সুরা তাকওয়ীর কোরআনের ৮১তম সুরা, এর আয়াত সংখ্যা ২৯টি, রুকু ১টি। সুরা তাকওয়ীর মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। আরবি ভাষায় তাকওয়ীর অর্থ পেঁচানো বা গোটানো। মাথায় পেঁচিয়ে পাগড়ি বাঁধাকে ‘তাকওয়ীরুল ইমামাহ’ বলা হয়ে থাকে। সুরা তাকওয়ীরের শুরুতে আল্লাহ বলেছেন, কেয়ামতের দিন সূর্যকে গুটিয়ে নেওয়া হবে। অর্থাৎ সূর্য নিস্প্রভ হয়ে যাবে, এর আলোক বিচ্ছুরণ বন্ধ হয়ে যাবে।
সুরাটিতে কেয়ামতের দিনের বিস্তারিত বিবরণ এসেছে। কেয়ামত কীভাবে শুরু হবে এবং কীভাবে শেষ হবে তা খুব অল্প কথায় চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
সুরা তাকওয়ীরের ১-১৪ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
(১)
إِذَا الشَّمْسُ كُوِّرَتْ
ইযাশ শামসু কুওয়িরাত।
যখন সূর্য আলোহীন হয়ে যাবে,
(২)
وَإِذَا النُّجُومُ انْكَدَرَتْ
ওয়া ইযান নুজূমুন কাদারাত।
যখন নক্ষত্র মলিন হয়ে যাবে,
(৩)
وَإِذَا الْجِبَالُ سُيِّرَتْ
ওয়া ইযাল জিবালু সুইয়িরাত।
যখন পর্বতমালা অপসারিত হবে,
(৪)
وَإِذَا الْعِشَارُ عُطِّلَتْ
ওয়া ইযাল ইশারু উত্তিলাত।
যখন দশ মাসের গর্ভবতী উষ্ট্রীসমূহ উপেক্ষিত হবে;
(৫)
وَإِذَا الْوُحُوشُ حُشِرَتْ
ওয়া ইযাল উহূশু হুশিরাত।
যখন বন্য পশুদের একত্র করা হবে,
(৬)
وَإِذَا الْبِحَارُ سُجِّرَتْ
ওয়া ইযাল বিহা-রু সুজ্জিরাত।
যখন সমুদ্রকে উত্তাল করে তোলা হবে,
(৭)
وَإِذَا النُّفُوسُ زُوِّجَتْ
ওয়া ইযান নুফূসু ঝুওয়িজাত।
যখন আত্মাসমূহকে যুগল করা হবে, (অর্থাৎ মানুষের আমল অনুযায়ী তার শরীর সৃষ্টি করা হবে এবং প্রত্যেকের আত্মা তার শরীরে যুক্ত করা হবে।)
(৮)
وَإِذَا الْمَوْءُودَةُ سُئِلَتْ
ওয়া ইযাল মাওঊদাতু সুয়িলাত।
যখন জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে,
(৯)
بِأَيِّ ذَنْبٍ قُتِلَتْ
বিআইয়ি যামবিন কুতিলাত।
কি অপরাধে তাকে হত্য করা হল?
(১০)
وَإِذَا الصُّحُفُ نُشِرَتْ
ওয়া ইযাস সুহুফু নুশিরাত।
যখন আমলনামা খোলা হবে,
(১১)
وَإِذَا السَّمَاءُ كُشِطَتْ
ওয়া ইয়াস সামাউ কুশিতাত।
যখন আকাশের আবরণ অপসারিত হবে,
(১২)
وَإِذَا الْجَحِيمُ سُعِّرَتْ
ওয়া ইযাল জাহীমু সু’য়িরাত।
যখন জাহান্নামের অগ্নি প্রজ্বলিত করা হবে
(১৩)
وَإِذَا الْجَنَّةُ أُزْلِفَتْ
ওয়া ইযাল জান্নাতু উঝলিফাত।
এবং যখন জান্নাত সন্নিকটবর্তী হবে,
(১৪)
عَلِمَتْ نَفْسٌ مَا أَحْضَرَتْ
আলিমাত নাফসুম মা আহদারাত।
তখন প্রত্যেকেই জানবে সে কী উপস্থিত করেছে।
মৃত ব্যক্তির ঋণ কি সন্তানদের পরিশোধ করতে হবে?
ইহরাম অবস্থায় পোশাকের যে ভুলে দম বা সদকা ওয়াজিব হয়
এ আয়াতগুলো থেকে যে শিক্ষা ও নির্দেশনা আমরা পাই:
১. পরকাল, হিসাব ও প্রতিদানে বিশ্বাস মুসলমানদের মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বাস, পরকালে অবিশ্বাসী হয়ে কেউ মুমিন হতে পারে না। পরকালের বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে অন্তরে ধারণ করা আমাদের কর্তব্য।
২. কেয়ামতের দিন ও আল্লাহর শাস্তির ভয়াবহতা অন্তরে জাগরূক রাখা উচিত। যেন মন্দ কাজ করতে গেলে আমরা ভয় পাই, আমাদের অন্তর কেঁপে ওঠে।
৩. সুরা তাকভীরে আমরা কেয়ামতের দিনের বিস্তারিত বিবরণ পাই। কেয়ামত কীভাবে শুরু হবে এবং কীভাবে শেষ হবে তা খুব অল্প কথায় চসৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সুনানে তিরমিজিতে বর্ণিত একটি হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে কেয়মতের দিনটিকে চোখের সামনে দেখতে চায়, যে যেন সুরা তাকভীর ও সুরা ইনশিকাক পড়ে।
৪. কেয়ামতের দিন মানুষ নিজের জীবনের যাবতীয় সৎকাজ ও অসৎকাজ সম্পর্কে জানতে পারবে। সেগুলোকে সামনে উপস্থিত দেখতে পাবে। সৎ কাজ মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে, অসৎ কাজ নিয়ে যাবে জাহান্নামে।
৫. সুরা তাকওয়ীরে বর্ণনা অনুযায়ী এই দুনিয়ার সমাপ্তির সময় ছয়টি ঘটনা ঘটবে: (১) সূর্য নিস্প্রভ হয়ে পড়বে। (২) তারকারাজি হয়ে যাবে নিস্প্রভ ও মলিন। (৩) পাহাড়গুলো মাটি থেকে উৎপাটিত হয়ে আকাশে উড়তে থাকবে। (৪) দুনিয়ার আকর্ষণীয় সব সম্পদ আকর্ষণহীন হয়ে যাবে। (৫) সব বন্য পশুকে একত্র করা হবে। (৬) এবং সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠবে।
আখেরাতে ছয়টি ঘটনা ঘটবে: (১) মানুষের আমল অনুযায়ী তার শরীর সৃষ্টি করা হবে এবং প্রত্যেকের আত্মা তার শরীরে যুক্ত করা হবে। (২) মানুষকে তার সব জুলুম ও গোনাহের হিসাব দিতে হবে যেমন জীবন্ত কবর দেওয়া মেয়েদের জিজ্ঞাসা করা হবে কী অপরাধে তাদের হত্যা করা হয়েছিল। অর্থাৎ তাদের ওপর কৃত জুলুমের বিচার হবে। (৩) মানুষের আমলনামা উন্মোচিত হবে। (৪) আকাশকে গুটিয়ে নেওয়া হবে। (৫) জাহান্নামের আগুন জ্বালানো হবে। (৬) এবং জান্নাতকে ইমানদার ও মুত্তাকিদের নিকটবর্তী করা হবে।