নবীজি (সা.)-এর প্রিয় সাহাবিদের অন্যতম জুবাইর ইবনে আউওয়াম (রা.)। উপনাম আবু আব্দুল্লাহ। উপাধি ‘হাওয়ারিয়্যু রাসুল’ [রাসুল (সা.)-এর বিশেষ সহযোগী]। বাবা খাদিজা (রা.)-এর ভাই আউওয়াম।
মা রাসুল (সা.)-এর ফুফু সাফিয়্যা বিনতে আব্দুল মুত্তালিব। বড় হওয়ার পর বিয়ে করেছেন আবু বকর (রা.)-এর বড় মেয়ে আসমা (রা.)-কে, যিনি রাসুল (সা.)-এর প্রিয়তমা সহধর্মিণী আয়েশা (রা.)-এর বৈমাত্রেয় বড় বোন। এভাবে রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ছিল তাঁর একাধিক আত্মীয়তার সম্পর্ক।
একাধিক আত্মীয়তার সম্পর্কের পাশাপাশি রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে রয়েছে তাঁর ঘনিষ্ঠতাও। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি রাসুল (সা.)-এর অনেক সহযোগিতা করেন। ফলে তিনি প্রিয় নবীর প্রিয়পাত্রে পরিণত হন। বুখারি-মুসলিমের একাধিক বর্ণনায় আছে যে খন্দক যুদ্ধের সময় রাসুল (সা.) আহ্বান করলেন, কে আছ প্রস্তুত শত্রুপক্ষ ‘বনু কুরাইজা’র অবস্থান জেনে আসতে? জুবাইর (রা.) বলেন, আমি প্রস্তুত। রাসুল (সা.) একে একে তিনবার এই আহ্বান করলেন। তিনবারই জুবাইর (রা.) বলেন, আমি প্রস্তুত। তখন রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘প্রত্যেক নবীর রয়েছে বিশেষ সহযোগী। আমার বিশেষ সহযোগী হলো জুবাইর। ’ (সিয়ারু আলামিন নুবালা : ৩/৩৬; আল-ইসাবাহ : ২/৪৫৯)
ইবনে কাছির (রহ.) বলেন, ইসলামের প্রাথমিক যুগে (আল্লামা আইনির বক্তব্য মতে মাত্র ১৬ বছর বয়সে) জুবাইর (রা.) ইসলাম গ্রহণ করেন। প্রথম পর্বে ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে তিনি ছিলেন অনন্য ও বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। যদিও তাঁর বয়স ছিল কম, তবু দৃঢ়তা ও সাহসিকতায় পিছিয়ে ছিলেন না কারো চেয়ে। প্রাথমিক পর্যায়ে মক্কার অন্য মুসলমানের মতো তিনিও অত্যাচার ও নিপীড়নের শিকার হন। অতিষ্ঠ হয়ে জন্মভূমি মক্কা ছেড়ে হিজরত করেন হাবশায়। কিছুকাল পর মক্কায় ফিরে আসেন এবং পরবর্তী সময়ে মদিনায় হিজরত করেন। মদিনার সম্ভ্রান্ত সাহাবি, আকাবার বাইয়াতে অংশগ্রহণকারীদের অন্যতম সালামা ইবনে সালামা (রা.)-এর সঙ্গে তাঁর ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক স্থাপিত হয়। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৭/২৪৮)
রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে তিনি সব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধ-জিহাদে তাঁর অংশগ্রহণ ও সাহসী ভূমিকা ছিল ভূয়সী প্রশংসার যোগ্য। তৃতীয় খলিফা উসমান (রা.)-এর হত্যার বিচারকে ইস্যু করে আলী (রা.) ও সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধে জুবাইর (রা.) প্রথমে হযরত আলী (রা.)-এর বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেন। সংঘটিত হয় জঙ্গে জামাল। আলী (রা.) তাঁকে যুদ্ধের ময়দানে রাসুল (সা.)-এর একটি বাণী স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি যুদ্ধের ময়দান ত্যাগ করে তাঁবুতে ফিরে যান। এরপর নিরাপদ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে একাকী বেরিয়ে পড়েন। বিশ্বাসঘাতক আমর ইবনে জারমুয রণসজ্জায় ঘোড়া নিয়ে তাঁর সঙ্গে মিলিত হয়। কিছু পথ তাঁর সঙ্গে চলার পর পথিমধ্যে বসরার অন্তর্গত সাফাওয়ান নামক স্থানে জোহরের নামাজের জন্য অবতরণ করলেন। হতভাগা বলল, আমিও আপনার সঙ্গে নামাজ আদায় করব। দুজন নামাজে দাঁড়ালেন।
জুবাইর (রা.) যখনই মহান মাবুদের সমীপে সিজদাবনত হলেন, অমনি হতভাগা জারমুয তরবারির এক আঘাতে রাসুল (সা.)-এর ‘হাওয়ারি’র শির দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। ইন্না লিল্লাহি...! এরপর সে জুবাইর (রা.)-এর তরবারি, বর্ম ইত্যাদি নিয়ে আলী (রা.)-এর কাছে উপস্থিত হলো এবং অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে তার কৃতিত্বের বর্ণনা দিল। আলী (রা.) চরম অনুতাপ ও অনুশোচনার সঙ্গে বলেন, ওরে ঘাতক! শুনে রাখ, তোর জন্য জাহান্নাম অপেক্ষা করছে। এটা ছিল ৩৬ হিজরি সনে জমাদিউস সানির ঘটনা। তখন জুবাইর (রা.)-এর বয়স ছিল ৬৪ বছর। (আত-তবাকাতুল কুবরা : ৩/৮১)