বিনয় ও একাগ্রতা নামাজের প্রাণ

ধর্ম ডেস্ক
  ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১৯:৩২

ইসলামে ঈমানের পর নামাজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ৮২ বার সরাসরি নামাজের কথা বলেছেন। নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে বহু হাদিস বর্ণিত রয়েছে। সুরা বাকারার শুরুতে মুত্তাকিদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হিসেবে ঈমান, নামাজ আদায় ও জাকাত প্রদানের কথা উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা বলেন, এই সেই কিতাব, যাতে কোন সন্দেহ নেই, মুত্তাকিদের জন্য হিদায়াত। যারা গায়েবের প্রতি ঈমান আনে, নামাজ আদায় করে এবং আমি তাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। (সুরা বাকারা: ৩, ৪)
নামাজ মহান আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্কের মাধ্যম। নামাজে বান্দা সরাসরি আল্লাহ তাআলার দরবারে দাঁড়ায়। তার প্রতি প্রশংসা নিবেদন করে, তার কাছে প্রার্থনা করে। তাই বান্দার অবশ্যকর্তব্য নামাজে অত্যন্ত বিনয়ী ও বিনম্র থাকা। নিজের আত্মা ও অন্তরকে পরিপূর্ণভাবে আল্লাহমুখী করা। নামাজে যিনি যত বেশি আল্লাহমুখী তার নামাজ ততই প্রাণবন্ত। খুশুখুজু বা বিনয় ও একাগ্রতা নামাজের সৌন্দর্য। নামাজে যার মনোযোগ যত বেশি, তার নামাজ ততই গ্রহণযোগ্য।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয়ই সফলতা অর্জন করেছে মুমিনগণ, যারা নিজেদের নামাজে বিনয়ী ও একাগ্র। (সুরা মুমিনুন: ১, ২)
নামাজে অমনোযোগিতা ও লোক দেখানোর প্রবণতার জন্য শাস্তির ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, সেই নামাজ আদায়কারীদের জন্য দুর্ভোগ, যারা নিজদের নামাজে অমনোযোগী, যারা লোক দেখানোর জন্য তা করে। (সুরা মাউন: ৪-৬)
নামাজে যথাযথ বিনয় ও একাগ্রতা না থাকলে, একাগ্র মনে আল্লাহমুখী হয়ে নামাজ না পড়লে নামাজের সওয়াব পুরোপুরি পাওয়া যায় না। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, এমন অনেক লোক আছে যারা নামাজ পড়ে কিন্তু তাদের নামাজ পুরাপুরি কবুল না হওয়ায় পূর্ণ সওয়াব তারা পায় না। তাদের কেউ দশ ভাগের এক ভাগ, কেউ নয় ভাগের এক ভাগ, আট ভাগের এক ভাগ, সাত ভাগের এক ভাগ, ছয় ভাগের এক ভাগ, পাঁচ ভাগের এক ভাগ, চার ভাগের এক ভাগ, তিন ভাগের এক ভাগ বা দুই ভাগের এক ভাগ সওয়াব পেয়ে থাকে। (সুনানে আবু দাউদ)
সুতরাং নামাজ যে কোনোভাবে আদায় করে ফেললেই হয়ে যায় না। যথাযথ মনোযোগ ও প্রাণ না থাকলে হতে পারে ওই নামাজের এক দশমাংশ সওয়াবও আপনি পাচ্ছেন না।
নামাজে অমনোযোগিতার একটি আলামত হলো এদিক সেদিক তাকানো। হাদিসে এসেছে, নামাজে এদিক সেদিক তাকালে নামাজের সওয়াব কমে যায়। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নামাজে এদিক ওদিক তাকানো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, এটা এক ধরণের ছিনতাই। এভাবে শয়তান বান্দার নামাজের অংশবিশেষ কেড়ে নেয়। (সহিহ বোখারি) অর্থাৎ নামাজের কিছু অংশের সওয়াব থেকে সে বঞ্চিত হয়ে যায়।
আরেকটি হাদিসে এসেছে, নামাজের সময় আল্লাহ তাআলা সর্বক্ষণ বান্দার প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখেন, যতক্ষণ না নামাজি অন্য কোনো দিকে ভ্রুক্ষেপ করে। যখন সে অন্য কোনো দিকে ভ্রুক্ষেপ করে, তখন আল্লাহ তাআলা তার দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেন। (সুনানে আবু দাউদ)
নামাজে আমাদের দৃষ্টি থাকতে হবে দাঁড়ানো অবস্থায় সিজদার জায়গায়, রুকু অবস্থায় দুই পায়ের মাঝখানে, বসা অবস্থায় কোলের দিকে, সিজদা অবস্থায় রাখতে হবে নাকের দিকে। শরীর যথাসম্ভব স্থীর রাখতে হবে। অন্তরে জাগরুক রাখতে হবে আল্লাহর মহত্ব ও ভয়। তাহলে আমাদের নামাজ প্রাণবন্ত হবে। ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, আল্লাহর সামনে নিস্প্রাণ মৃত ইবাদত পেশ করতে আমাদের লজ্জা পাওয়া উচিত।