মদিনার অদূরেই নবিজির (সা.) মাকে কবর দেওয়া হয়েছিল । কবর জিয়ারত করা, কবরস্থানে গিয়ে মৃত মুসলমানদের জন্য দোয়া করা ও মৃত্যুর কথা স্মরণ করা সুন্নাত ও সওয়াবের কাজ। রাসুল (সা.) মাঝে মাঝেই সাহাবিদের কবরস্থান জান্নাতুল বাকিতে যেতেন এবং বেশ কিছুক্ষণ সেখানে অবস্থান করতেন, কবরবাসীদের জন্য দোয়া করতেন।
কবরস্থানে গিয়ে অতিরিক্ত আবেগ প্রকাশ ও শরিয়ত-নিষিদ্ধ কাজকর্ম ঠেকাতে একবার রাসুল (সা.) কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলেন। পরবর্তীতে সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়ে তিনি বলেন,
كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَزُورُوهَا فَإِنَّهَا تُزَهِّدُ فِي الدُّنْيَا وتذكر الْآخِرَة
আমি তোমাদেরকে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন থেকে তোমরা কবর জিয়ারত কর। কারণ কবর জিয়ারত দুনিয়ার আকর্ষণ কমিয়ে দেয় ও পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। (সুনানে ইবনে মাজা: ১৫৭১)
বর্ণিত রয়েছে, একবার নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবিদের নিয়ে তার মা আমেনা বিনতে ওয়াহাবের কবরও জিয়ারত করেছিলেন। সেখানে মায়ের কথা মনে করে তিনি কেঁদে ফেলেন, তাকে কাঁদতে দেখে সাথে থাকা সাহাবিরাও কেঁদে ফেলেন। আবু হোরায়রা (রা.) ঘটনাটি বর্ণনা করে বলেন, নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একবার নিজের মায়ের কবরে গেলেন। সেখানে তিনি নিজেও কাঁদলেন এবং তার আশপাশে যারা ছিল তাদেরও কাঁদালেন। তারপর বললেন,
اسْتَأْذَنْتُ رَبِّي فِي أَن أسْتَغْفر لَهَا فَلم يُؤذن لي ن وَاسْتَأْذَنْتُهُ فِي أَنْ أَزُورَ قَبْرَهَا فَأُذِنَ لِي فَزُورُوا الْقُبُورَ فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الْمَوْتَ
আমি আমার মায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে আল্লাহর কাছে অনুমতি চাইলাম। কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হলো না। তারপর আমি আমার মায়ের কবর জিয়ারতের অনুমতি চাইলাম। আমাকে অনুমতি দেয়া হলো। তোমরা কবর জিয়ারত করো। কারণ কবর মৃত্যুর কথা মনে করিয়ে দেয়। (সহিহ মুসলিম: ৯৭৬)
অর্থাৎ নবিজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মা যেহেতু নবিজির নবুয়্যত পাওয়ার অনেক আগে তার শৈশবেই মারা গিয়েছিলেন, তিনি মুশরিক অবস্থায় মারা গিয়েছিলেন, তাই তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার অনুমতি নবিজিকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দেওয়া হয়নি।
আনাস (রা.) বলেন, জনৈক ব্যাক্তি আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার পিতা কি জান্নাতে আছেন নাকি জাহান্নামে? আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, জাহান্নামে। লোকটি যখন ফিরে যাচ্ছিল, তখন নবিজি তাকে ডাকলেন এবং বললেন, আমার পিতাও তোমার পিতার মতো জাহান্নামে। (সহিহ মুসলিম: ৩৯৪)
সহিহ মুসলিমের ব্যাখ্যাগ্রন্থে এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী (রহ.) বলেছেন, রাসুল (সা.) বোঝাতে চেয়েছেন, যারাই কাফের অবস্থায় মারা যাবে, তারা জাহান্নামে যাবে। কোনো আত্মীয়তা বা সম্পর্ক কোনো উপকারে আসবে না এবং রাসুলের (সা.) নবুয়্যত পাওয়ার আগে আরবের যারা মুশরিক অবস্থায় মারা গেছে, তাদের পরিণতিও এ হাদিস থেকে বোঝা যায় যে তারা জাহান্নামি হবে। যেহেতু নবি ইবরাহিমসহ (আ.) অন্যান্য নবীদের দাওয়াত অনুসরণ করে আল্লাহর ওপর ঈমান আনা ও শিরকমুক্ত থাকা তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল।