মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে  ঢাকা-কলকাতা নৌ ভ্রমণ 

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ১২:৩০

গঙ্গা ও পদ্মা বেয়ে নদীবক্ষে যে বিলাসবহুল নৌ-ভ্রমণ একসময় মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে ছিল, সেটাই এখন পকেটসই দামে সাধারণের আয়ত্তে আসতে চলেছে।
চলতি মাসের শেষেই ঢাকা থেকে সুন্দরবন হয়ে কলকাতা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক রুটে একটি ক্রুজ চালু হচ্ছে। মাত্র ২০ হাজার বাংলাদেশি টাকায় কোনও দম্পতি নদী-ভ্রমণের আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন।
 দু’দেশের সরকারই এই ক্রুজ পরিচালনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে সব ধরনের অনুমতি দিয়ে দিয়েছে। আগামী ২৯ নভেম্বর (বুধবার) ঢাকা থেকেই শুরু হচ্ছে এটির প্রথম যাত্রা।

নতুন জাপানি ইয়ানমার ইঞ্জিনে গতি বেড়েছে এম ভি রাজারহাট-সি লঞ্চের।
ভারতের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা সোমবার (৬ নভেম্বর) দিল্লিতে জানিয়েছেন, ওই সংস্থাটির নৌযান ভারতের জলসীমায় ঢোকার পর ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাদের সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করবে বলেও সমঝোতা হয়েছে।    
এই পর্যটক পরিষেবাটি দেবে বাংলাদেশভিত্তিক একটি কোম্পানির জাহাজ এমভি রাজারহাট-সি।
এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ভারতীয় কোম্পানি অন্তরা ক্রুজেসের জাহাজ এমভি গঙ্গা ভিলাস বেনারসের গঙ্গা থেকে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশের বুক চিরে ৫১ দিন পর আসামের ডিব্রুগড়ে গিয়ে যাত্রা শেষ করেছিল।
বাংলাদেশ-ভারত নৌপথে সেটাই ছিল প্রথম আন্তর্জাতিক রিভার ক্রুজ। যদিও সেই প্রমোদ তরির সব যাত্রীই ছিলেন জার্মানি, সুইজারল্যান্ড বা যুক্তরাষ্ট্রের মতো পশ্চিমা দেশের পর্যটক।
তবে এমভি গঙ্গা ভিলাসের খরচ অত্যন্ত বেশি। মাথাপিছু প্রতি রাতে সেখানে খরচ পড়ে ৬শ মার্কিন ডলারের মতো। কেউ ৫১ দিনের গোটা রুটটা কভার করতে চাইলে তাকে প্রায় ৩০ হাজার মার্কিন ডলার ব্যয় করতে হবে।
সেখানে তার ভগ্নাংশের খরচে এমভি রাজারহাট-সি’তে বাংলাদেশ ও ভারতের পর্যটকরা ওই একই রুট বা নৌপথের অনেকটা অংশ সফর করতে পারবেন।
এই যাত্রার অনেকটা অংশ যাবে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যের বুক চিরে
এই যাত্রার অনেকটা অংশ যাবে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যের বুক চিরে
এখনও অবধি এই নতুন পর্যটক ক্রুজ সার্ভিস নিয়ে যা জানা গেছে তা হলো—
ঢাকা থেকে প্রথম জাহাজ ছাড়ার সময় আগামী ২৯ নভেম্বর সকাল ১০টা। ছাড়ার স্থান: কার্নিভাল ক্রুজ ফেরিঘাট, হাসনাবাদ। জাহাজ গন্তব্যে পৌঁছাবে ১ ডিসেম্বর ২০২৩ সকাল ১০টা। জাহাজের জার্নি যেখানে শেষ হবে: পুলিশ জেটিঘাট, হাওড়া, কলকাতা।
কলকাতা থেকে আবার ঢাকার উদ্দেশে জাহাজ ছাড়বে ৪ ডিসেম্বর সকাল ১০টায়। ঢাকায় পৌঁছাবে ৬ ডিসেম্বর সকাল ১০টা (সম্ভাব্য)।
জাহাজে যাত্রীদের সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট, লাইফ বয়া, আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন নেভিগেশন ব্যবস্থা ও দক্ষ আনসার বাহিনী থাকবে বলে অপারেটর সংস্থাটি জানিয়েছে। এছাড়া জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনে সার্বক্ষণিক একজন এমবিবিএস চিকিৎসক ভ্রমণকালে জাহাজে অবস্থান করবেন।
তবে জাহাজের ভাড়ার সঙ্গে খাবারের খরচ ধরা থাকছে না। জাহাজে দুটি মানসম্মত ক্যান্টিন রয়েছে। সেখান থেকে পর্যটকরা নিজ খরচে পছন্দসই খাবার কিনে খেতে পারবেন।
এই রুটে ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশি পর্যটকদের যেসব কাগজপত্র থাকতে হবে, সেগুলো হচ্ছে—  ভারতীয় ভিসা সংবলিত পাসপোর্ট (ভিসার মেয়াদ কমপক্ষে ১৫ দিন, পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ৬ মাস) এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি।
এমভি গঙ্গাভিলাস, বিপুল খরচের জন্য যে প্রমোদ তরি বাংলাদেশি ও ভারতীয়দের নাগালের বাইরেই রয়ে গেছে। এই রিভার ক্রুজে ওয়ান ওয়ে (একদিকের) ভাড়ার তালিকা হবে নিম্নরূপ:
(ইন্ট্রোডাকটরি অফার হিসেবে সীমিত সময়ের জন্য মূল্যের ওপরে ৪০ শতাংশ ছাড়ও দেওয়া হচ্ছে, এই তালিকা সেই ছাড় ধরেই)।

সিঙ্গেল স্লিপার- ৬ হাজার টাকা (১ জন), ডাবল স্লিপার- ১০ হাজার টাকা (২ জন), সিঙ্গেল কেবিন ১২ হাজার টাকা (১ জন), ডাবল কেবিন- ২০ হাজার ৪০০ টাকা (২ জন), ফ্যামিলি কেবিন- ২৫ হাজার ২০০ টাকা (২ জন), ভিআইপি কেবিন- ৩০ হাজার টাকা (২ জন), প্রিমিয়াম ভিআইপি কেবিন- ৫০ হাজার ৪০০ টাকা (২ জন)।
এছাড়া পরিবারের সঙ্গে ভ্রমণ করলে ১০ বছরের কম বয়সী ২ জন সন্তানের টিকিট বিনা মূল্যে পাওয়া যাবে।
ভারত ও বাংলাদেশের পর্যটনপ্রিয় অসংখ্য সাধারণ মানুষের মধ্যে এই ‘ভ্যালু ফর মানি’ নৌ-ভ্রমণ পরিষেবা খুবই সাড়া ফেলবে বলে দুই দেশের পর্যটন মন্ত্রণালয়ই আশা করছে।