দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ লাভের দোয়া

ধর্ম ডেস্ক
  ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২২:২০

আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা, প্রার্থনা করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। দোয়ার মাধ্যমে যেমন আল্লাহর আনুগত্য ও রহমত লাভ করা যায়, আল্লাহর আজাব থেকে বাঁচা যায়, শয়তানের ধোঁকা ও দুনিয়াবি বিপদ-আপদ থেকে বেঁচে থাকা যায়, একইভাবে দোয়ার মাধ্যমে ঈমানও প্রকাশ পায়। আল্লাহর প্রতি বান্দার ভরসা ও নির্ভরতা প্রকাশ পায়। বান্দার বিনয় ও অহংকারহীনতা প্রকাশ পায়। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেছেন, তোমাদের রব বলেন, তোমরা আমার কাছে দোয়া কর, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব। যারা অহংকারবশত আমার ইবাদত হতে বিমুখ তারা অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে। (সুরা গাফির: ৬০)
মুমিন আল্লাহ তাআলার কাছে যে কল্যাণকর দোয়া করে, তা কখনও ব্যর্থ হয় না। দোয়ার বদলা আল্লাহ তাআলা অবশ্যই দান করেন। তবে বিভিন্ন সময় দোয়ার প্রতিদান বিভিন্ন রকম হয়। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যখন কোনো মুমিন ব্যক্তি এমন দোয়া করে যে দোয়াতে কোনো পাপ ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয় নেই, তাহলে আল্লাহ তিন পদ্ধতির কোনো এক পদ্ধতিতে তার দোয়া কবুল করে নেন; হয়তো যে দোয়া সে করেছে তা ওইভাবেই কবুল করেন, তার দোয়ার প্রতিদান আখেরাতের জন্য সংরক্ষণ করেন অথবা এ দোয়ার মাধ্যমে তার ওপর আগত কোনো বিপদ তিনি দূর করে দেন।
এ কথা শুনে সাহাবিরা বললেন, আমরা তাহলে অধিক পরিমাণে দোয়া করতে থাকবো। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা যত দোয়াই করবে আল্লাহ তার চেয়ে অনেক বেশি কবুল করতে পারেন। (বুখারি ফিল আদাবিল মুফরাদ)
এখানে আমরা কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত এমন কিছু দোয়া উল্লেখ করছি যে দোয়ার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ প্রার্থনা করতে পারি:

১. দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ প্রার্থনা করতে কোরআনে বর্ণিত এ দোয়াটি আমরা করতে পারি,

رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِی الدُّنۡیَا حَسَنَۃً وَّ فِی الۡاٰخِرَۃِ حَسَنَۃً وَّ قِنَا عَذَابَ النَّارِ

উচ্চারণ: ‍রাব্বানা আতিনা ফিদ-দুনিয়া হাসানাহ ওয়া ফিল-আখিরাতি হাসানাহ ওয়া কিনা আযাবান-নার

অর্থ: হে আমাদের রব, আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দিন, আখেরাতেও কল্যাণ দিন এবং আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন। (সুরা বাকারা: ২০১)
আনাস (রা.) বলেন, নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ দোয়াটি সবচেয়ে বেশি করতেন। (সহিহ বুখারি) সহিহ মুসলিমে আরও বর্ণিত হয়েছে, আনাস (রা.) নিজেও যখন কোনো একটি দোয়া করার ইচ্ছা করতেন, তখন এ দোয়াটি করতেন। আর যখন বিভিন্ন দোয়া করার ইচ্ছা করতেন, তখন সেগুলোর মধ্যে এ দোয়াও থাকতো। (সহিহ মুসলিম)

২. নবিজি (সা.) দোয়া করতেন,

اَللَّهُمَّ اِنِّى أَسْألُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা ওয়াত তুক্বা ওয়াল আফাফা ওয়াল গিনা।

অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে চাই হেদায়াত, তাকওয়া, চারিত্রিক পবিত্রতা ও স্বচ্ছলতা। (সহিহ মুসলিম)
দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের জন্য এই দোয়াটিও আমরা পড়তে পারি।

৩. নবিজি (সা.) দোয়া করতেন

اللهم اكْفِنِي بِحَلَالِكَ عن حَرَامِكَ وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাকফিনি বি হালালিকা আন হারামিকা, ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক।
অর্থ: হে আল্লাহ! হারামের পরিবর্তে হালাল রুজি আমার জন্য যথেষ্ট করুন। আপনি ছাড়া আমাকে কারো মুখাপেক্ষী করবেন না এবং নিজের অনুগ্রহে আমাকে স্বচ্ছলতা দান করুন। (সুনানে তিরমিজি)
গুনাহমুক্ত জীবন, উত্তম রিজিক ও স্বচ্ছলতার জন্য এ দোয়াটি আমরা করতে পারি।

৪. নবিজি (সা.) দোয়া করতেন,

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْجُبْنِ وَالْبُخْلِ وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়াল আজঝি ওয়াল কাসালি, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া দালাইদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই- দুশ্চিন্তা, পেরেশানী, অক্ষমতা, অলসতা, ভীরুতা, কৃপণতা, ঋণভার ও মানুষের প্রভাবাধীন হওয়া থেকে। (সহিহ বুখারি)
দুনিয়ার যাবতীয় বিপদ-মসিবত থেকে মুক্তি পেতে, কর্মশক্তি ও নেক কাজের তওফিক লাভ করতে এই দোয়াটি আমরা করতে পারি।