
বিশ্বরাজনীতির ইতিহাসে প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী পদটির আরেক নাম দেশনায়ক। রাষ্ট্র ও জনগণের আলোর পথের দিশারি। রাষ্ট্র পরিচালনার সেই গৌরবময় চেয়ারে বসে নিজের কর্মফলে কেউ হন ধিক্কৃত, কেউ নন্দিত। কৃতকর্মের দায়ে গদি থেকে ছিটকে পড়তেই আবার রাষ্ট্রযন্ত্রের কঠোর বিচারের মুখে পড়তে হয়েছে অনেককেই। দিনশেষে কপালে জুটেছে সর্বোচ্চ আদালতের সর্বোচ্চ শাস্তি-মৃত্যুদণ্ড! দেশে দেশে পথভ্রষ্ট সেসব অপশাসকের সংখ্যাও কম নয়! যারা বেঁচে থাকতেই তাদের দমন-পীড়ন আর নিষ্ঠুর শাসনের পরিণতি ভোগ করে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে পড়ে আছেন! গণমুখে তাদের উপাধি-জনশত্র“! ক্ষমতার দম্ভ ফুরাতেই দু:শাসন, স্বৈরশাসন, গণহত্যা কিংবা একনায়কতন্ত্রের অভিযোগে দাঁড়িয়েছেন আদালতের কাঠগড়ায়। অনেকেরই জীবনের সমাপ্তি ঘটেছে ফাঁসির দড়িতে। ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ সেই ঘটনাগুলোর সারসংক্ষেপ নিচে তুলে ধরা হলো-
ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম চার্লস
১৬৪৯ সালের ৩০ জানুয়ারি, ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম চার্লসকে শিরচ্ছেদ করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। কর্তৃত্ববাদী শাসন এবং পার্লামেন্টের সঙ্গে বিরোধের জেরে রাষ্ট্রদ্রোহের জন্য দোষী সাব্যস্ত হন তিনি। বিচারকরা রায়ে তাকে ‘বিশ্বাসঘাতক, হত্যাকারী এবং জনশত্র“’ হিসাবে চিহ্নিত করে শিরচ্ছেদ করার নির্দেশ দেন।
তুরস্কের আদনান মেন্ডেরেস
আদনান মেন্ডেরেস তুরস্কের ইতিহাসে এক বিরল অধ্যায়ের প্রতীক। যেখানে একজন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেষ পর্যন্ত সামরিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন। ১৯৬০ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর তাকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার, সংবিধান লঙ্ঘন ও দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। ইয়াসিয়াদা দ্বীপের বিশেষ আদালত দীর্ঘ বিচারের পর ১৯৬১ সালে মেন্ডেরেসকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেন।
পাকিস্তানের জুলফিকার আলী ভুট্টো
জুলফিকার আলী ভুট্টো ছিলেন পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং একই সঙ্গে সবচেয়ে বিতর্কিত সরকারপ্রধানদের একজন। ১৯৭১-৭৭ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করার পর সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউল হকের অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি। পরবর্তী সময়ে এক রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়ায় গুরুতর ত্র“টি এবং রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও আদালত ভুট্টোকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেন। ১৯৭৯ সালের ৪ এপ্রিল তাকে রাওয়ালপিন্ডি জেলে ফাঁসি দেওয়া হয়।
ইরানের আমির-আব্বাস হোবেইদা
১৯৭৯ সালের ৭ এপ্রিল ইসলামি বিপ্লবের পর ইরানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আমির-আব্বাস হোবেইদাকে গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির অধীন হোবেইদার সরকারকে বিপ্লবীদের ‘দমনকারী’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। তবে তার বিচার ছিল অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। সীমিত অধিকার ও অনিয়মের অভিযোগে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচিত হয় এটি।
এছাড়াও ফ্রান্সের রাজা ষোড়শ লুই, হাঙ্গেরির সমাজতান্ত্রিক নেতা ইমরে ন্যাগি, রোমানিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলাই চাউশেস্কু, জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিদেকি তাজিকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
তথ্যসূত্র: ডন, ইন্টারনেট।