নেপালের হিমালয় রেঞ্জে পর্বতারোহীদের মধ্যে জনপ্রিয় ট্রেকগুলোর অন্যতম থার্পু চুলি তথা টেন্ট পিক। অন্নপূর্ণা পর্বতের কেন্দ্রে এটি অবস্থিত। থার্পু চুলির উচ্চতা ৫ হাজার ৬৬৩ মিটার (১৮ হাজার ৫০০ ফুটের বেশি)। এটি জয় করে এসেছেন বাংলাদেশের অ্যাডভেঞ্চার ট্যুর গ্রুপ অল্টিটিউড হান্টারের উদ্যোক্তা ফজলুর রহমান শামীম ও তৌফিক আহমেদ তমাল। গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে সক্ষম হন তারা।
ছয় হাজার মিটারের কম উচ্চতা হলেও থার্পু চুলির চূড়ায় ওঠা অত সহজ নয়। তাছাড়া এই ট্রেকের ভাঁজে ভাঁজে মিশে আছে অ্যাডভেঞ্চার। অবশ্য এর অসাধারণ সৌন্দর্য পর্বতারোহীদের দারুণভাবে আকর্ষণ করে।
ঢাকা থেকে গত ১২ ডিসেম্বর কাঠমান্ডুর থামেল গিয়ে রেশন ও সরঞ্জামাদি গুছিয়ে ১৪ ডিসেম্বর পোখরা যান শামীম ও তমাল। কাঠমান্ডু থেকে তাদের সঙ্গে যুক্ত হন অভিযানের দুই প্রধান সহযোগী (গাইড) ফুরসেম্বা শেরপা ও মিংমা শেরপা। কেটু, কাঞ্চনজঙ্ঘাসহ বেশ কয়েকবার এভারেস্ট আরোহণের অভিজ্ঞতা আছে দুই গাইডের।
পোখারা থেকে ১৫ ডিসেম্বর রওনা দিয়ে চার দিনের মধ্যে দলটি পৌঁছায় অন্নপূর্ণা বেসক্যাম্প। ২১ ডিসেম্বর শুরু হয় মূল অভিযান। সেদিন গ্লেসিয়ার পেরিয়ে থার্পু চুলি বেসক্যাম্প করতে সক্ষম হন তারা। পরদিন ২২ ডিসেম্বর হাইক্যাম্প-এর উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন সবাই। তবে অতিরিক্ত তুষারপাত হওয়ায় রুট বা রাস্তা তৈরি করতে সময় বেশি লাগে তাদের। তাই হাইক্যাম্পের নিচে মধ্যবর্তী আরেকটি ক্যাম্পে থাকতে বাধ্য হন বাংলাদেশি অভিযাত্রীরা। অবশেষে ২৩ ডিসেম্বর থার্পু চুলি পাহাড়ে হাইক্যাম্প স্থাপন করতে পারেন শেরপারা, সেখানকার উচ্চতা ছিল ৫ হাজার ১২৬ মিটার। হাইক্যাম্প থেকে রাত ২টায় শুরু হয় সামিট পুশ বা শিখরে ওঠার অভিযান।
ফজলুর রহমান শামীম ও তৌফিক আহমেদ তমাল
ফজলুর রহমান শামীম ও তৌফিক আহমেদ তমাল
শামীম ও তমাল জানান, পর্বতারোহণের মূল বিষয়গুলোর মুখোমুখি হওয়া যায় থার্পু চুলি অভিযানে। যেমন শুরুতেই পেরোতে হবে অন্নপূর্ণা গ্লেসিয়ার, তারপর পাথুরে বোল্ডার অতিক্রম করে রকফল জোনের মুখোমুখি হতে হয়। তারপর রিজলাইন (খাড়া পাহাড়ের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সরু রাস্তা) ধরে থার্পু চুলির চূড়ায় আরোহণ করতে পেরেছেন তারা। কিন্তু শীতকালে এসব ব্যাপার বেশ অসাধ্য। লাগাতার বরফঝড় ও প্রচণ্ড ঠান্ডায় রুট ওপেন থেকে শুরু করে সামিটে পৌঁছাতে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ থাকে সামনে।
সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সফলভাবে থার্পু চুলি অভিযান করতে সক্ষম হন বাংলাদেশি যুবকরা। গত ২৪ ডিসেম্বর বেলা ১২টা ২০ মিনিটে বেশ ঝুকিপূর্ণ শীতকালীন থার্পু চুলি সামিট করেন তৌফিক আহামেদ তমাল। ঝুঁকি দেখা দেয়াল অল্পকিছু উচ্চতা বাকি রেখে সামিট টিমের সঙ্গে নেমে পড়েন ফজলুর রহমান শামীম।
অভিযান নিয়ে অভিযাত্রী তৌফিক আহমেদ তমাল বলেন, ‘পাহাড়ের কাছে যে মানুষের সত্ত্বাগুলো যে কতো ক্ষীণ তা এখানে উঠলেই বোঝা যায়। পাহাড় জয়ের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এক একটা অর্জন, আরও অর্জনের ক্ষুধা বাড়িয়ে দেয়।’
অল্টিটিউড হান্টারের টিম লিডার ফজলুর রহমান শামীম বলেন, ‘এই অভিযানে দল হিসেবে আমরা সফল হয়েছি। আর সবচেয়ে বড় সফলতা হলো সবাই সুস্থ ভাবে ফিরে আসা। কারণ সম্প্রতি নেপালের বিভিন্ন অভিযানে খারাপ আবহাওয়ায় কয়েকটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমরাও একটু ভয়ঙ্কর অবস্থায় পড়েছিলাম। ছোট্ট ভুল করলে আমরা ফিরে আসতে পারতাম না।শেরপাদের সহায়তায় আমরা বিপদ থেকে বেঁচে গেছি। এই অভিযান আগামীর পথচলায় শ্রেষ্ঠ পাথেয় হয়ে থাকবে।’