মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বড় সম্মিলন হজের জন্য সব প্রস্তুতি শেষ করেছে সৌদি আরব।এবারও হজের খুৎবা বাংলাসহ ১৮টি ভাষায় প্রচার করা হবে। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ১১ জুন (সোমবার) মক্কায় হজ নিরাপত্তা বাহিনীর বার্ষিক কুচকাওয়াজ হয়। এতে অংশ নেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সুপ্রিম হজ কমিটির চেয়ারম্যান প্রিন্স আব্দুলআজিজ বিন সৌদ বিন নায়েফ। এবারের হজের জন্য নেয়া বিভিন্ন নিরাপত্তামূলক প্রস্তুতি তুলে ধরা হয় অনুষ্ঠানে। সেখানে বক্তব্য দেন জননিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক ও হজ নিরাপত্তা কমিটির চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ আল-বাসামি। তিনি বলেন, হজযাত্রীদের নিরাপত্তা এবং নিরাপদ হজের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে মদিনার আমির প্রিন্স সালমান বিন সুলতান, মক্কার আঞ্চলিক উপআমির প্রিন্স সুলতান বিন মিশাল এবং নিরাপত্তা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এদিকে ভুয়া অনুমতিপত্র নিয়ে হজ করতে আসায় ইতোমধ্যে পাকিস্তান ও মিয়ানমারের কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। অবৈধভাবে মক্কায় প্রবেশকারী কয়েক হাজার ব্যক্তিকে ফেরত পাঠিয়েছে স্থানীয় পুলিশ, গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের কেউ কেউ।
এবার বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৮৫ হাজার মানুষ হজ করতে সৌদি আরব যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে প্রায় ৮০ হাজার হজযাত্রী ইতোমধ্যে সৌদি আরব পৌঁছেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মিলিয়ে এবার ২০ লক্ষাধিক মানুষের সমাগম আশা করা হচ্ছে।
সৌদি আরবে গত শুক্রবার থেকে জিলহজ মাস গণনা শুরু হয়েছে। সেই অনুযায়ী, আগামী ১৫ জুন আরাফাতের ময়দানে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা হবে। আর পরদিন কোরবানির মধ্য দিয়ে ঈদুল আজহা উদ্যাপন হবে। হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে ৮ জিলহজ শুক্রবার থেকে। সেদিন মক্কার হারাম শরিফ অথবা বাসা-হোটেল থেকে হজের নিয়তে ইহরাম বেঁধে মিনার উদ্দেশে রওনা দেবেন হজযাত্রীরা।
সেখানে জোহরের নামাজের আগেই পৌঁছানোর লক্ষ্য থাকে। এখন অবশ্য ৭ জিলহজ রাত থেকেই হজযাত্রীদের মিনায় নেওয়ার কাজ শুরু হয়। ৮ জিলহজ জোহর থেকে পরদিন ফজর পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা মুস্তাহাব এবং সেখানে অবস্থান করা সুন্নত।
৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়ার মাধ্যমে পালিত হবে হজ। সেদিন ফজরের পর সম্ভব হলে মিনায় গোসল করে নেয়া অথবা অজু করে সকাল সকাল আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশে রওনা হতে হয়। হজের অন্যতম এ রোকন পালনে জোহরের আগেই আরাফাতের ময়দানে গিয়ে উপস্থিত হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবস্থান করতে হয়। সেখানে সমবেত হয়ে প্রার্থনা ও খুৎবা শোনাকেই হজ ধরা হয়।
সন্ধ্যায় রওনা হয়ে মুজদালিফায় গিয়ে এক আজানে আলাদা ইকামতে ধারাবাহিকভাবে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করেন হাজিরা। সেখানে সারারাত খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করে সুবহে সাদিক পর্যন্ত থাকা সুন্নত। সুবহে সাদিক থেকে সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত যেকোনো এক মুহূর্ত মুজদালিফায় অবস্থান করা ওয়াজিব। ফজরের নামাজ আদায় করে সূর্য ওঠার কিছু আগে মিনার উদ্দেশে রওনা দেন হাজিরা। শয়তানকে মারার জন্য পাথর সংগ্রহ করতে হয় মুজদালিফায় অবস্থানের সময়, রাতে কিংবা সকালে। ১০ জিলহজ সকালে মুজদালিফা থেকে মিনায় এসে বড় জামরাতে সাতটি পাথর নিক্ষেপ করতে হয়। পাথর নিক্ষেপের স্থানগুলোতে দেয়া দিক-নির্দেশনা মনোযোগ সহকারে শুনে তা সম্পন্ন করতে হবে জোহরের মধ্যে। বড় জামরাতে পাথর নিক্ষেপ করে মিনায় কোরবানির পশু জবাই করতে হয়। এ ক্ষেত্রে যারা ব্যাংকের মাধ্যমে কোরবানি সম্পন্ন করেন, তারা ব্যাংকের কাছ থেকে মাথা মুণ্ডনের সময় জেনে নিতে পারেন।
কোরবানির পরপরই মাথা মুণ্ডন সেরে ফেলতে হয়।হজের সর্বশেষ রোকন কাবাঘর তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ, যা ১১ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ সূর্য ডোবার আগেই সম্পন্ন করতে হবে। সূর্য ডোবার আগে সেটি করতে না পারলে দম বা কোরবানি কাফ্ফারা আদায় করতে হবে। ১১ ও ১২ জিলহজ মিনায় অবস্থান করে ধারাবাহিকভাবে ছোট, মধ্যম ও বড় জামরাতে ৭টি করে ২১টি পাথর নিক্ষেপ করতে হবে প্রতিদিন। তবে যদি কেউ পাথর নিক্ষেপের আগে কিংবা পরে কাবা শরিফ গিয়ে তাওয়াফ করেন, তবে তাকে তাওয়াফের পর আবার মিনায় চলে আসতে হবে এবং রাতে মিনায় অবস্থান করতে হবে।
নারী, বৃদ্ধ ও শারীরিকভাবে দুর্বলরা পাথর নিক্ষেপের ক্ষেত্রে রাতের সময় বেছে নিলে ভালো। এ ক্ষেত্রে এখন হজ কর্তৃপক্ষ সময়সূচি ঠিক করে দেয় এবং বাংলায় দিক নির্দেশনার ব্যবস্থা করে। সেই সময় অনুযায়ী পাথর নিক্ষেপ করা হলে ভিড় এড়ানো সম্ভব। ১০ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত মিনায় রাত্রযাপন করতে হয়। কেউ মিনাত্যাগ করতে চাইলে ১২ জিলহজ সূর্য ডোবার আগেই চলে যেতে হবে। এ সময়ের মধ্যে মিনাত্যাগ করতে না পারলে ১৩ জিলহজ মিনায় অবস্থান করতে হবে। সেদিন সাতটি করে আরও ২১টি পাথর নিক্ষেপ করতে হবে। দেশে রওয়ানা হওয়ার আগে তাওয়াফ করতে হয়, যাকে বিদায়ী তাওয়াফ বলে। তবে জিলহজ মাসের ১২ তারিখের পর যে কোনো নফল তাওয়াফই বিদায়ী তাওয়াফে হিসেবে আদায় হয়ে যায়।