বিশ্বনবি মুহাম্মাদের (সা.) জন্ম ও নবুয়তলাভ ছিল মানবজাতির প্রতি, বিশ্বজগতের প্রতি আল্লাহর বড় নেয়ামত ও করুণা। কোরআনে আল্লাহ বলেন, আমি তোমাকে পাঠিয়েছি বিশ্বজগতের প্রতি করুণা হিসেবে। (সুরা আম্বিয়া: ১০৭)
রাসুল (সা.) মানুষকে আল্লাহর বাণী শুনিয়েছেন, পরিশুদ্ধ করেছেন। মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন আল্লাহর কিতাব ও হেকমত, মানুষকে শিখিয়েছেন যা তারা জানতো না, নিজেদের চেষ্টা বা গবেষণার মাধ্যমে জানতেও পারতো না। আল্লাহ বলেন, আমি তোমাদের মধ্যে একজন রাসুল প্রেরণ করেছি তোমাদের মধ্য থেকে, যে তোমাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে, তোমাদেরকে পবিত্র করে এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়। আর তোমাদেরকে শিক্ষা দেয় এমন কিছু যা তোমরা জানতে না। (সুরা বাকারা: ১৫১)
পরের আয়াতে আল্লাহ তাআলা এ নেয়ামতের জন্য শোকর আদায় করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, তাই তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমি তোমাদেরকে স্মরণ করবো আর আমার শোকর আদায় করো, না-শোকরি করো না। (সুরা বাকারা: ১৫২)
এই শোকর বা কৃতজ্ঞতা শুধু মুখে নয়, বরং কাজেও আদায় করতে হবে। নবিজিকে (সা.) আল্লাহর রাসুল বলে স্বীকার করে তার আনিত দীন গ্রহণ করা, ঈমান গ্রহণ করা, তাকে ভালোবেসে তার আদর্শ অনুসরণ করা আল্লাহ তাআলার কৃতজ্ঞতা আদায়ের অংশ।
ঈমানের প্রথম ধাপ এক আল্লাহকে ইলাহ বলে মেনে নেওয়া। দ্বিতীয় ধাপ মুহাম্মাদকে (সা.) আল্লাহর বান্দা, নবি ও রাসুল বলে মেনে নেওয়া, তাকে অনুসরণ করা। শুধু আল্লাহকে ইলাহ বলে মেনে নিলেই ঈমান পূর্ণ হয় না। আল্লাহর আনুগত্যের পাশাপাশি নবিজির (সা.) অনুসরণও ঈমানের অংশ। কোরআনে আল্লাহ তাআলাকে ভালোবাসলে নবিজির অনুসরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, বলো, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। (সুরা আলে ইমরান: ৩১)
আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, রাসুল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে তিনি তোমাদের নিষেধ করেন তা থেকে বিরত হও। (সুরা হাশর: ৭) নবিজিকে (সা.) মুমিনদের জন্য উত্তম আদর্শ ঘোষণা করে আল্লাহ তাআলা বলেন, অবশ্যই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে। (সুরা আহজাব: ২১)
মানুষের বিশ্বাস, আনুগত্য, অনুসরণ তার ভালোবাসার সাথে সম্পৃক্ত। মানুষ যাকে ভালোবাসে, তাকেই বিশ্বাস করে ও অনুসরণ করে। তাই আল্লাহ ও তার রাসুলের (সা.) প্রতি অন্তরে ভালোবাসা থাকাও ঈমানের অংশ। আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি ভালোবাসা এবং তাদের ভালোবাসাকে নিজের জীবন ও পার্থিব সব কিছুর ওপর প্রাধান্য দেওয়া ছাড়া মুমিন হওয়া যায় না। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তিনটি গুণের অধিকারী ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ পায়। এর মধ্যে প্রথমটি হলো, আল্লাহ ও তার রাসুলের ভালোবাসা; তার কাছে আল্লাহ ও তার রাসুল বাকি সব কিছুর চেয়ে বেশি প্রিয়। (সহিহ মুসলিম: ৬৭)
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার বাবা-মা, সন্তান-সন্ততি ও সমস্ত মানুষ থেকে প্রিয় হবো। (সহিহ বুখারি: ১৫)
সাহাবিরা আল্লাহ ও তার রাসুলকে (সা.) অত্যন্ত ভালোবাসতেন। আল্লাহর ও তার রাসুলের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে এমন কি নিজের জীবন দিয়ে দিতেও প্রস্তুত থাকতেন তারা। হজরত আনাস (রা.) বলেন, এক সাহাবি একবার আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! কেয়ামত কবে হবে? তিনি পাল্টা প্রশ্ন করলেন, কী প্রস্তুতি নিয়েছেন কেয়ামতের? সাহাবি জবাব দিলেন, আমি আল্লাহ ও তার রাসুলকে ভালোবাসি, এটাই আমার প্রস্তুতি। নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, নিশ্চয়ই যাকে আপনি ভালবাসেন, কেয়ামতের দিন তার সাথেই থাকবেন।
হজরত আনাস (রা.) বলেন, ইসলাম গ্রহণের পর আমাদের কাছে সবচেয়ে খুশির বিষয় ছিল নবিজির (সা.) এই কথাটি, যাকে আপনি ভালবাসেন, কেয়ামতের দিন তার সাথেই থাকবেন। আমি আল্লাহ ও তার রাসুলকে ভালোবাসি। আবু বকর ও ওমরকেও। তাই আশা রাখি, আখেরাতে আমি তাদের সাথেই থাকব, যদিও তাদের মতো আমল করতে পারিনি। (সহিহ মুসলিম: ২৬৩৯)
আমরাও যদি যথার্থভাবে আল্লাহর রাসুলকে ভালোবাসতে পারি, সব কাজে তাকে অনুসরণ করতে পারি, আশা করা যায়, আমরাও আল্লাহর রাসুলের (সা.) সাথেই থাকবো। আল্লাহ তাআলা আমাদের তওফিক দান করুন!