ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালান বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতি ঘটে তার টানা ১৬ বছরের শাসনের। এই ঘটনার মাত্র চার মাস পর আরেক স্বৈরশাসকের পতন দেখলো বিশ্ব। রোববার (৮ ডিসেম্বর) বিদ্রোহীদের সশস্ত্র অভিযানের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। পতন হয়েছে তার টানা দুই যুগ শাসনের।
কয়েক মাসের মধ্যে এভাবে একাধিক স্বৈরশাসকের পতনে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে—হাসিনা গেলেন, আসাদ গেলেন, এরপর কে?
বর্তমানে বেশ কিছু দেশে স্বৈরশাসন বা একনায়কতান্ত্রিক শাসন চলছে। এসব দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সীমিত বা বিলোপ করা হয়েছে। ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত রয়েছে একজন ব্যক্তি, সামরিক বাহিনী বা একটি নির্দিষ্ট দলের হাতে। অর্থাৎ, এই দেশগুলোতেই হতে পারে পরবর্তী স্বৈরাচারের পতন।
১. উত্তর কোরিয়া
কিম জং উনের নেতৃত্বে দেশটি কঠোর একনায়কতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই বললেই চলে। শাসক পরিবারের বিরুদ্ধে যে কোনো ধরনের বিরোধিতা কঠোর হাতে দমন করা হয়।
২. চীন
যদিও চীন নিজেদের সমাজতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্র বলে দাবি করে, তবে দেশটির ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) হাতে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সম্প্রতি তার ক্ষমতা আরও সুসংহত করেছেন, যা একনায়কতান্ত্রিক শাসনের লক্ষণ।
৩. বেলারুশ
আলেক্সান্দার লুকাশেঙ্কো দীর্ঘদিন ধরে বেলারুশ শাসন করছেন। নির্বাচনে কারচুপি এবং বিরোধীদের দমন করার কারণে তার সরকার স্বৈরাচারী বলে বিবেচিত হয়।
৪. ভেনেজুয়েলা
নিকোলাস মাদুরোর শাসনে দেশটি গণতন্ত্র থেকে দূরে সরে গেছে। বিরোধীদের দমন, স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ এবং রাষ্ট্রের ক্ষমতা একচেটিয়াভাবে কুক্ষিগত করা হয়েছে।
৫. রাশিয়া
ভ্লাদিমির পুতিন দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়ার ক্ষমতায় রয়েছেন। বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং সংবাদমাধ্যমের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করায় দেশটির শাসনব্যবস্থা অনেকটা স্বৈরতান্ত্রিক রূপ নিয়েছে।
৬. মিয়ানমার
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে সামরিক জান্তা সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। ফলে দেশটিতে একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কার্যকর রয়েছে।
৭. ইরান
ইসলামী প্রজাতন্ত্র হিসেবে পরিচিত হলেও ইরানের সর্বোচ্চ ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির হাতে। দেশটিতে রাজনৈতিক ও সামাজিক স্বাধীনতা সেখানে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
৮. কম্বোডিয়া
কম্বোডিয়ার শাসনব্যবস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক বলা হলেও, দেশটি কার্যত স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের অধীনে রয়েছে বলে অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন। বিশেষ করে হুন সেনের কয়েক দশকের শাসনকালে এটি আরও স্পষ্ট হয়েছে। ২০২৩ সালে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হন হুন সেনের ছেলে হুন মানেত। গত আগস্টে তিনি আশঙ্কাপ্রকাশ করে বলেছিলেন, বাংলাদেশের ঘটনায় অনুপ্রাণিত হয়ে কম্বোডিয়ায়ও সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হতে পারে।
এছাড়া তাজিকিস্তান, ইরিত্রিয়া, তুর্কমেনিস্তান, জিম্বাবুয়ে, বুরুন্ডি, কিউবা, সৌদি আরব, বাহরাইন, উগান্ডার মতো দেশগুলোতেও স্বৈরশাসন বা একনায়কতন্ত্র বিদ্যমান। ফলে নজর থাকবে এই দেশগুলোতেও।