মর্ম অনুধাবন করে কোরআন তিলাওয়াতের গুরুত্ব

ধর্ম  ডেস্ক
  ২৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:২৬

কোরআন মানুষের কাছে পাঠানো আল্লাহর বার্তা।কোরআন মহান আল্লাহ তাআলার কালাম।  আল্লাহ তাআলার নির্দেশ বুঝতে, তার ইচ্ছা অনুযায়ী জীবন গড়তে গভীর মনোযোগ দিয়ে চিন্তা ভাবনা করে কোরআন তিলাওয়াত করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
كِتٰبٌ اَنۡزَلۡنٰهُ اِلَیۡكَ مُبٰرَكٌ لِّیَدَّبَّرُوۡۤا اٰیٰتِهٖ وَ لِیَتَذَكَّرَ اُولُوا الۡاَلۡبَابِ
আমি তোমার প্রতি নাজিল করেছি এক বরকতময় কিতাব, যাতে তারা এর আয়াতসমূহ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে এবং যাতে বুদ্ধিমানগণ উপদেশ গ্রহণ করে। (সুরা সোয়াদ: ২৯)
আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
اَفَلَا یَتَدَبَّرُوۡنَ الۡقُرۡاٰنَ اَمۡ عَلٰی قُلُوۡبٍ اَقۡفَالُهَا
তবে কি তারা কোরআন নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা করে না? নাকি তাদের অন্তরসমূহ তালাবদ্ধ? (সুরা মুহাম্মাদ: ২৪)
এ আয়াতগুলোর নির্দেশনা সুস্পষ্ট। আল্লাহ চান মানুষ কোরআনের মর্ম অনুধাবন করে কোরআন পাঠ করুক। আল্লাহ কী বলেছেন, কী বুঝিয়েছেন তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করুক। কোরআন অর্থ না বুঝে পাঠ করলেও সওয়াব পাওয়া যায়। কিন্তু অর্থ বুঝে কোরআন পাঠের সওয়াব নিঃসন্দেহে অনেক বেশি।

অনেকে দীনি অন্যান্য বইপত্র পড়লেও অর্থ ও ব্যাখ্যাসহ সরাসরি কোরআন পাঠ করাকে তেমন গুরুত্ব দেয় না। অনেকে ভাবে, কোরআনের অর্থ বুঝে পাঠক করা সাধারণ মানুষের জন্য না, শুধু আলেম বা ইসলামি জ্ঞানে পণ্ডিত ব্যক্তিরাই কোরআন বুঝতে পারেন। এই ধারণা সঠিক নয়। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেছেন,
وَ لَقَدۡ یَسَّرۡنَا الۡقُرۡاٰنَ لِلذِّكۡرِ فَهَلۡ مِنۡ مُّدَّكِرٍ
আর আমি তো কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য। অতএব কোন উপদেশ গ্রহণকারী আছে কি? (সুরা কামার: ১৭)
হারিস আওয়ার (রহ.) বলেন, একদিন দেখলাম কিছু লোক মসজিদে বসে হাদিস বা দীনের অস্পষ্ট ও জটিল বিষয় নিয়ে অতিমাত্রায় বাকবিতণ্ডা করছে। আমি হজরত আলীর (রা.) কাছে গিয়ে এ ব্যাপারে বললাম। আলী (রা.) বললেন, তারা এ কাজ করছে নাকি! আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আমি আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতে শুনেছি, সাবধান! শীঘ্রই পৃথিবীতে ফেতনা শুরু হবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! এ থেকে বাঁচার উপায় কী? আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহর কিতাব, এতে তোমাদের আগের ও পরের খবর রয়েছে। তোমাদের মধ্যকার বিতর্কের ফয়সালার পদ্ধতিও আছে। সত্য মিথ্যার পার্থক্যও আছে। এটা কোনো অর্থহীন কিতাব নয়। যে অহংকারী ব্যক্তি এ কোরআন ত্যাগ করবে, আল্লাহ তাআলা তার অহংকার চূর্ণ করবেন। যে ব্যক্তি এর বাইরে হিদায়াত সন্ধান করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে পথভ্রষ্ট করবেন। এ কোরআন হলো আল্লাহর মজবুত রজ্জু, জিকির ও সত্য সরল পথ।
কুরআন অবলম্বন করে কোন প্রবৃত্তি বিপথগামী হয় না। এর দ্বারা জবানের কষ্ট হয় না। প্রজ্ঞাবানগণ কোরআন পড়ে বিতৃষ্ণ হয় না। এ কোরআন বার বার পাঠ করলে পুরনো হয় না। এ কোরআনের বিস্ময়কর তথ্য অশেষ। কোরআন শুনে জিনরাও স্থির থাকতে পারেনি । তারা কোরআন শুনে বলে উঠেছিল,
إِنَّا سَمِعْنَا قُرْآنًا عَجَبًا يَهْدِي إِلَى الرُّشْدِ فَآمَنَّا بِهِ
আমরা তো এক বিস্ময়কর কুরআন শুনেছি, যা সত্যের দিকে পথ দেখায়; অতঃপর আমরা তাতে ঈমান এনেছি। (সুরা জিন: ১, ২)
যে কোরআন অনুযায়ী কথা বলে, সে সত্য বলে, যে কোরআন অনুযায়ী আমল করে, সে প্রতিদান লাভ করে, যে কোরআন অনুযায়ী বিচার-আচার করে, সে ন্যায়বিচার করে, যে মানুষকে কোরআনের দিকে ডাকে, সে সিরাতে মুস্তাকিম বা সত্য সরল পথের দিশা লাভ করে। (সুনানে তিরমিজি: ২৯০৬)