‘সতর’ অর্থ ঢেকে রাখা। নারী ও পুরুষের শরীরের যে অংশ ঢেকে রাখা আবশ্যক, ওই অংশকে শরিয়তের পরিভাষায় সতর বলা হয়। পুরুষের সতর হলো নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত। নারী-পুরুষ, মাহরাম, গায়রে মাহরাম সবার সামনেই পুরুষের নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত শরীর ঢেকে রাখা ফরজ।
নারীদের সতর মাহরাম পুরুষ ও নারীদের সামনে চেহারা, চুল, গলা, গলাসংশ্লিষ্ট সিনার ওপরের অংশ, হাত, পা, টাখনু ছাড়া বাকি পূর্ণ শরীর। গায়রে মাহরাম পুরুষদের সামনে হাত, পা ও চেহারা ছাড়া পূর্ণ শরীরই সতর এবং ঢেকে রাখা আবশ্যক।
শরীরের যে অংশ ঢেকে রাখা আবশ্যক তা ইচ্ছাকৃত প্রকাশ করা গুনাহের কাজ। তবে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত সতর প্রকাশ পেয়ে যাওয়া অজু ভঙের কারণ নয়। অজু করার পর ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত সতর প্রকাশ পেলে অজুর কোনো ক্ষতি হবে না।
আমাদের দেশে বিশেষত পুরুষদের সতরের ক্ষেত্রে অনেকের এ রকম ধারণা রয়েছে যে, অজু করার পর যদি সতর অনাবৃত হয়, তাহলে অজু ভেঙে যায়। যেমন অজু করার পর কোনোভাবে হাঁটু খুলে গেলে অনেকে ভাবেন তার অজু ভেঙ্গে গেছে। অজুর মাঝে পা ধোয়ার সময় হাঁটু খুলে গেলেও অনেকে আবার শুরু থেকে অজু করেন অজু নষ্ট হয়ে গেছে ভেবে।
প্রচলিত এ ধারণা ঠিক নয়। হাঁটু সতরের অন্তর্ভুক্ত এবং তা ঢেকে রাখা অপরিহার্য এটা ঠিক আছে। অজুর সময় সতর্কতার সাথে পা ধোয়া উচিত যেন হাঁটু খুলে না যায়। কিন্তু এ ধারণা ঠিক নয় যে হাঁটু বা সতরের কোনো অংশ খুলে গেলে অজু ভেঙ্গে যায়। অজুর মাঝে হাঁটু খুলে গেলেও নতুন করে অজু করা আবশ্যক হয় না।
যেসব কারণে অজু ভেঙে যায়
১. পেশাব ও পায়খানার রাস্তা দিয়ে পেশাব, পায়খানা, বাতাস, ক্রিমি ইত্যাদিসহ যে কোনো কিছু বের হলে অজু ভেঙে যায়।
২. শরীরে যে কোনো জায়গা থেকে রক্ত বা পুঁজ বের হয়ে গড়িয়ে পড়লে অজু ভেঙে যায়।
৩. খাবার, পানি, রক্ত বা পিতের পানি মুখ ভরে বমি হলে অজু ভেঙে যাবে। অল্প অল্প করে কয়েক বার যদি বমি হয় এবং সবগুলোর মিলিত পরিমাণ যদি মুখ ভরে কৃত বমির সমান হয়, তাহলেও অজু ভেঙে যায়।
৪. দাঁত বা মাড়ি থেকে অল্প রক্ত বের হলে অজু ভাঙবে না। কিন্তু যদি বেশি রক্ত বের হয়, থুথু ফেললে যদি দেখা যায় থুথুর চেয়ে রক্তের পরিমাণ বেশি, তাহলে অজু ভেঙে যায়।
৫. যৌনাঙ্গ থেকে মযী (অর্থাৎ যৌন উত্তেজনার সময় বীর্য বের হওয়ার আগে সাধারণত যা নির্গত হয়) বের হলে অজু ভেঙে যায়।
৬. নারীদের যৌনাঙ্গ থেকে ইস্তেহাযার রক্ত বের হলে অজু ভেঙে যায়। (হায়েয নেফাস ছাড়া কোনো অসুস্থতার কারণে নারীদের যৌনাঙ্গ থেকে রক্ত বের হলে তাকে ইস্তেহাযা বলা হয়।)
৭. নারীদের স্তন থেকে দুধ ছাড়া অন্য কিছু যেমন রক্ত, পূজ বা শরীরের রস বের হলে অজু ভেঙে যায়।
৮. নারীরা নিজেদের যৌনাঙ্গে আঙুল প্রবেশ করালে অজু ভেঙে যায়।