নিজে ভালো কাজ করার পাশাপাশি ভালো কাজে পরস্পরের সহযোগিতা করা, দলবদ্ধভাবে সমাজে ভালো কাজের বিস্তার ঘটানো মুমিনদের কর্তব্য। একইভাবে অন্যায় কাজে পরস্পরের সহযোগী না হওয়া, সমাজে অন্যায় কাজ হলে সাধ্য অনুযায়ী বাধা দেওয়াও জরুরি। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, সৎকর্ম ও তাকওয়ায় তোমরা পরস্পরের সহযোগিতা কর। মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে পরস্পরের সহযোগিতা করো না। আল্লাহকে ভয় কর; নিশ্চয় আল্লাহ আজাব প্রদানে কঠোর। (সুরা মায়েদা: ২)
ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, এ আয়াতে সব মানুষকে সব রকম ভালো কাজে সাহায্য করতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ ভালো কাজে পরস্পরের সহযোগী হও, পরস্পরকে উৎসাহ দাও এবং ভালো কাজ করো, খারাপ কাজ থেকে বিরত থাক, খারাপ কাজে সহযোগিতা থেকে বিরত থাক। (আল-জামি’ লিআহকামিল কোরআন)
আমাদের দেশে ন্যায়ের নামে অনেক সময় অন্যায় হয়। কাউকে অপরাধী হিসেবে সন্দেহ হলে আইনের হাতে সোপর্দ না করে, যথাযথ তদন্ত ও বিচার ছাড়াই শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এ সব ক্ষেত্রে অনেকেই জুলুমের সহযোগী হয়ে যান। নিজে মারপিটে অংশগ্রহণ না করলেও বাঁধা দেন না। ভাবেন অপরাধীকেই শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, এখানে বাঁধা দেওয়ার কিছু নেই।
তারা ভুলে যান যে অপরাধীরও ন্যায় পাওয়ার অধিকার আছে। ইসলাম অপরাধী ও চরম শত্রুর প্রতিও ন্যায় আচরণ করার নির্দেশ দেয়। জুলুম ও বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করে। বিদ্বেষ ও শত্রুতাবশত জুলুম বা বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা ন্যায়ের সাক্ষ্যদাতা হিসেবে আল্লাহর পথে দৃঢ়ভাবে দন্ডায়মান থাক, কোন সম্প্রদায়ের প্রতি শত্রুতা তোমাদেরকে যেন এতটা উত্তেজিত না করে যে তোমরা ইনসাফ করা ত্যাগ করবে, সুবিচার কর, এটা তাকওয়ার নিকটবর্তী, তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল। (সুরা মায়েদা: ৮)
নিজের ভাই, বন্ধু যদি জুলুম করে তাহলে তাকে বাঁধা দেওয়া, জুলুম থেকে বিরত করা আবশ্যক। জালিম অবস্থায় মুসলমান ভাইকে বাধা দেওয়াই তার সহযোগিতা গণ্য হয়। আনাস (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদিন বললেন, অত্যাচারী হোক বা অত্যাচারিত হোক তোমার মুসলিম ভাইকে সাহায্য করো। জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রসূল! আমি তো অত্যাচারিতকে সাহায্য করব, অত্যাচারীকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি? আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাকে অত্যাচার থেকে নিবৃত্ত করো, এটাই অত্যাচারীর প্রতি তোমার সাহায্য। (সহিহ বুখারি: ২৪৪৩, সহিহ মুসলিম: ২৫৮৪)