গুনাহ থেকে বাঁচতে আল্লাহর সাহায্য প্রয়োজন হয়।দুনিয়ার জীবন মানুষের জন্য পরীক্ষাক্ষেত্র। শয়তান ও নফসে আম্মারা বা কুপ্রবৃত্তি মানুষকে পাপাচারে লিপ্ত করার জন্য অনবরত চেষ্টা করতে থাকে। সুস্থ বিবেকের অধিকারী কেউ মূলত খারাপ হতে চায় না। আল্লাহর যা অপরাধ বা গুনাহ গণ্য করেছেন, তা প্রত্যেকটা সুস্থ বিবেকের কাছেই খারাপ কাজ। এরপরও প্রবৃত্তির তাড়নায় ও শয়তানের ধোঁকায় পড়ে মানুষ খারাপ কাজ করে।
আল্লাহর অনেক বড় রহমত যে তিনি বারবার গুনাহগার বান্দাকে ক্ষমা করেন। গুনাহগার যখনই যথাযথভাবে লজ্জিত হয়, গুনাহ ছেড়ে দেয় এবং তওবা করে, তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন। কোরআনের অনেকগুলো আয়াতে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন তিনি গাফুর ও রাহিম অর্থাৎ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। গুনাহ করে ফেললে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হতে নিষেধ করে সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে আল্লাহ বলেন,
قُلْ يٰعِبَادِيَ الَّذِيْنَ اَسْرَفُوْا عَلٰۤي اَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوْا مِنْ رَّحْمَةِ اللهِ اِنَّ اللهَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعًا اِنَّهٗ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ.
বলো, ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সব পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা জুমার: ৫৩)
শয়তানের ধোঁকায় পড়ে গুনাহ করে ফেললে যতো দ্রুত সম্ভব তওবা করতে হবে। লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে ওই গুনাহ থেকে ফিরে আসতে হবে এবং ভবিষ্যতে আর ওই গুনাহ না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হবে। ভবিষ্যতে আবার যেন শয়তান ধোঁকায় না ফেলতে পারে সেজন্য সচেষ্ট হতে হবে।
মানুষ নিজের শক্তি বা ক্ষমতায় গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পারে না। শয়তানের চক্রান্ত থেকে আত্মরক্ষা করতে পারে না। নিজের চেষ্টার পাশাপাশি আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও তাওফিকেরও প্রয়োজন হয়। তাই গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে নিজের চেষ্টার পাশাপাশি আল্লাহর সাহায্যও প্রার্থনা করা দরকার। বিভিন্ন হাদিসে নবিজির (সা.) এমন অনেক দোয়া বর্ণিত হয়েছে যেগুলোতে তিনি গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করেছেন। এখানে আমরা এ রকম দুটি দোয়া উল্লেখ করছি:
১. হজরত যিয়াদ ইবনু ইলাকাহ (রহ.) তার চাচার সনদে বর্ণনা করেছেন। নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দোয়া করতেন,
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الأَخْلاَقِ وَالأَعْمَالِ وَالأَهْوَاءِ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন মুনকারাতিল আখলাকি ওয়াল আমালি ওয়াল আহওয়ায়ি।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে মন্দ চরিত্র, গর্হিত কাজ ও কুপ্রবৃত্তি থেকে আশ্রয় চাই। (সুনানে তিরমিজি: ৩৫৯১)
২. শুতায়র ইবনে শাকাল ইবনে হুমায়দ (রহ.) তার বাবা শাকাল (রা.) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি একদিন বললাম, হে আল্লাহর নবি! আমাকে এমন একটি দোয়া শিখিয়ে দিন, যার মাধ্যমে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে পারি। তখন নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, পড়:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بك من شَرّ سَمْعِي وَمن شَرّ بَصَرِي وَشَرِّ لِسَانِي وَشَرِّ قَلْبِي وَشَرِّ مَنِيِّي
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিন শাররি সাম’ঈ, ওয়া মিন শাররি বাসারী, ওয়া শাররি লিসানী ওয়া শাররি কলবী ওয়া শাররি মানিয়্যি
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আমার কানের (মন্দ শোনার) অনিষ্টতা, চোখের (দেখার) অনিষ্টতা, আমার মুখের (বলার) অনিষ্টতা, আমার অন্তরের (চিন্তা-ভাবনার) অনিষ্টতা ও বীর্যের (ব্যভিচারের) অনিষ্টতা থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই। (সুনানে আবু দাউদ: ১৫৫১, সুনানে তিরমিজি: ৩৪৯২)