
পদত্যাগ করে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। এখন যে কোনো সময় তিনি পদত্যাগ করতে পারেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের পদত্যাগের ঘোষণার পর থেকে আইনাঙ্গনে জোর আলোচনা চলছে। কে হচ্ছেন পরবর্তী অ্যাটর্নি জেনারেল? এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সরব আলোচনা শুরু হয়েছে। কয়েকজন আইনজীবীর নাম পরবর্তী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে আলোচিত হচ্ছে। এ তালিকায় রয়েছেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার সালাউদ্দিন দোলন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হোসেন লিপুর নাম।
আইনজীবীরা বলছেন, বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেলের পদটি একটি সাংবিধানিক ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ। এই পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনার পাশাপাশি জ্যেষ্ঠতা, আইনি মেধা ও অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। এটি দেশের আইনি কাঠামো ও সর্বোচ্চ আদালতের মর্যাদার জন্য অপরিহার্য। বর্তমান সংবিধানের ‘নির্বাহী বিভাগ’ (৪র্থ ভাগের ৫ম পরিচ্ছেদ) বিভাগের অনুচ্ছেদ ৬৪ অনুসারে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ওবাদুল্লাহ আল মামুন বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা হিসেবে সব ধরনের নিরপেক্ষতা নীতি অনুসরণ করে সরকারকে আইনি পরামর্শ দেওয়া, দলীয় ও রাজনৈতিক স্বার্থের বিপরীতে আইন ও জনস্বার্থ রক্ষা করার দায়িত্ব পালন করতে সাংবিধানিকভাবে বাধ্য। তাই সবদিক বিচার বিশ্লেষণ করেই অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগ দেওয়া উচিত।
তবে অনেকেই বলছেন, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান পদত্যাগের পর অন্তর্বর্তী সরকার অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলদের মধ্যে থেকে কোনো একজন ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পেতে পারেন। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফের নাম আলোচনায় রয়েছে।
পদত্যাগ করে নির্বাচনে অংশ নেবেন অ্যাটর্নি জেনারেল
পরবর্তী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে আলোচনায় থাকা আইনজীবীরা হলেন-
ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন : সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ মামুন। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রধান আইনজীবী। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের আমলে রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ড. ইউনূসের পক্ষে আইনি লড়াই করেছেন। পরবর্তী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে তার নাম আলোচনায় রয়েছে।
অ্যাডভোকেট সালাউদ্দিন দোলন : তিনি সুপ্রিম কোর্টের একজন পরিচিত ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। বিএনপিপন্থি হিসেবে পরিচিত। তার দীর্ঘ আইনি অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক আইন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তার দক্ষতা রয়েছে। পরবর্তী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে তার নাম জোর আলোচনা চলছে।
ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল : তিনিও বাংলাদেশের আইনি অঙ্গনে সুপরিচিত, অভিজ্ঞ, মেধাবী একজন আইনজীবী। বিএনপির প্যানেল থেকে তিনি সুপ্রিম কোর্ট বারের দুইবারের নির্বাচিত সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সাংবিধানিক বিভিন্ন আলোচিত মামলায় শুনানিতে তিনি দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। পরবর্তী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুসের নাম সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে।
অ্যাডভোকেট আরশাদুর রউফ : সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট আরশাদুর রউফ। তিনি বর্তমানে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অনেকেই বলছেন, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের পদত্যাগের পর অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আরশাদুর রউফকে ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল করা হতে পারে। আবার কেউ কেউ বলছেন, তাকে পূর্ণকালীন অ্যাটর্নি জেনারেলও করা হতে পারে।
ব্যারিস্টার অনীক আর হক : জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার অনীক আর হক বর্তমানে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনচলাকালীন সমন্বয়কদের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। পরবর্তী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে ব্যারিস্টার অনীক আর হকের নামও আলোচনায় রয়েছে।
অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হোসেন লিপু : সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হোসেন লিপু। তিনি বিসিবির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান ছিলেন। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অন্যতম প্রধান আইনজীবী হিসেবে পরিচিত। পরবর্তী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হোসেন লিপুর নামও শোনা যাচ্ছে।
গত ৫ নভেম্বর পদত্যাগ করে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানান অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি থেকে ঝিনাইদহ-১ আসন থেকে নির্বাচন করবেন তিনি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরানোর আপিল শুনানি শেষে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের কনফারেন্স কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, নমিনেশন চেয়েছি। আমি আশাবাদী নমিনেশন পাবো। আমি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে আছি এখনো। আমার অ্যাটর্নি জেনারেল পদ ছেড়ে দিয়ে আমি ভোট করবো। যখন সময় আসবে তখন (পদত্যাগ) করবো।
উল্লেখ্য, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ঝিনাইদহ–১ (শৈলকূপা) বিএনপির হয়ে নির্বাচন করবেন বলে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। এই আসনে বিএনপি এখনো কাউকে মনোনয়ন দেয়নি।
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। পরে ওই পদ থেকে পদত্যাগ করে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি।
সূত্র: ঢাকা পোস্ট