দুনিয়ার জীবনে আল্লাহর দেওয়া সব ধরনের জীবন-উপকরণ ও নেয়ামতকে রিজিক বলা হয়। রিজিক শুধু খাবার-পানীয় নয়, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষাসহ জীবনে টিকে থাকার অন্য সহায়ক মাধ্যম ও সুবিধাগুলোও রিজিক।
কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, জমিনে বিচরণকারী যত প্রাণী আছে, সবার রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর ওপরে। (সুরা হুদ: ৬) অর্থাৎ মানুষসহ সব প্রাণীর রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহ তাআলার ওপর; তিনিই সবাইকে রিজিক দান করেন। আরেক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আল্লাহ তার বান্দাদের প্রতি অতি দয়ালু। তিনি যাকে ইচ্ছা রিজিক দান করেন। তিনি মহাশক্তিধর, মহাপরাক্রমশালী। (সুরা শুরা: ১৯)
আল্লাহ তাআলা সবাইকে সমান রিজিক দেন না। কাউকে বেশি দেন, কাউকে কম দেন। কাউকে প্রচুর ধন-সম্পদ দান করেন, কাউকে দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত করেন। আল্লাহ তার ইচ্ছা ও হেকমত অনুযায়ী রিজিক বণ্টন করেন। এভাবে পৃথিবীতে ভারসাম্য বজায় থাকে এবং আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের পরীক্ষা করেন। বেশি রিজিক যাদের দেন, তারা যেমন এক রকম পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যায়, যারা কম রিজিক পায়, তারাও পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যায়।
অনেক সময় মানুষ নিজের কৃতকর্মের কারণেও রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। মানুষের কাজের প্রতিদান ও শাস্তির মূল জায়গা যদিও আখেরাত, মাঝে মাঝে দুনিয়াতেও আল্লাহ তাআলা মানুষকে তার কৃতকর্মের শাস্তি দেন। এখানে আমরা কোরআন ও হাদিস থেকে উত্তম রিজিক থেকে বঞ্চিত হওয়ার দুটি কারণ উল্লেখ করছি।
১. গুনাহ করা
গুনাহ করলে মানুষ আল্লাহর নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হয়। উত্তম খাবার-পানীয়, নেক সন্তান-সন্ততি, সুখ-সমৃদ্ধি থেকে বঞ্চিত হয়। গুনাহের আখেরাতের শাস্তি তো রয়েছেই, গুনাহ দুনিয়াতেও আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ। সাওবান (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, দোয়া ছাড়া আর কিছুই ভাগ্য পরিবর্তন করে না, নেক কাজ ছাড়া আর কিছুই আয়ু বাড়ায় না এবং পাপ ছাড়া আর কিছুই মানুষকে রিজিক থেকে বঞ্চিত করে না। (সুনানে ইবনে মাজা: ৪০২২)
অর্থাৎ দোয়ার মাধ্যমে মানুষের তাকদীরে মুআল্লাক বা কাজ সংশ্লিষ্ট ভাগ্য পরিবর্তন হতে পারে, নেক কাজ করলে হায়াত বৃদ্ধি পেতে পারে বা জীবন বরকতময় হতে পারে এবং গুনাহ করলে মানুষ রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়।
২. নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করা
আল্লাহ তাআলা যখন নেয়ামত দান করেন, তখন তিনি চান বান্দা তার নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করুক। মুখে তার প্রশংসা করুক, তার দয়া স্বীকার করুক, কাজেও তার বিধান ও নির্দেশনার আনুগত্য করুক। আল্লাহ তাআলার দেওয়া সম্পদ লাভ করলে তার নির্দেশ অনুযায়ী জাকাত দেওয়া, সদকা দেওয়া আল্লাহর তাআলার শুকরিয়া বা কৃতজ্ঞতা। সুস্থ থাকলে নামাজ পড়া ও রোজা রাখাও আল্লাহর তাআলার শুকরিয়া আদায়ের অন্তর্ভুক্ত।
আল্লাহ তাআলার নেয়ামত পেয়ে তা নিজের কৃতিত্ব বলে জাহির করা, দম্ভ ও অহংকার করা, ওই নেয়ামতের হক আদায় না করা আল্লাহ তাআলার না-শোকরি বা অকৃতজ্ঞতা গণ্য হয়।
বান্দা শুকরিয়া আদায় করলে আল্লাহ তাআলা নেয়ামত বৃদ্ধি করে দেন, আর বান্দা যদি অকৃতজ্ঞ হয়, তাহলে আল্লাহ শাস্তি হিসেবে নেয়ামত উঠিয়ে নেন। কোরআনে শোকর আদায় করলে নেয়ামত বাড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ও অকৃতজ্ঞতার জন্য কঠোর শাস্তির ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ বলেন, তোমরা যদি কৃতজ্ঞতা আদায় কর তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদেরকে আরও বাড়িয়ে দেবো, আর যদি তোমরা অস্বীকার করো, তাহলে আমার আজাব অবশ্যই কঠিন। (সুরা ইবরাহিম: ৭)