কোরআন-হাদিসের আলোকে বজ্রাঘাত 

বেলায়েত হুসাইন
  ১১ মে ২০২৪, ১৩:৩৬

দেশে বজ্রাঘাতে হতাহতের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্ষার মৌসুমে প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও বৃষ্টি হয় এবং একইসঙ্গে এ সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে বজ্রাঘাতে ক্ষয়ক্ষতির খবর আসে। কেন প্রাকৃতিক এ দুর্যোগটি হয় এবং তা কী, এ নিয়ে আবহাওয়াবিদদের বিভিন্ন মন্তব্য রয়েছে।
আজ আমরা জানবো কোরআনের ভাষ্য মতে বজ্রাঘাত কী এবং তা বেড়ে যাওয়ার আধ্যাত্মিক কারণ কী হতে পারে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, বজ্রাঘাত আল্লাহ তাআলার শক্তির নিদর্শনগুলোর একটি, যা তিনি তাঁর প্রিয় বান্দাদের সাবধান করার জন্য রেখেছেন। তিনি চাইলেই যে কাউকে এর মাধ্যমে যেকোনও সময় শাস্তি দিতে পারেন। যদিও সব ক্ষেত্রে পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলা এমনটি করেন না। তাই কেউ বজ্রাঘাতের কবলে পড়ে মারা গেলেই তাকে আল্লাহর অপ্রিয় বান্দা ভাবা যাবে না।
বজ্রাঘাত সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের আয়াত, ‘বজ্র তাঁরই তাসবিহ ও হামদ জ্ঞাপন করে এবং তাঁর ভয়ে ফেরেশতারাও (তাসবিহরত রয়েছে)। তিনিই গর্জমান বিজলি পাঠান, তারপর যার ওপর ইচ্ছা একে বিপদরূপে পতিত করেন। আর তাদের (অর্থাৎ কাফিরদের) অবস্থা এই যে তারা আল্লাহ সম্পর্কেই তর্কবিতর্ক করছে, অথচ তাঁর শক্তি অতি প্রচণ্ড। ’ (সুরা রা’দ, আয়াত : ১৩)
বজ্রাঘাত কেন হয়?
রাসুল (সা.)-এর হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, জমিনে আল্লাহর বিধান পরিপালনে ঘাটতি হলে তিনি সতর্কতা স্বরূপ বজ্রাঘাত দেন। হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের প্রবল পরাক্রমশালী প্রভু বলেছেন, যদি আমার বান্দারা আমার বিধান মেনে চলতো, তবে আমি তাদের রাতের বেলায় বৃষ্টি দিতাম, সকালবেলায় সূর্য দিতাম এবং কখনও তাদের বজ্রাঘাতের আওয়াজ শোনাতাম না।’ (মুসনাদে আহমদ : ৮৭০৮)
বজ্রাঘাত থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়
মহান আল্লাহ বজ্রাঘাত যেমন সৃষ্টি করেছেন, তাঁর প্রিয় নবী (সা.)-এর মাধ্যমে দুনিয়াবাসীকে তা থেকে বাঁচার পথও বাতলে দিয়েছেন। উপরোক্ত হাদিসের ভাষ্য দ্বারা বুঝতে পারি যে, আল্লাহর বিধান মেনে চলার মাধ্যমেও বজ্রাঘাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। পাশাপাশি মহানবী (সা.) তাঁর উম্মতদের বজ্রাঘাত থেকে রক্ষার যে দোয়াগুলো শিখিয়েছেন, সেগুলোর ওপর গুরুত্বসহ আমল করতে হবে। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) তাঁর বাবা থেকে বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) যখন বজ্রের শব্দ শুনতেন তখন বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা লা তাকতুলনা বিগজাবিকা ওয়ালা তুহলিকনা বিআজাবিকা ওয়া আ-ফিনা কবলা জালিকা।’ (তিরমিজি : ৩৪৫০)। অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি আমাদের আপনার গজব দিয়ে হত্যা করে দেবেন না এবং আপনার আজাব দিয়ে ধ্বংস করে দেবেন না। এসবের আগেই আপনি আমাদের পরিত্রাণ দিন।’ (তিরমিজি ৩৪৫০)।
অন্য হাদিসে আছে, হজরত ইবনে আবি জাকারিয়া থেকে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি বজ্রের আওয়াজ শুনে এ দোয়া পড়বে, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’, সে বজ্রে আঘাতপ্রাপ্ত হবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ২৯২১৩)
একথা নিশ্চিত যে বজ্রাঘাত খোদায়ি দুর্যোগ। গোনাহ থেকে বাঁচা, আল্লাহর হুকুম পরিপালন করা ও হাদিসে বর্ণিত দোয়ার ওপর আমলের পাশাপাশি এর থেকে বেঁচে থাকার কিছু বাহ্যিক করণীয়ও রয়েছে, যেগুলো সম্পর্কে সরকার জনগণকে নিয়মিতভাবে সতর্ক করে যাচ্ছে এবং ওই সতর্কবাণী মিডিয়ায় প্রচারিতও হচ্ছে। এক্ষেত্রে কোরআন-সুন্নাহর ওপর আমলের পাশাপাশি সরকারি এসব দিকনির্দেশনাও মানা অত্যন্ত জরুরি। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন এবং সব ধরনের দুর্যোগ থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী, শিক্ষক, মারকাযুদ দিরাসাহ আল ইসলামিয়্যাহ, ঢাকা।