অবস্থায় তিনি শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমন সংবাদ শুনতে পান এবং তাঁর খিদমতে উপস্থিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন।
ইসলাম গ্রহণের জন্য তাঁর এই দীর্ঘ সফর ছিল অত্যন্ত কষ্টের।
যাতে তাঁকে দাসত্বের শৃঙ্খলে পর্যন্ত আবদ্ধ হতে হয়েছিল। তার পরও নবীজি (সা.)-এর দেখা পাওয়া এবং ইসলাম গ্রহণের সৌভাগ্য লাভ ছিল তাঁর কাছে সবচেয়ে আনন্দের বিষয়। এটাই ছিল তাঁর জীবনের পরম প্রাপ্তি।
একদিন রাসুল (সা.) সালমান ফারসি (রা.)-এর কাছে তাঁর দীর্ঘ সাধনা ও দুঃখের কথা জানতে চান।
তিনি মহানবী (সা.)-কে সব কিছু খুলে বলেন। রহমাতাল্লিল আলামিন বিশ্বনবী (সা.) তাঁর দীর্ঘ সাধনা ও দুঃখের কথাগুলো শুনে নিজেকে স্থির রাখতে পারলেন না। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে করেই হোক, তাঁর প্রিয় সাহাবিকে তিনি দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করবেন। এবং সালমান ফারসি (রা.)-কে বললেন, ‘সালমান! তোমার মনিবের সঙ্গে মুকাতাবা (মুক্তিপণের চুক্তি) করো, যাতে মুক্তি লাভ করতে পারো।’
সালমান ফারসি (রা.) বলেন, ‘আমার মনিবের সঙ্গে চুক্তি হয় যে আমি ৩০০ খেজুরগাছের চারা লাগাব এবং ৪০ উকিয়া স্বর্ণ দেব।
এর বিনিময়ে আমাকে মুক্তি দেওয়া হবে।’ এ কথা আমি রাসুল (সা.)-কে জানাই। তিনি সাহাবিদের ডেকে বলেন, ‘তোমরা তোমাদের এ ভাইকে সাহায্য করো।’ তখন প্রত্যেকে যার যার সাধ্যমতো কেউ ১০, কেউ ২০, কেউ ৩০টি চারা দিয়ে সাহায্য করল। এভাবে ৩০০ চারার ব্যবস্থা হয়ে গেল।
মহানবী (সা.)-এর প্রচেষ্টায় বয়োজ্যেষ্ঠ সাহাবির দাসমুক্তিমনিব যে জায়গা নির্ধারণ করেছিলেন, সেখানে চারাগুলো রোপণ করতে রাসুল (সা.) নিজে আমার সঙ্গে গেলেন। তাঁর নির্দেশে আমি গর্ত খুঁড়তাম, আর তিনি নিজের হাতে চারাগুলো রোপণ করতেন। আল্লাহর কসম! তাঁর রোপণকৃত একটি চারাও শুকিয়ে যায়নি। এভাবে আমি চুক্তির একাংশ পূর্ণ করলাম। বাকি রইল স্বর্ণ।
কিছুদিন পর এক ব্যক্তি ডিমের মতো একটি স্বর্ণখণ্ড নিয়ে রাসুল (সা.)-এর কাছে আসেন। তিনি আমাকে ডেকে তা হাতে দিয়ে বললেন, ‘এটা দিয়ে তোমার মুক্তিপণ পরিশোধ করো।’ আমি বললাম, হে আল্লাহ! এতটুকু স্বর্ণে কি ঋণ শোধ হবে? তিনি বললেন, ‘আল্লাহ এর দ্বারাই তোমার দেনা শোধ করবেন।’ সত্যিই আল্লাহর কৃপায় তা ওজনে অনেক বেড়ে গেল এবং তা দিয়েই আমি ৪০ উকিয়া পরিশোধ করতে সক্ষম হলাম।
সালমান (রা.) বলেন, ইসলাম গ্রহণের পরও কয়েক বছর আমি দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ ছিলাম। ফলে বদর ও উহুদ যুদ্ধে অংশ নিতে পারিনি। তবে খন্দকের যুদ্ধ থেকে পরবর্তী সব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি (আত-ত্বাবাক্বাতুল কুবরা : ৪/৫৬-৬০; সিয়ারু আ’লামিন নুবালা : ১/১৮৬-১৮৮; উসদুল গাবাহ : ২/২৬৫-২৬৭)।
দাসত্ব থেকে মুক্তি লাভের পর তিনি সাহাবায়ে কিরামের সঙ্গে বসবাস করতে থাকেন। তখন তাঁর নিজের কোনো ঘরবাড়ি ছিল না। ইবনে আছির (রহ.) লিখেছেন, রাসুল (সা.) হজরত আবুদ দারদা (রা.)-এর সঙ্গে তাঁর ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে দেন।
সুবহানাল্লাহ, এভাবে মহানবী (সা.) তাঁর সাহাবিদের পুনর্বাসনে প্রাণপণ চেষ্টা করতেন।