প্রথমবারের মতো ৩২ দল নিয়ে বসা ক্লাব বিশ্বকাপের খেলা ধীরে ধীরে জমে উঠেছে। ইউরোপের বড় বড় ক্লাবগুলোকে থমকে দিচ্ছে অন্য মহাদেশের ক্লাবগুলো। যা রীতিমত আরও আকর্ষণীয় করে তুলছে টুর্নামেন্টটিকে। তবে ক্লাব বিশ্বকাপের উত্তাপ এখন আর কেবল মাঠের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সীমাবদ্ধ নেই। সেই উত্তাপ এবার রীতিমতো তাপপ্রবাহের মতো গ্রাস করছে গ্যালারিতে থাকা সাধারণ মানুষকে। গরমের ছোবল যে কতটা ভয়ানক হতে পারে, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত এই টুর্নামেন্ট।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রীষ্ম মৌসুমের তীব্র দাবদাহ যে ক্লাব বিশ্বকাপের দলগুলোর জন্য বড় প্রতিপক্ষ তা আর অজানা নয়। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই দলগুলো সংগ্রাম করছে ম্যাচগুলোতে এই গরমের কারণে। প্রায় সব ম্যাচেই দেখা যাচ্ছে, গরমে খেলোয়াড় ও দর্শকদের হাঁসফাঁস করতে। আর খেলোয়াড়রাতো নিয়মিতই আবহাওয়ার তাপ নিয়ে অভিযোগ করে যাচ্ছে। ফিফার নিয়ম অনুসারে ৩২ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা থাকলে ম্যাচে 'কুলিং ব্রেক' দিতে হবে।
গতবার কোপা আমেরিকা আসরে এমনটা দেওয়া হয়েছিল। ক্লাব বিশ্বকাপেও মানা হচ্ছে সেই নিয়ম। তবুও গরমকে দমিয়ে রাখা যাচ্ছে না। মূলত টেলিভিশনে ইউরোপের দর্শকদের ধরে রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এই গরমে খেলাগুলোকে পরিচালনা করা হয়। সময়ের পার্থক্যের কারণে এ ম্যাচগুলো সন্ধ্যায় বাড়িফেরা ইউরোপিয়ান দর্শকদের কতটুকু আকর্ষণ করছে জানা যায়নি। তবে মাঠে গ্যালারির দর্শক একেবারেই টানতে পারছে না। তাই বেশির ভাগ ম্যাচেই স্টেডিয়ামের গ্যালারি শূণ্য থাকে। আর বড় ম্যাচগুলোতে দর্শক ভরলেও তার মধ্যে অনেকেই গরমে অসুস্থ হয়ে ম্যাচ শেষে শষে বাড়ি ফিরেন।
এ দিকে এই গরমের মধ্যেই আগামী কয়েক দিনে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলে শুরু হচ্ছে এক ভয়াবহ তাপপ্রবাহ। দেশটির আবহাওয়াবিদেরা জানিয়েছে, দুপুরের সূর্য থাকবে এমন উচ্চতায় যা স্বাভাবিক সহ্যসীমার বাইরে। অথচ গ্রুপপর্বে এখনো অনেকগুলো ম্যাচ বাকি, যার মধ্যে ছয়টি শুরু হবে দুপুর ১২টায়। এমন সময়, যখন গ্যালারির ছায়াও তপ্ত হয়ে ওঠে। সামনের বছরও এই সময়ই যুক্তরাষ্ট্রে মাঠে গড়াবে ফিফা বিশ্বকাপ। তার আগে এই টুর্নামেন্টটি ফিফার কাছে ছিল এসিড টেস্টের মতো যেখানে এখন পর্যন্ত সফল হতে পারেনি। না পারছে ভট গরম নিয়ন্ত্রণ করে খেলোয়াড় স্বস্তি দিতে না পারছে গ্যালারিতে দর্শক টানতে।
তবুও আয়োজকেরা বলছেন, টিকিট বিক্রি খারাপ হয়নি। এখন পর্যন্ত ২০টি ম্যাচে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টিকিট বিক্রি হয়েছে। গড়ে প্রতিটি ম্যাচে ছিলেন ৩৫ হাজারের বেশি দর্শক। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বেশির ভাগ স্টেডিয়ামের অর্ধেকেরও কম আসন পূর্ণ হয়েছে। অরল্যান্ডোর এক ম্যাচে গ্যালারিতে মাত্র ৩ হাজারের মতো দর্শক ছিলেন।
তবে দক্ষিণ আমেরিকান সমর্থকেরা দিয়েছেন প্রাণ। ব্রাজিলিয়ানরা নিউ জার্সিতে আর আর্জেন্টাইনরা মায়ামিতে গ্যালারি কাঁপিয়েছেন, শোনা গেছে ঢোল-তালির শব্দ। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় খালি গ্যালারি, বেহাল গেট ব্যবস্থাপনা আর দাউদাউ গরমের মধ্যে দিয়ে এই 'বিশ্ব' টুর্নামেন্ট আসলে কাদের জন্য? মাঠের ভিতরের উত্তেজনার আগে গ্যালারির বাইরে যে লড়াইটা চলছে, তা হয়তো হেডলাইন হচ্ছে না, কিন্তু সেই লড়াইয়ের তাপ যে বাস্তবেই পোড়াচ্ছে হাজারো মানুষকে, সেটা আর অস্বীকার করার উপায় নেই।